শাহবাগ থেকে জামায়াতকে যে শিক্ষাটি নিতেই হবে

লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ২৭ মার্চ, ২০১৩, ০১:৩৬:৪৪ দুপুর

অতিউতসাহী বামদের শুরু করা , আওয়ামী লীগ ও ভারত সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় গড়ে ওঠা শাহবাগের তথাকথিত ‘ফাসি’ মঞ্চ আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থ হলেও ইতিহাসে তারও একটা অবস্থান থাকবে । সন্দেহ নেই, সেটা নিশ্চয়ই নেতিবাচক হিসেবেই চিহ্নিত হবে । ব্যর্থতার কারণে হোক, ফ্যাসিবাদের সহযোগিতার কারণে হোক কিংবা আওয়ামী লীগের পতনের কারণ হিসেবেই হোক ।

বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসও এই ঘটনাকে অস্বীকার করতে পারবে না । কিন্তু ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নিবে কিনা সেটা যথেষ্ট সন্দেহের ব্যাপার । অন্য কেউ শিক্ষা নিক আর না নিক , ইসলামী আন্দোলনকে নিতেই হবে । ইসলামী আন্দোলনকে তার লক্ষ্যে পৌছাতেই হবে ।

অনেকগুলো শিক্ষার মধ্যে আজ আমি যেটা উল্লেখ করতে চাই, সেটা হচ্ছে- ‘জামায়াতে ইসলামী’ নাম নিয়ে এই বাংলাদেশে ইসলামী সমাজ কায়েমের স্বপ্নটা এক প্রকার বালখিল্যতা ছাড়া আর কিছু নয়’ ।

মুক্তিযুদ্ধে জামায়াত কেন বিরোধিতা করেছে তার হয়তো গ্রহণযোগ্য, যুক্তিযুক্ত কারণ থাকতে পারে । যদিও মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের বিরোধিতা জামায়াতের মজলিশে শুরার সিদ্ধান্তের খেলাপ করে কিছু নেতার আপোষকামিতা এবং সাময়িক লাভালাভের অদূরদর্শী রাজনৈতিক চিন্তার ফল বলে আমাদের হাতে তথ্য আছে । কিন্তু তারচেয়েও বড় কথা , মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের অবস্থান কী ছিল এবং কেন ছিল- সে বিষয়টি জাতির সামনে পরিষ্কার করে তুলে ধরতে জামায়াত সাংগঠনিকভাবে সম্পুর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে । আর এই সুযোগে ইসলামবিরোধী গোষ্ঠি এই ইস্যুকে পুজি করে বহু ইসলামপ্রিয় মানুষকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয়েছে ।

পত্রপত্রিকায়, রেডিও-টেলিভেশনে, বক্তব্য-বিবৃতিতে, গল্প-কবিতা-উপন্যাস, নাটক-সিনেমায় এমনকি পাঠ্যপুস্তকে পর্যন্ত জামায়াতের নাম তুলে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে ।এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে যেন ত্রিশ লাখ মানুষ হত্যা এবং দুই লাখ নারী ধর্ষণ করেছে জামায়াতের গুটিকয় লোকই ! এর ফলে একজন মানুষ ছোটবেলা থেকে জামায়াতকে একটা ভিনদেশি দানব হিসেবে জেনে আসছে । লালন করছে তীব্র ঘৃণা ।

এর একটা সুবিধা আছে যে , এইসব অতিরঞ্জিত অপপ্রচারের ভেতরে বেড়ে ওঠা একজন মানুষ যখন আসল সত্যিটা জানতে পারে তখন সে খুব সহজেই ইসলাম এবং বাতিলদের মতাদর্শের পার্থক্যটা বুঝতে পারে । ইসলামী আন্দোলনে দাখিল হয় । কিন্তু এই সীমাহীন প্রচারের ভেতর গড়ে ওঠার কারণে অসংখ্য মানুষ যে এর আশেপাশেও আসছে না, দাওয়াতের আওতার ভেতরেও আসছে না তার হিসাব কি করতে হবে না ?

জামায়াতের কেউ কাউকে দাওয়াত দিতে গেলে কী ঘটে ? প্রথমে ক্লিয়ার করতে হয় জামায়াতের একাত্তরের ভূমিকা । এরপর ইসলামের কথা । ইসলামী আন্দোলনের কথা । ছাত্রশিবিরের জন্ম স্বাধীনতার অনেক পরে হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দাওয়াতী কাজ শুরু করতে বাধ্য হতে হয় জামায়াতের সাথে শিবিরের সম্পর্ক কী এবং মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেয়ার মাধ্যমে । এর ফলে দাওয়াতি কাজ কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে , হচ্ছে এবং হবে তার কোন অনুমানও কি করা সম্ভব ?

বাকশাল নিপাতের পর ১৯৭৯ সালে যখন ধর্মীয় রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করা হলো তখন জামায়াত নিজ নামে কার্যক্রম শুরু করলো । কেন ? নেতৃবৃন্দ হয়তো ভেবেছিলেন, ৭১ ইস্যুর সমাধান হয়ে গেছে । এটা নিয়ে আর কখনো ভুগতে হবে না ! কিন্তু ৯২ তে ঘাদানিকের কারণে ৭১ ইস্যুতে জামায়াতকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হলো । আবার ২০০১ এর পর কেউ কেউ ভেবেছিল – সময় অনেক গড়িয়েছে । আর হয়তো ৭১ ইস্যু ভোগাবে না । এলো ২০০৯ । একই ইস্যুতে বড় ধরণের ভোগান্তিতে পড়তে হলো জামায়াতকে , যা এখনো শেষ হয়নি । কিভাবে শেষ হবে এখনো কেউ জানে না । ইনশাআল্লাহ ভালোভাবেই শেষ হবে আশা করি ।

আমার আশংকা, এবারো হয়তো জামায়াত নেতৃবৃন্দ ভাববেন- ৭১ ইস্যু খতম । আর কখনো এই ইস্যু দিয়ে আটকানো যাবে না । কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি সেটা হবে চরম ভুল ধারণা । সত্য হলো- যতদিন বাংলাদেশের এই ভূখণ্ড থাকবে, ততদিন ৭১ এর যুদ্ধের ইতিহাস থাকবে । অস্বীকার করার কিংবা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই, বরং এমন কিছু করা হবে নিজের পায়ে কুড়াল মারার নামান্তর ।

আর প্রহসনমূলক হলেও এবারের বিচারে আদালতের মাধ্যমে রায় দিয়ে জামায়াতের গায়ে চূড়ান্তভাবে কলংকের ছাপ লাগিয়ে দেয়া হয়েছে । এরপরেও যদি একগুয়েমি করা হয় তাহলে সেটাই হবে সবচেয়ে দুঃখজনক ।

জামায়াতকে যথাস্থানে রেখে একই ধাচের একটি ইসলামী সংগঠন গড়ে তুলে তার মাধ্যমে কাজ করা এখন সময়ের দাবি । এবং আমি বিশ্বাস করি, সেটাই হবে এই দেশে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের বিরোধীদের জন্য চরম প্রতিশোধ ।

বিষয়: রাজনীতি

১৪০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File