রেশমার বেঁচে থাকাটাই কি অপরাধ?
লিখেছেন লিখেছেন সহিদুল ইসলাম ১৯ মে, ২০১৩, ১২:৫৭:৪৮ দুপুর
রেশমাকে নিয়ে না লিখে আর পারলাম না। সাভার ট্রাজেডিতে শাহিনাকে হারিয়ে বাংলাদেশের কে না কেঁদেছে? যে সেনাবাহিনীর মন পাথরে গড়া, সেই পাথরের চোখ থেকেই যখন পানি ঝরেছে, তখন কে আর কাঁদতে বাকি থাকতে পারে। শাহিনাকে হারিয়ে শুধু বাংলাদেশ কাদেনি, কেঁদেছে বিশ্ব। যখন সারা বিশ্ব শাহিনার জন্য কেঁদেছে, সেই ধ্বংসযজ্ঞে যখন আমাদের সেনাবাহিনী রেশমাকে উদ্ধার করে তখন আমাদের বুকের কষ্টটা অনেকটাই কমেছে।
রেশমাকে উদ্ধার করাকে আমরা কিছু লোক সহজ ভাবে নিতে পারিনি। তারা নাকি উদ্ধারের সময় রেশমাকে ফ্রেশ দেখেছে, তারা প্রশ্ন করেন কি করে রেশমা ফ্রেস কাপড়ে বের হয়ে আসলেন।
অসুস্থ রেশমা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। রেশমা নিজে, দুঃসহ ১৭ দিনের অভিজ্ঞতার দিয়েছেন। এ সময় তার পাশে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব আল্লাহর ইচ্ছা। আমি কখনো কল্পনাও করিনি বেরোতে পারব। সব সময় আল্লাহরে ডাকছি। সবই আল্লাহর ইচ্ছা। তা না হলে বেঁচে থাকতে পারতাম না।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে রেশমা বলেন, ‘বিল্ডিং ভেঙে পড়ার সময় আমি মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পাই। এরপর আমার কিছুই মনে নেই। জ্ঞান ফেরার পর আমি হামাগুড়ি দিয়ে স্থান বদল করতাম। আমার জামা-কাপড় সব ছিঁড়ে গিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘উদ্ধারের দিন আমি একটু আলো দেখতে পাই। সেই আলো দেখে চিৎকার করি, আমি বাঁচতে চাই, আমাকে বাঁচান। উদ্ধারকারীরা আমাকে একটি টর্চ দেন। সেটা দিয়ে আমি একটি জামা বের করি। সেটা পরে নেই। সেখানে মার্কেট ছিল।’
যারা রেশমার নিকট এসব প্রশ্ন করেন তাদের কাছে আমার বিনীত কিছু প্রশ্নঃ
- রেশমার চুল খাবলা খাবলা ছিল, মুখ ফোলা ফোলা ছিল কি করে আপনারা তাকে ফ্রেশ আবিস্কার করলেন?
- রেশমাকে উদ্ধারের সময় সেনাবিহিনীর প্রস্তুতি ছিল, তাই তাকে একটি পরিষ্কার কাপড়ে বের করে আনা কি অপ্রাসঙ্গিক?
- রেশমাকে অপরিস্কার কাপড়, অথবা নগ্ন/অর্ধ-নগ্ন বের করে আনলেই কি আপনাদের বিশ্বাস হত?
- খাবার কুঁড়িয়ে পাওয়া এবং খওয়া কি এক্কেবারে অসম্ভব ব্যপার?
- রেশমার সাথে আরও অনেকে চাকরি করত, যদি এটা মিথ্যা হত তাদের একজন না একজন এই ব্যপারে মিডিয়ায় কিছু বলত।
রেশমা যে বারিতে ভাড়া থাকতেন সেই বাসার মালিক, মনছুর আহমেদ নুরু বলেনঃ
প্রায় আড়াই বছর আগে থেকে রেশমা আমার বাসা, সাভার বাজার রোডের বি-১৩৮ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। নুরু বলেন বলেন, আমার বাসাতেই রেশমা ভাড়া থাকতেন। তার স্বামী আবদুর রাজ্জাক ওরফে সবুজ ছিলেন বিকৃতমনের। চাকরির টাকার জন্য মাঝেমধ্যেই মারধর করতেন। একপর্যায়ে প্রায় বছরখানেক আগে রেশমাকে ছেড়ে স্বামী চলে যান। যাওয়ার আগে ঘরের আসবাবপত্র বিক্রি করে দেন। এরপর থেকেই আমার স্ত্রী হাজেরা বেগম তাকে দেখাশোনা করতেন। মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছিলেন। এমনকি ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হওয়ার পর রেশমা প্রথম ফোন করেছিলেন আমার স্ত্রীকে। তাকেই প্রথম দেখতে চেয়েছিলেন। হাজেরা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, এতদিন মেয়েকে আগলে রেখেছি। নিখোঁজ হওয়ার পর নিজে নিজেই বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেছি। তখনও পরিবারের কেউ আসেনি।
পরিশেষে আমি বলব, শাহিনাকে হারিয়ে যখন সারা বিশ্ব শাহিনার জন্য কেঁদেছে, সেই ধ্বংসযজ্ঞে যখন আমাদের সেনাবাহিনী রেশমাকে উদ্ধার করে তখন আমাদের বুকের কষ্টটা অনেকটাই কমেছে। এটাকে কেউ কোন প্রশ্নবাণে জর্জরিত করবেনা, এটাকে নিয়ে যারা এত প্রশ্ন করছেন তাদের কে শুধু একটি কথাই বলব___ রেশমার বেঁচে থাকাটাই কি অপরাধ?
মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম
বিষয়: বিবিধ
২১৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন