মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে আমাদের করণীয়

লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ১৭ মার্চ, ২০১৩, ০৬:১১:০৬ সন্ধ্যা

ড. আহমদ তোতুনজি ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট । বেশ কয়েকবার তিনি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। এসময় ড. আহমদ তোতুনজি বিভিন্ন উন্মুক্ত আলোচনা সভায় যা বলেছিলেন তার ভিত্তিতে একটি নিবন্ধ লেখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক শাহ আব্দুল হালিম । সেই নিবন্ধ থেকে গুরুত্ববহ পয়েন্টগুলি তুলে আনা হয়েছে এখানে ।

গবেষণা , সৃজনশীলতা ও পেশাগত ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন

মুসলমানরা কেন পিছিয়ে আছে এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ড. আহমদ তোতুনজি বলেন, আমরা গবেষণা ও উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্বারোপ করছি না। এ কারণে আমরা নিজেদের অধিকার রক্ষায় যথাযথ কৌশল নির্মাণে সক্ষম নই এবং অন্যদের মাধ্যমে ব্যবহৃত হচ্ছি।’ তিনি নতুন প্রজন্মকে সৃজনশীলতা ও কর্মে নৈপুণ্য অর্জন এবং কাজ যথাযথভাবে সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজনে অতিরিক্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। পেশাগত ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন ও সর্বোত্তম উৎকর্ষ সাধনেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ছায়া মন্ত্রিসভা ও থিংক ট্যাংক গঠন

মূলধারার ইসলামি আন্দোলনকে ছায়া মন্ত্রিসভা ও থিংক ট্যাংক গঠন করতে হবে । এক একটি থিংক ট্যাংক এক একজন মন্ত্রী পরিচালনা করবেন। ‘এর ফলে তিন-চার বছর সময়ের মধ্যে প্রতিটি ক্ষেত্রে অনেক গবেষণা করা যাবে , যা আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যার যথাযথ সমাধান নির্ণয়ে সহায়তা করবে। আমাদের এ দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত করবে। তবেই আমরা পাশ্চাত্যের বুদ্ধিবৃত্তিক চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় ইতিবাচক ও কার্যকর প্রতিউত্তর দিতে সক্ষম হব ।’

‘আমরা সবসময় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করি, কিন্তু পরিকল্পনা করি না। ভালো কাজ সবসময় গ্রহণযোগ্য হবে, যদি তা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়। যদি আমরা এক পা এগোই তবে আল্লাহর সাহায্য অবশ্যম্ভাবী।’

নতুন ও বিকল্প নেতৃত্ব সৃষ্টি

আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন ও বিকল্প নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে দায়িত্ব অর্পণ করা প্রয়োজন । ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এ বিশ্বে আমরা সফলতা অর্জন করতে পারবো না, যদি আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে সক্ষম না হই ।’ কর্মপন্থা ও কর্মসূচি প্রণয়নে তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ পেশাজীবীদের সাহায্য নেয়া দরকার ।

‘নবপ্রজন্মকে অবশ্যই সাম্প্রতিক ইসলামি সাহিত্য পাঠ করতে হবে। এটা যথেষ্ট নয় যে, আমরা শুধু সাইয়েদ কুতুব ও মওদূদীর বই অধ্যয়ন করবো । তারা তাদের সময়ের বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, পণ্ডিত ও কুশলী। এসব ট্রাডিশনাল বইপুস্তক পড়ার সাথে সাথে আমাদের সমকালীন ইসলামি সাহিত্য অবশ্যই পাঠ করতে হবে, যদি আমরা সত্যই চাই পাশ্চাত্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে।’ আরবি ভাষা শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে , যাতে প্রতিটি মুসলমান কুরআন পাঠের সময় এর অর্থ সরাসরি বুঝতে সক্ষম হয়।

স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে ইসলামি সংস্কৃতির পার্থক্য নির্ণয় ও পদক্ষেপ গ্রহণ

কোনো কোনো ইসলামি আন্দোলন স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে ইসলামি সংস্কৃতির পার্থক্য নির্ণয়ে ব্যর্থ। মুসলমানদের পিছিয়ে থাকার এটি একটি কারণ। মহিলাদের মুখ আবৃত করা (নেকাব পরা) একটি স্থানীয় সংস্কৃতি। এর সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। কিছু লোক মহিলাদের মুখ আবৃত করাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। যারা এটা করতে চান, তা তাদের জন্য একটি অধিকার। কিন্তু এটা ইসলামের একমাত্র পদ্ধতি নয়। এসব লোক বিশ্বাস করেন না, মহিলাদের রয়েছে পৃথক সত্তা। ‘কিছু সংগঠন ইসলামের অগ্রযাত্রা নয়, বরং তাতে বাধা সৃষ্টির জন্য কাজ করছে। কোনো কোনো সময় আমরা মহিলাদের নিগৃহীত করি এবং তাদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দিই। এটা ইসলামসম্মত নয়।’

অসহিষ্ণুতা ও মতানৈক্য পরিহার

‘মুসলিম উম্মাহর পিছিয়ে থাকার অন্য একটি কারণ হচ্ছে অসহিষ্ণুতা। যেসব বিষয়ে একমত পোষণ করি, সেগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে আমরা যেসব বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করি, তাকে গুরুত্ব দেই। আমরা প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে একমত পোষণ করি। আর দ্বিমত পোষণ করি শুধু ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে। তা সত্ত্বেও আমরা আমাদের মতানৈক্যকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। মতানৈক্যকে আমাদের অবশ্যই পরিহার করতে হবে। একমাত্র ব্যাখ্যা বলে কিছু নেই। অনেক মত, পথ ও ব্যাখ্যা বিরাজমান। ইসলামি আন্দোলনকে মতপার্থক্য মেনে নিতে প্রস্তুত হতে হবে। অন্যথায় অগ্রযাত্রার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

দাওয়াত ও রাজনীতি একাকার না করে ফেলা

ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের ‘দাওয়াত ও রাজনীতি একাকার করে ফেলা ঠিক হবে না । ‘রাজনীতি হচ্ছে সম্ভাব্য অর্জনের নীতি এবং পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপট ও অবস্থার কারণে কৌশল পরিবর্তন ও সমন্বিত করতে হতে পারে।’ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের সংখ্যালঘুদের উপেক্ষা না করা উচিত । কেননা ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং ধর্মে জোর-জবরদস্তি নেই।’

বিষয়: বিবিধ

৮৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File