পবিত্র জিকির শব্দের অপব্যবহার এবং আমার তীব্র প্রতিবাদ:

লিখেছেন লিখেছেন সহিদুল ইসলাম ০৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০৬:৪৭:৩১ সন্ধ্যা

পবিত্র জিকির শব্দের অপব্যবহার এবং আমার তীব্র প্রতিবাদ:

কথায় কথায় হরতাল শিরনামে দৈনিক আমারদেশ এর আজকের ( ০৮/০৪/২০১৩) পত্রিকায় জনাব বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকী বীর উত্তম সাহেব পবিত্র জিকির শব্দের অপব্যবহার করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন জিকির উঠেছিল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই। নিন্মে মারদেশ এর কলামটির আংশিক তুলে ধরছিঃ

শাহবাগের গণমঞ্চ একসময় মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছিল। দু’দিন আগে যারা রাজাকারের ফাঁসি চাই দাবিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করেছিল তাদের কিছু মানুষের পাপের ভারে তারাই তছনছ হয়ে গেছে। কিছু দুষ্ট ব্লগারদের কারণে একটা মহত্ প্রচেষ্টা আঁতুড় ঘরেই মৃত্যুবরণ করতে বসেছে। জিকির উঠেছিল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই। সবাই জানে পৃথিবীতে কখনও সব অপরাধীর ফাঁসি হয় না। সব অভিযুক্তের দণ্ডও হয় না। কিন্তু শাহবাগের ফাঁসি চাই; সেটাও ছিল একটা অযৌক্তিক উদ্ভট আবেগ।

তথ্যঃ http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/04/08/195616#.UWK0ykqdrkZ

আসুন আমরা আগে জিকির সম্পর্কে জেনে নেই____

আভিধানিক অর্থঃ স্বরণ করা, মনে করা, উল্লেখ করা, বর্ণনা করা। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন স্বরণ করা, মনে করা, উল্লেখ করা, বর্ণনা করা অবশ্যই এক আল্লাহর উদ্দেশ্যে। কারণ আমরা যদি কাউকে স্বরণ করি বা মনে করি তাহলে কিন্তু কখনো বলিনা যে অমুকের জিকির কিরছি।

পারিভাষিক অর্থঃ শরীয়তের আলোকে জিকির বলা হয়, মুখে বা অন্তরে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা এবং প্রশংসা করা, পবিত্র কুরআন পাঠ করা, আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা, তার আদেশ-নিষেধ পালন করা, তার প্রদত্ত নেয়ামত ও সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা।

জিকিরের প্রকারভেদঃ

বিভিন্ন ভাবে জিকির করা হয়ে থাকে জেমনঃ জিকির অন্তর দ্বারা হতে পারে, জিহ্বা দ্বারা হতে পারে, বা এক সঙ্গে উভয়টা দ্বারাও হতে পারে। এর বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, নিচে কিছু উল্লেখ করা হলঃ

১। কুরআনে করিম পাঠ করা ।

২। মৌখিক জিকিরঃ যেমন তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর ইত্যাদি পড়া, যা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।

৩। প্রার্থনাঃ এটা বিশেষ জিকির, কেননা এ-দ্বারা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ হয়, ইহকাল ও পরকালের প্রয়োজন পূরণ হয়।

৪। অন্তর দিয়ে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করা। এটা অন্যতম বড় জিকির।

৫। রকমারি ইবাদতের অনুশীলন করাঃ যেমন সালাত কায়েম, জাকাত প্রদান, পিতা-মাতার সাথে অমায়িক আচরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা, জ্ঞানার্জন ও অপরকে শিক্ষাদান-ইত্যাদি। কেননা, সৎকর্মের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহকে স্মরণ করা।

ইসলামী জ্ঞানীদের ভাশায়ঃ

ইমাম নববী রহ. বলেন___জিকির কেবল তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আনুগত্যের সাথে প্রত্যেক আমলকারীই জিকিরকারী হিসেবে বিবেচিত।

আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম (রহ.)___ জিকিরের ১০০টি উপকারের কথা উল্লেখ করেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো_’শয়তানকে দূর করে তার শক্তি বিনষ্ট করে দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সাহায্য করে, দেহমনে প্রশান্তি আনয়ন করে এবং সবচেয়ে বড় চিন্তা রিজিকের অভাব দূর করে ইমানি মৃত্যু নসিব করে।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন-

০১। অর্থাৎ হে মুমিনরা! তোমরা অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির কর। সূরা আহযাব-৪১

০২। অর্থাৎ যখন তোমরা নামায তোমরা নামায আদায় করবে, তখন আল্লাহর জিকির কর দাঁড়িয়ে বসে এবং কাত হয়ে। সূরা নিসা-১০৩

০৩। তোমরা প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশংকচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করবে এবং তুমি উদাসীন হবে না। সূরা আরাফ - ২০৫

০৪। মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। এবং সকাল বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর। সূরা আহযাব -৪১,৪২

০৫। অর্থাৎ নিশ্চয় আসমান জমিন সৃজনে আর রাত-দিনের পরিবর্তনে নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য, যারা আল্লাহর জিকির করে দাঁড়িয়ে বসে এবং শুয়ে। সুরা আলে ইমরান-(১৯০-১৯১)

উল্লেখিত আয়াতে কারীমা দ্বারা একথা সুষ্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, জিকির শুধু মাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে।

সুতরাং আমি বলতে চাই জিকির এই পবিত্র শব্দটি মহান পবিত্র এক আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যেই করে থাকি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, কাদের সিদ্দীকী সাহেব উপরে উল্লেখিত স্থানে ব্যবহার করে চরম অন্যায় করেছেন। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ করছি এবং এহেন অন্যায় কর্মের জন্য কাদের সিদ্দীকী সাহেবকে এবং আমারদেশ পত্রিকায় প্রকাশের জন্য মাহমুদুর রহমানকে জাতির নিকট ক্ষমা চাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।

মোহাম্মাদ সহিদুল ইসলাম



বিষয়: বিবিধ

১১৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File