জায়নবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবার অংশ নেয়া উচিৎ
লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ৩১ জুলাই, ২০১৪, ০৯:০৮:৪৮ সকাল
জাতি হিসেবে ইহুদীরা অভিশপ্ত । তারা বেশিরভাগ সময় সত্যকে অস্বীকার করেছে, অনেক নবী রাসুলকে হত্যা করেছে । কিন্তু জায়নবাদ আর ইহুদীবাদ এক নয় । জায়নবাদের সাথে যদিও ইহুদী ধর্মের একটা সম্পর্ক আছে তবুও সব ইহুদীই জায়নবাদী নয় । ইজরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্রটি গঠিত হয়েছে ( আমরা এটাকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেইনা, দিতেও পারিনা - অবৈধ দখলদার বলি) জায়নবাদী দৃষ্টিভঙ্গী এবং আমেরিকা-ব্রিটেনের তেলের চাহিদা পূরণের প্রয়োজনে, মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল রেখে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য ।
জায়নবাদ উগ্র , সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদেরই আরেকটি রূপ । জায়নবাদী ইহুদিরা বিশ্বাস করে যে , আল্লাহর সাথে ইহুদিদের চুক্তি আছে - জেরুজালেম এবং ফিলিস্তিন ভূখণ্ড একমাত্র ইহুদিদের প্রাপ্য। এর অধিকার একমাত্র ইহুদীদেরই । আর এই অধিকার বজায় রাখার প্রয়োজনে কোনরকম নীতি নৈতিকতার প্রশ্ন তারা স্বীকার করে না । যেকোন উপায়ে- তা যতই অনৈতিক হোক , যতই নির্মম নৃশংস হোকনা কেন - জেরুজালেম এবং ফিলিস্তিন তাদের নিজেদের দখলে রাখতে হবে ।
এজন্যই তারা এর প্রয়োজনে নিজেদের মেয়েদেরকে পর্যন্ত চরম লজ্জাজনক কাজে ব্যবহার করে , কোনরকম নীতিনৈতিকতা দয়ামায়ার পরোয়া না করে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের নিরীহ বেসামরিক মানুষ, নারী ও শিশুদের নির্দ্বিধায় হত্যা করে । মায়ের পেটের শিশুকেও হত্যা করে । একে তারা ধর্মীয়ভাবে কোন পাপ বা অপরাধ মনে করেনা ।
জায়নিজম শুধু ইহুদীদের ভেতরই আছে তা নয় । খ্রিষ্টানদের মধ্যে আছে খ্রিষ্টীয় জায়নবাদ । এই খ্রিষ্টীয় জায়নবাদীরা আবার ইহুদী জায়নবাদের সমর্থক । তারাও মনে করে ইহুদীদেরকে ফিলিস্তিনে পুনর্বাসন করা ধর্মীয় কর্তব্য । ইহুদী জায়নবাদী এবং আমেরিকা ব্রিটেনের খ্রিষ্টীয় জায়নবাদীদের একত্রিত প্রভাবের কারণেই ইজরাইল হয়ে উঠেছে আরো বেশি বেপরোয়া এবং উদ্ধত । তারা নিজেরাতো কোনরকম নীতি নৈতিকতার পরোয়া করেনা , আবার প্রভাবশালী দেশগুলো থেকে খ্রিষ্টীয় জায়নবাদীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সমর্থন পেয়ে আসছে ।
জায়নবাদী হতে পারে যে কেউ । যদি আমি মনে করি যে, বাংলাদেশে শুধু বাঙ্গালিরাই থাকতে পারবে- তাহলে আমিও জায়নবাদের মতাদর্শের আওতায় পড়লাম ।
ইহুদী মানেই জায়নবাদের সমর্থক নয় । ইহুদি ধর্মের গোঁড়া অনুসারীরা, যেমন নেতুরাই কারটা (Neturei Karta, ইহুদীদের মধ্যে এরা একটা গোষ্ঠী, যারা জায়নবাদের ঘোর বিরোধী) ।
লন্ডনে ট্রাফালগার স্কোয়ারে রাব্বি আহরণ কোহেন গত ২০০৫ সালের ৩০ অক্টোবর ফিলিস্তিনী জনগণের প্রতি আল কুদস দিবসে সংহতি জানাতে এসে বলেন, ‘গোঁড়া ইহুদিরা ফিলিস্তিনীদের প্রতি পুরাপুরি একাত্ম। ধর্ম বিশ্বাস, ইহুদি ধর্ম এবং মানবিক নীতিনৈতিকতার দিক থেকে ইহুদি ধর্মের মৌলিক শিক্ষা জায়নবাদের সম্পূর্ণ বিপরীত। আমাদের ধর্ম বিশ্বাস এই রকম যে, হাজার বছর বা তারও বেশি সময় ধরে ইহুদি জনগণ মহান আল্লাহ তাআলার ডিক্রি অনুযায়ী নির্বাসিত জীবন পালন করছে, কারণ তাদের কাছ থেকে যে উন্নত মানের প্রত্যাশা করা হয়েছিল তা তারা রক্ষা করতে পারে নি। আমরা দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গিয়েছি এবং আমাদের ধর্মীয় কর্তব্য হচ্ছে যে দেশে আমরা বাস করি সেই দেশের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য বজায় রাখা। তাছাড়া ফিলিস্তিনে আমাদের নিজেদের কোন রাষ্ট্র কায়েম করা নিষিদ্ধ, যদি এমন কিছু করবার চেষ্টা করা হয় তাহলে তার কঠিন পরিণতি সম্পর্কে আমাদের হুঁশিয়ার করা হয়েছে। এমন কিছু করা মানে পরম শক্তিমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা। অতএব ধর্মবিশ্বাসের জায়গা থেকে ফিলিস্তিনে আমাদের কোন রাষ্ট্র গঠনের অধিকার নাই।’
যদিও ইসরাইল ধর্মের ভিত্তিতে গঠিত একটি অবৈধ রাষ্ট্র , তবু এর গঠনের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে জায়নবাদ । ইহুদীবিহীন ইউরোপের ধারণা । মধ্যপ্রাচ্যের ওপর প্রভাব বজায় রাখার পাশ্চাত্য আধিপত্যবাদী ধ্যানধারণা ।
জায়নবাদ একটা ভয়ংকর চেতনা । ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গী ছাড়াই জায়নবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবার অংশ নেয়া উচিৎ । এমনকি কম্যুনিস্টরা যারা এই জায়নবাদের তত্ব বোঝে তারা অতীতে জায়নবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল ।
বিষয়: বিবিধ
১৪৯৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাদের একটা বাচ্চা শিশুও যাতে পার না পায় সেটার জন্যও দোয়া করতে হবে । কারণ এরা পরে বড় হয়ে একই কাজ করবে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন