ওরা কী চায় ?
লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ২৭ জুলাই, ২০১৪, ০৩:৪৪:৫৮ দুপুর
ঢাকার অনেক স্কুলে ক্লাস এইটের শিক্ষার্থীদের নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়েছে 'নিজেকে জানো' নামক বই । এই নিজেকে জানা মানে সক্রেটিস এর Know Thyself না, এর মানে ছেলেমেয়েদের শরীর সম্পর্কে জানা ! শরীর মানে আবার চোখ মুখ হাত পা পাকস্থলী ফুসফুস হার্ট এগুলো না, আমাদের দেশের নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় মনে করে শরীর মানে যৌনতা । শরীর মানেই প্রজনন বিষয়ক কর্মকান্ড । এবং তারা মনে করে প্রতিটি শিশুকে জন্মের পরপরই এ বিষয়ে রগরগে বর্ণনাসমৃদ্ধ বই পড়িয়ে শিক্ষা দেয়া দরকার । যেহেতু বইটা আমি দেখিনি তাই ভয়ে আছি, বইয়ে সচিত্র বর্ণনা দেয়া হয়েছে কিনা ! আরো ভয়ে আছি, কোনদিন আবার স্কুল থেকে ছোটভাই বোনেরা এসে হাতে ডিভিডি তুলে দিয়ে বলবে , ভাইয়া তোমরা তো আমাদের কিছুই শেখাও নি । এই ভিডিও দেখে আমরা অনেক কিছু শিখেছি !
যাহোক , ছেলেমেয়েদের বিশেষ শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন সম্পর্কে কিছুটা শিক্ষা দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমিও মনে করি । কিন্তু সেটা হওয়া উচিৎ ছিল এভাবে- শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন কী কী বিপদ টেনে আনতে পারে, জীবনে কী ক্ষতি করতে পারে সে ব্যাপারে সতর্ক করা । ভীতি জাগানো । হওয়া উচিৎ ছিল কিশোর কিশোরীদের নৈতিক অবক্ষয় রোধের জন্য ধর্মীয় ও সামাজিক মোটিভেশন । কিন্তু তা না করে যে বই দেয়া হয়েছে, এটাকে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে যাতে করে ছেলেমেয়েরা অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক তৈরিতে আগ্রহী হয় । নিরাপদে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারে । এমনকি একাধিক শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে !
বইয়ের শিরোনামগুলো দেখলেই গা রি রি করে উঠবে । ক্রমানুযায়ী কয়েকটি অধ্যায়ের শিরোনাম- 'আকর্ষণ', ‘বন্ধুত্ব ও ভালবাসা’ , ‘ভালো লাগার পরের পর্যায়’, ‘দৈহিক সম্পর্ক’ (!) ।
এসব ব্যাপারে বলা হয়েছে- ছেলেমেয়ের পারস্পরিক ভালোলাগা স্বাভাবিক, বন্ধুত্ব হওয়া দোষের কিছু নয়, সে ভালোলাগা প্রকাশ করতে হবে চিঠি লিখে, শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক (!), একাধিক শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটু বেশি সতর্ক হতে হবে (!) , গর্ভসঞ্চার হলে নিকটস্থ এনজিওচালিত ক্লিনিকে যোগাযোগ করতে হবে ।
আর সতর্কতামূলক কথা বলা হয়েছে এটুকুই- তবে বিয়ের আগে এসবে না জড়ানোই ভালো !
# বইটির ‘বন্ধুত্ব ও ভালবাসা’ শীর্ষক অধ্যায়ে একটি শিরোনাম হলো ‘প্রেম করলে কেন ছেলেমেয়েরা ধরাধরি করে?’
(এটা কী ধরণের শিরোনাম ?)
অনেক বর্ণনার পরে শেষে বলা হয়েছে- কৈশোর হলো জীবন গড়ার সময়। এ বয়সে এসব করে তাই সময় নষ্ট না করাই ভালো।
(রগরগে বর্ণনার পরে এটুকু সতর্কবানী ? এতে করে শুধু সময় নষ্ট হবে ! আর কোন সমস্যা নেই ? )
# ‘পরিস্থিতির চাপে যদি দৈহিক মিলনের সম্ভাবনা দেখা দেয় তবে আমি সে অবস্থায় কী করবো?’
-যদি কারো মনে হয় যে তার প্রেমিক এ ধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী, তবে মেয়েটাকে এ প্রস্তাবে সায় না দিয়ে বড় কারো সাথে বিষয়টি আলোচনা করা ভালো। যদি তা না করা যায় আর দৈহিক সম্পর্ক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে গর্ভধারণ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য কোনো অস্থায়ী পদ্ধতি ব্যবহার করা জরুরি। এরপরও যদি কোনো সমস্যা হয় তবে উপদেশের জন্য তুমি কাছের কোনো ক্লিনিকে যেতে পারো। ( বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত বেশ কয়েকটি ক্লিনিক/সেবা সংস্থার তালিকা )।
# অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ বিভিন্নভাবে ঘটতে পারে, যেমন-চিঠি লিখে, দেখা করে, হাত ধরে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরেকটু কাছাকাছি এসে। যৌন অনুভূতি প্রকাশ করা দোষের কিছু নয়, তবে সেটি হতে হবে দুইজনের সম্মতিতে, মার্জিত ও শালীনভাবে (!)
# অনেকের সাথে দৈহিক সম্পর্ক থাকলে কনডম ব্যবহার খুবই জরুরি ।
এই হলো পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে নেয়া সেই বইয়ের শিক্ষার কিছু নমুনা । এছাড়া এমন এমন বর্ণনা সেখানে দেয়া হয়েছে যা পত্রিকায় প্রকাশযোগ্য নয় বলে সংবাদে লেখা হয়েছে ।
এরকম একটা ব্যাপার নিয়ে লিখতে যাওয়াটাও সহজ কাজ না । এসবের প্রতিবাদ করতেও রুচিতে বাঁধে । কিন্তু বাধ্য হয়ে রুচিবোধকে নিচে নামাতে হলো । যদি এই কার্যক্রম থামানো না হয় , তাহলে ইন্ডিয়ার মত বাংলাদেশও অচিরেই ধর্ষণের দেশে পরিণত হবে । এখনই পত্রিকার পাতা খোলা যায়না । শুধু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মূল্যবোধ বা রুচিবোধ রক্ষাই নয়, সামাজিক নিরাপত্তার প্রয়োজনেও এই উদ্যোগকে এখনই থামানো জরুরি । এই উদ্যোগের সাথে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা উচিৎ ।
যারা এই বই লিখেছে এবং ছাত্রছাত্রীদের সরবরাহ করেছে তাদেরকে সর্বনিম্ন কুকুর নামক ইতর প্রাণির সাথে তুলনা করা যায় । যদিও এরা আসলে আরো বড় রকমের বিকৃত রুচির অমানুষ ।
এদের নাম পরিচয় প্রকাশ্যে প্রচার করা উচিৎ । নিজেকে জানার আগে 'কুত্তাদেরকে জানো' । যাতে সুযোগ পেলেই দেশের মানুষ এদেরকে উত্তম মধ্যম সহকারে তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে পারে ।
বিষয়: বিবিধ
১০৫৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন