১৫ ই আগস্ট: ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি

লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ১৫ আগস্ট, ২০১৪, ০৬:৪৩:১৩ সন্ধ্যা

পচাত্তরের ১৫ই আগস্টের ঘটনায় আমি আনন্দিত বা দুঃখিত কোনটাই নই । দুঃখজনক ঐ ঘটনা ছিল ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি । প্রকৃতপক্ষে ঐ ঘটনার প্রেক্ষাপট ও পথ তৈরি করেছিলেন শেখ মুজিব নিজেই । ঐ ঘটনা থেকে দু’টি বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে । একটা হচ্ছে, কেউ চিরদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনা । যদি স্বাভাবিক পন্থায় ক্ষমতা পরিবর্তনের সুযোগ না রাখা হয়, তাহলে অস্বাভাবিক পন্থায় বিদায় নিতে হয় । এমনিতেই দুঃশাসন, দুর্ভিক্ষ আর লাগামহীন সন্ত্রাসে দেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছিল । ’৭৫ নাগাদ শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা নেমে এসেছিল শূন্যের কোঠায় । জাসদের ভুল রাজনীতি পরিস্থিতিকে করে তুলেছিল জটিল । এই অবস্থায় সরকারী পত্রিকা ছাড়া দেশের সকল পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দেয়া , আর গনতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন পচাত্তরকে অনিবার্য করে তুলেছিল ।

এই কথাটিই বলেছিলেন বঙ্গবন্ধুর একসময়ের একান্ত সহযোগী , যুদ্ধকালীন সময়ের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ । সম্প্রতি প্রকাশিত, তাঁর মেয়ে শারমিন আহমদের লেখা বই ‘তাজউদ্দিন আহমদঃ নেতা ও পিতা’য় দেখা যায়- তাজউদ্দিন বাকশাল গঠনের বিরোধিতা করে শেখ মুজিবকে বলেন-

‘আজকে আপনি একটি কলমের খোঁচায় গনতন্ত্রকে শেষ করে দিয়ে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা করতে যাচ্ছেন... বাই টেকিং দিস স্টেপ ইউ আর ক্লোজিং অল দ্য ডোরস টু রিমুভ ইউ পিসফুলি ফ্রম ইওর পজিশন । ( পৃ- ১৯২)

এবং বাস্তবেও সেটাই ঘটেছিল ।

দ্বিতীয় বিষয়টি হলো- আত্মবিশ্বাস থাকা ভালো , কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস কখনো ভালো নয় । আমার দেশের কেউ আমাকে মারতে আসবে না , এমন একটা বিশ্বাস ছিল শেখ মুজিবের । সে কারণেই, তাঁকে সতর্ক করা হলেও তিনি সেসব খবরে কান দেননি ।

হুমায়ূন আহমেদ তাঁর ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস ‘দেয়াল’ এ লিখেছেন, পানবিক্রেতার ছদ্মবেশে ইন্ডিয়ান গোয়েন্দা সংস্থা RAW এর পরিচালক কাও ধানমন্ডির বাসায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে আগেভাগেই সেই সংবাদ পৌঁছে দেন । কিন্তু তিনি কোনভাবেই সেকথা বিশ্বাস করেননি ।

কীভাবে সেই তথ্য ‘র’ পেয়েছিল সেটার উল্লেখ আছে অশোক রাইনা’র লেখা ‘Inside RAW’ বইয়ে । মেজর ফারুক, মেজর রশিদদের একটা গোপন বৈঠকে কোন একজন মনের অজান্তে হাতের কাগজে কিছু লিখে ফেলেছিলেন । সেই কাগজটা অসতর্ক অবস্থায় ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেয়া হয় । তারপর সেটা পৌঁছে যায় ‘র’ এর কাছে ।

বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিলেন তাজউদ্দীনও ।

‘জুলাই মাসের শেষে আব্বুর কাছে খবর এল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে কেউ কেউ মুজিব কাকুকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে । তারা যেকোন সময় মুজিব কাকু ও তাঁর সরকারের ওপর আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত । এই খবর পেয়ে একদিন রাত এগারোটায় গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরেই আব্বু হেঁটে সোজা চলে যান মুজিব কাকুর বাসায় । মুজিব কাকু তখন শোবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন । আব্বু মুজিব কাকুকে ষড়যন্ত্রের খবর জানিয়ে বলেন তিনি যেন অবিলম্বে সেনাবাহিনী বিশেষ করে তাঁর গোয়েন্দা বাহিনীর ওপর নজর দেন । তিনি যেন এই খবরকে কোনভাবেই হাল্কাভাবে না নেন । কিন্তু মুজিবকাকু আব্বুর এই সতর্কবানীকে কোন আমল দিলেন না’ । [তাজউদ্দিন আহমদঃ নেতা ও পিতা – শারমিন আহমদ, পৃ- ২১১]

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা নাকি এটাই যে, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষাগ্রহণ করেনা । দেশের বর্তমান অবস্থা যেন সেটারই প্রমাণ বহন করে । দেশে আবারও একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ । ইতিহাস নাকি পুনরাবৃত্তি ঘটাতে ভালোবাসে । কিন্তু আমরা কোন খারাপ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি চাইনা ।

শুধু শোক প্রকাশ নয়, ১৫ই আগস্টের ঐতিহাসিক ঘটনায় থেকে সবাই- বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখা হাসিনা শিক্ষাগ্রহণ করুন, এটাই আমাদের আজকের প্রত্যাশা ।

বিষয়: বিবিধ

১৫৪২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

254633
১৫ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪১
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : সহমত
254647
১৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:১৭
শেখের পোলা লিখেছেন : শেখ সাদী বলেছেন। "নেকুঁয়ে না গিরাদ হরকে বুনিয়াদাস বদাস্ত,"৷ যার গোড়ায় গলদ সে সৎ পরামর্শ গ্রহণ করেনা৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File