গল্পঃ আজ তোমাকে স্নান করিয়ে দেবো চন্দন জলে

লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ২৩ মার্চ, ২০১৪, ০১:০৬:০৪ রাত

জায়গাটা বেশ নির্জন । রেললাইনের দুপাশে গাছগাছালিতে ভরা । সেজন্য এদিকটা সবসময় ঠান্ডা থাকে ।

হু হু করে বাতাস বইছে । মাথার চুল উড়ছে ইকবালের । সে পড়েছে একটা গেরুয়া রঙের ফতুয়া । উদাস কন্ঠে বললো – ‘রিনা, কেমন লাগছে ?’ ।

কখনো এরকম জায়গায় তো আসোনি তাইনা ?’

রিনা শুধু বলল –‘হু’ ।

রিনা এমনিতে খুব চঞ্চল হাসিখুশি ধরনের মেয়ে । কিন্তু মাঝে মাঝে চুপচাপ হয়ে যায় । আজকের পরিবেশটা যেন রিনাকে বলছে , বেশি কথা নয় । হাতে হাত রেখে চুপচাপ হেঁটে যেতে হবে । ইকবালের বাম হাত ধরে রেখেছে রিনা । দুজনে হাঁটছে পাশাপাশি । মাঝে মাঝে মাথার ওপর খুব কাছে দিয়ে উড়ে যাচ্ছে কিছু পাখি । দোয়েল , শালিক আর টুনটুনি । কিচিরমিচির করছে পাখিগুলো ।

এক সপ্তাহ হল- বিয়ে হয়েছে ইকবাল ও রিনার । একমাসের ছুটি নিয়েছে ইকবাল । ঠিক করেছে, বিকেল বেলা করে তারা হাঁটতে বের হবে । রিনাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যাবে, তাঁর প্রিয় জায়গাগুলিতে । অনেক কথা বলবে তারা ।

ইকবাল সরকারি ডাক্তার । তাঁর পোস্টিং হয়েছে ভোলার মনপুরায় । ডাক্তারদের জন্য বিসিএস হলো দিল্লিকা লাড্ডু । খাইলেও পস্তাতে হয়, না খাইলেও পস্তাতে হয় । বিসিএস হয়ে গেলে পোস্টিং দেয়া হয় দূর দুরান্তের গ্রামে । ইউনিয়ন সাবসেন্টারে । দেখা যায় - শুধু একটা ঘর আছে , আর একজন ডাক্তার আছেন । নার্স নাই, হেলথ এসিসটেন্ট নাই , ফার্মাসিস্ট নাই , ওটি এসিসটেন্ট নাই । অষুধপত্র নাই, ছোটখাট অপারেশনের যন্ত্রপাতি নাই । ডাক্তারের থাকার জায়গা নাই । বসার চেয়ারটার হাতল ভাঙ্গা । ফ্যান নাই । শুধু একজন ডাক্তারকে গ্রামে পাঠিয়েই সরকার বাহাদুর খালাস । কিছুদিন পরপর মন্ত্রী এমপিরা বুলি ঝাড়েন- ‘ডাক্তারদের গ্রামে যেতে হবে’ ।

আবার বিসিএস না করলেও বিপদ । কলুর বলদের মত ভূতের বেগার খাটতে হয় । স্পেশালিস্ট হওয়ার জন্য পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রী নিতেই হবে । করতে হবে দুই থেকে তিন বছর ট্রেনিং । আট থেকে ষোল ঘন্টা ডিউটি । সম্পুর্ণ বিনা পয়সায় । জীবন চলবে কীভাবে ?

উপজেলা শহরে ইকবালের চেম্বার আছে । এলাকায় সবাই তাঁকে চেনে ‘ম্যাজিক ডাক্তার’ হিসেবে । তাঁর দেয়া ভালো চিকিৎসা , সুন্দর ব্যবহার সবকিছুই ম্যাজিকের মত কাজ করে । শুধু তাই নয় – ইকবাল আসলেই ম্যাজিক জানে । কার্ডের ম্যাজিক, পয়সার ম্যাজিক, দড়ির ম্যাজিক , টাকার ম্যাজিক, আংটির ভেতর আংটি ঢুকানো । বাচ্চা রোগী অথবা কিশোরদের মাঝে মাঝেই ম্যাজিক দেখিয়ে চমকে দেয় সে । বাচ্চা ভয়ে অস্থির, ব্যাথায় অস্থির । ইকবাল একটা ম্যাজিক দেখিয়ে দিল । এইযে দেখ একটা টাকা । হাত নাড়াতেই চোখের সামনেই টাকাটা গায়েব ! আবার সেই টাকা আরেকজনের পকেট থেকে বের করে ফেললো । বাচ্চা পুরো হিপনোটাইজড ।

মাঝে মাঝে নতুন রোগী চেম্বারে ঢুকে ভড়কে যায় । রোগী চেম্বারে ঢুকে বসেছে, ডাক্তার সাহেব একগাদা কার্ড বের করে শাফল করলেন । রোগীকে বললেন শাফল করে দিতে । এরপর যেকোন একটা কার্ড টেনে লুকিয়ে রাখতে বললেন । আবার শাফল করে একটা কার্ড বের করে দেয় ইকবাল । দেখা গেল – দুটি কার্ডই এক ! রোগী অবাক হয় । আবার খুশিও হয় । মুহুর্তেই আপন হয়ে যায় ইকবাল । অষুধ দেয়ার আগেই রোগী অর্ধেক সুস্থ !

ফাইনাল প্রফ পরীক্ষার পর হঠাৎ ইকবালের খেয়াল চাপে ম্যাজিক শেখার । ম্যাজিশিয়ানরা ম্যাজিকের ট্রিক্স কাউকে শেখাতে চায় না । অনেক খুঁজে একজন ওস্তাদের সন্ধান পেয়েছিল সে । বলা ভালো- ‘ওস্তাদ পটিয়েছিল’ ! তাঁর কাছে ম্যাজিকের তালিম নিয়েছিল ইকবাল । ওস্তাদ বলতেন – ইকবাল, জীবনটাই একটা ম্যাজিক । সব ধান্দা, বুঝলা - সব ধান্দা । চোখের ধান্দা, মনের ধান্দা । ধান্দার জীবন নিয়া কখনো দুঃখ করবা না । চক্ষু খুইললে যেটা সইত্য, চক্ষু বুইজলে সেইটাই মিথ্যা । খোলা চোখের সামনে যা দেখ, তারও সবকিছু সইত্য না ।

ইকবালের মাঝে মাঝে মনে হয়- মানুষের রোগও বোধহয় একধরনের ধান্দা । আসলে ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস ক্যান্সার কোষ ব্যাথা বেদনা কিছু নাই । সব ধান্দা ।

ছোটভাইকে নিয়ে ম্যাজিক ডাক্তারের চেম্বারে এসেছিল রিনা । রিনা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্সের ছাত্রী । ডাক্তারের কথা শুনে আর ম্যাজিক দেখে ছোটভাইয়ের সাথে সেও হিপনোটাইজড । আরেকটা বিষয় তাঁর নজরে এসেছিল- সে যথেষ্ট সুন্দরি হওয়া সত্বেও ম্যাজিক ডাক্তার একবারের বেশি তাঁর দিকে চোখ তুলে তাকায়নি । বাসায় গিয়ে দুভাইবোন ম্যাজিক ডাক্তারের খুব প্রশংসা করেছিল । রিনার বাবাও একবার কথা বলে গিয়েছিলেন , ইকবাল অবশ্য জানতো না যে তিনিই রিনার বাবা । রিনার বাবা ইকবালের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা-মা র সাথে কথা বলে এসেছেন । ইকবালের অজান্তেই বাবা মাও রিনাকে দেখে গেছে । পরে একদিন আনুষ্ঠানিকভাবে দেখাদেখি হল । উভয়ের বাবা মার জোড়াজুড়িতে একমাসের মধ্যেই বিয়েটা হয়ে গেল ।

ইকবাল বললো – ‘রিনা, একটা কবিতা শুনবে ?’

‘হু’ ।

ইকবালের কন্ঠ ভালো । আবৃত্তির ভঙ্গিও ভালো । কবিতা আবৃত্তি করতে তাঁর ভালোই লাগে । আবৃত্তি করার সময় কবিতার প্রতিটি অক্ষর যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে । কবিতা লিখেন কবি , কিন্তু আবৃত্তি করার সময় সেটা হয়ে যায় সম্পুর্ণ নিজের ।

‘‘আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি ।

শোনো ।

পাহাড়টা , আগেই বলেছি

ভালোবেসেছিলো মেঘকে

আর মেঘ কি ভাবে শুকনো খটখটে পাহাড়টাকে

বানিয়ে তুলেছিল ছাব্বিশ বছরের ছোকরা......’’

‘কবিতাটা কার ?’ রিনা জিজ্ঞেস করলো ।

‘পুর্ণেন্দু পত্রী’ ।

তোমার ভালো লাগছে ?

‘হু’ ।

রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে ওরা চলে এসেছে নদীর পাড়ে । নদীটা কেমন নিশ্চুপ । ছোটবেলায় মাঝে মাঝে এদিকে আসত ইকবাল । খুব বেশি আসা হত না । বাড়ি থেকে বেশ দূর । নদীর ওপর রেল ব্রিজ । রেল ব্রিজে যখন রেলগাড়ি যায় তখন একটা কেমন অদ্ভুত ঝম ঝম শব্দ হয় । সেই শব্দটা শোনার জন্যই আসতো ইকবাল । তাঁর খুব ভালো লাগতো ।

‘রিনা, তুমি জানো রিনা শব্দটাকে উল্টালে কী হয় ?

‘বলো’ ।

রিনা জানে, তবুও ইকবালের মুখ থেকেই শুনতে চাচ্ছে । সে যখন বলতে চাচ্ছে, বলুক ।

‘নারী’ হয় । কবিরা কী বলে জান ?’

‘কী বলে ?’

‘বলে, নারীরা নাকি নদীর মত । ও নদীর কূল নাই, কিনার নাইরে । আমি কোন কূল হতে কোন কূলে যাবো কাহারে শুধাইরে......’

‘কাউকে শুধানোর দরকার নেই । চলো, রেলব্রিজটা হেঁটে পার হই । এখন আমরা এই কূল হতে ওই কূলে যাবো’ ।

রেলব্রিজে উঠতে ইকবালের ভয় হয় । ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় একবার এই রেলব্রিজে উঠেছিল ইকবাল । রেলব্রিজটা বেশ লম্বা । পা টিপে টিপে মাঝপথে গিয়েছে এমন সময় রেললাইন কাঁপতে লাগলো । পেছন থেকে একটা ট্রেন আসছিল । পেছনে ফেরারও উপায় নেই , সামনে যাবারও উপায় নেই । এর মধ্যে ট্রেন এসে পড়বে । চট করে মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গিয়েছিল ইকবালের । ব্রিজের মাঝামাঝিতে যে পিলার আছে , তার কিছুটা অংশ দেখা যায় । সে ওখানে নেমে গিয়েছিল । ট্রেন যাবার সময় অবস্থা এমন হয়েছিল –যাকে বলে ‘আত্মারাম খাঁচাছাড়া’ ।

রিনার কথায় কিছুক্ষণ চিন্তা করলো ইকবাল । কী করা যায় ? না বলে দেবে ? নাহ । রিনা কাপুরুষ ভাববে । রিনা যখন সাহস করেছে, তারও করা উচিৎ । নতুন বউয়ের কাছে এভাবে অপমান হওয়া ঠিক হবেনা । হয়তো দেখা গেল রিনা আসলে রেলব্রিজ পার হবে না । তাকে টেস্ট করার জন্যই বলেছে কথাটা । দেখা যাক কী হয় ! আল্লাহ ভরসা ।

‘আমাদেরকে দ্রুত হেঁটে তাড়াতাড়ি পার হতে হবে । এর মধ্যে ট্রেন আসলে কিন্তু মহাবিপদ হয়ে যাবে’ ।

রিনাকে সতর্ক করলো ইকবাল ।

ইকবালের বুক ধুকধুক করতে লাগলো । ইস্টিশনের রেলগাড়িটা, মাইপা চলে ঘড়ির কাঁটা, কখন বাজে বারোটা , কখন বাজে বারোটা । মাথায় ঘুরছিল পুরনো গানের কথা । এখন - কখন আসে ট্রেন , কখন আসে ট্রেন অবস্থা । মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে লাগলো যেন ভালোয় ভালোয় পার হতে পারে রেলব্রিজটা ।

‘আউ’ !

ব্রিজে কেবল উঠতে যাবে - তখনই, ব্রিজের গোড়ায় দুলাইনের মাঝখানের পাটাতনের একটা ভাঙ্গা অংশ দিয়ে রিনার পা টা দেবে গেল । পা টা মচকেও গেছে কিনা কে জানে ! ইকবালের মনের ধুকপুকানি বেড়ে গেল । এখন কী করবে সে । আশেপাশে কোন লোকজনও নেই । হু হু করে বাতাস বইছে । বসে পড়েছে রিনা । পা টা বের করার চেষ্টা করছে ইকবাল । কিন্তু কোনভাবেই বের করা যাচ্ছে না । বেকায়দা ভাবে আটকে গেছে ।

কিছুক্ষণের মধ্যে রেললাইনের ভেতর শো শো আওয়াজ হতে লাগলো । ট্রেন আসছে । এক কিলোমিটারের মত দূরে আছে । তাড়াতাড়ি পাটা বের করতে হবে । চেষ্টা চালাতে লাগলো দুজনেই । কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা । আধা কিলোর মধ্যে চলে এসেছে ট্রেন ।

...............

উস্তাদ রহমত উল্লাহর বয়স এখন ৫৫ ।

বিশ বছর ধরে সিলেট চট্টগ্রাম রুটে ট্রেনের চালক হিসেবে কাজ করছেন তিনি । এই রুটের নাড়ি নক্ষত্র তাঁর মুখস্ত । মাঝে মাঝে মনে হয় – চোখ বন্ধ করেও ট্রেন পৌঁছে দিতে পারবেন সিলেট থেকে চট্টগ্রাম । চট্টগ্রাম থেকে সিলেট । বিশ বছরে অভিজ্ঞতাও কম হলোনা । রেলগাড়ির জগতটা যেন একটা আলাদা জগত । রেলগাড়ি, রেললাইন, যাত্রী , টিটি, গার্ড । সবাইকে নিয়ে একটা বৃহৎ সংসার ।

কতবার রেলে ডাকাতি হলো । এক্সিডেন্ট হলো । বগি লাইনচ্যুত হল । অনেক ইতিহাস । ডাকাতি এখন কমে গেছে । কিন্তু একটা বিষয় তাঁকে খুব কষ্ট দেয় । রেললাইনের ওপর শুয়ে অনেকে আত্মহত্যা করে । বেশিরভাগই কমবয়সী ছেলে মেয়ে । রহমত সাহেব পত্রিকায় দেখেন । যেদিন তাঁর নিজের ট্রেনের নিচে পড়ে কেউ মারা যায় – পরের কয়েকটি দিন তাঁর খুব খারাপ লাগে । নিজেকে খুনি খুনি মনে হয় । মাঝে মাঝে ভাবেন , অবসর নিবেন । কিন্তু ছাড়তে ছাড়তেও ছাড়া হয়না । ট্রেনের ওপর মায়া পড়ে গেছে ।

চালকের আসনে বসে রহমতুল্লাহ সাহেব সিলেট থেকে চট্টগ্রামের পথে যাচ্ছিলেন ট্রেন নিয়ে । অতীতের অনেক কথাই মনে পড়ছিল । বিশেষ করে ছোটবেলার সেই ঘটনাটি ।

বয়স যখন দশ ,রেলের সাথে তাঁর জীবন জড়িয়ে যায় তখনি । তিনি মাঠে গরু চড়াচ্ছিলেন । কোমড়ে লাল গামছা বাঁধা ছিল । হাতে লাঠি । লাঠি হাতে থাকলে গরু রাখালকে ভয় করে । নাহলে দুয়েকটা বদমাশ গরু মাঝে মাঝে তেড়ে আসে । গরুগুলোকে মাঠে ছেড়ে দিয়ে বটগাছের নিচে বসে বাঁশি বাঁজাতেন রহমতুল্লাহ । মাঝে মাঝে রেললাইনের ওপর বসেও বাঁশি বাঁজাতেন । সেদিনও রেললাইনের ওপর বসে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন । গামছাটা ভেজা থাকায় লাঠির মাথায় বেঁধে লাঠিটাকে রেললাইনের পাটাতনের ফাঁকে গুজে খাড়া করে শুকাতে দিয়েছিলেন । একটা গরু অন্যদিকে চলে যাওয়ায় লাঠিটা ওখানে রেখেই গরুর পেছনে ছুটেছিলেন তিনি ।

হঠাৎ রেলের হুইসেল শুনে গামছা নেয়ার জন্য দৌড় দেন । কিন্তু ততক্ষণে ট্রেনটা থেমে গিয়েছিল । তাঁর রেখে যাওয়া গামছার একটু দুরেই রেলের দুতিনটা স্লিপার খোলা ছিল । ট্রেনের চালক এসে জিজ্ঞেস করলেন, লাল গামছা কার । ভয়ে ভয়ে তিনি বলেছিলেন – আমার গামছা । চালক রহমত উল্লাহর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন- তুই আজ অনেক মানুষের জীবন বাচাইছিস রে বাপ । তোরে আমি ট্রেনের চালক বানামু ।

সেই চালকের নাম ছিল আব্দুল করিম খাঁ । একদিন এসে বাড়ি থেকে রহমতুল্লাকে নিয়ে যান তিনি । তারপর দীর্ঘ সময় কেটে গেছে । রহমতুল্লাহ সাহেবকে তিনি ঠিকই ট্রেনের চালক বানিয়েছেন । রহমতুল্লাহ সাহেব ট্রেনের চালক হবার তিন মাসের মাথায় ইন্তেকাল করেন আব্দুল করিম ।

তিনি ছিলেন রহমতুল্লাহ সাহেবের উস্তাদ । বাবার মত স্নেহ করতেন । তাঁর কথা মনে পড়লে এখনও চোখে জল আসে রহমতুল্লাহ সাহেবের । আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি । ভাবতে ভাবতে তাই চোখটা ভিজে উঠেছিল তাঁর । তিনি চোখ মুছে সামনের দিকে তাকালেন । সামনেই একটা রেলব্রিজ আছে । রেল ব্রিজ পার হবার সময় একটু বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন । ব্রিজের ওপর থেকে বগি লাইনচ্যুত হলে বেশি মানুষ মারা যাবে ।

সামনে চোখ দিতেই নজরে আসলো রেলব্রিজের ওপ্রান্তে লাইনের ওপর যেন একটা লাল পতাকা দুলছে । দুজন মানুষের আবছা অবয়ব চোখে পড়ছে । রহমতুল্লাহ সাহেব ট্রেন থামানোর ব্যবস্থা করলেন । নিশ্চয়ই কোন সমস্যা হয়েছে । ব্রিজের ওপর ওঠার আগেই ট্রেন থামাতে হবে ।

ট্রেনের গতিবেগ কমতে লাগলো । কিন্তু তবুও শেষ রক্ষা হলো না । ট্রেন থামতে থামতে ইঞ্জিন বগিটা ব্রিজের ওপর উঠে গেল । রহমতুল্লাহ সাহেব অবাক হয়ে দেখলেন , একজন যুবক ও লাল শাড়ী পরা একজন মেয়ে রেললাইন থেকে উঠে দাঁড়ালো । ট্রেনের দিকে একবার তাকিয়ে তারা হেঁটে হেঁটে সরু রাস্তা ধরে চলে যেতে লাগলো । মেয়েটির শাড়ির লাল আঁচল তখনো দমকা বাতাসে পতাকার মত উড়ছে ।

ইকবাল যখন রিনার পা বের করতে সক্ষম হয় , ট্রেনটা তখন ব্রিজের ওপর এসে থেমে গেছে । ট্রেনটা কেন কীভাবে থামলো আল্লাহই জানেন । পুরো ঘটনাটা যেন ম্যাজিকের মত ঘটে গেল । মহান প্রভূও হয়তো তাঁর ক্ষুদ্র সৃষ্টি মানুষকে নিয়ে ম্যাজিক করেন ! তারা ওখানে আর দাঁড়ালো না । আল্লাহর শুকরিয়া জানিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো । রিনার গালে বিকেলের কোমল আলোয় চকচক করছিল একফোঁটা অশ্রুবিন্দু ।

ইকবাল গভীর আবেগে আবৃত্তি করতে লাগলো –

‘‘সেদিন ছিলো পাহাড়টার জন্মদিন ।

পাহাড় মেঘকে বললে

আজ তুমি লাল শাড়ি পরে আসবে ।

মেঘ পাহাড়কে বললে

আজ তোমাকে স্নান করিয়ে দেবো চন্দন জলে’’ ।

বিষয়: সাহিত্য

১৩২০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

196443
২৩ মার্চ ২০১৪ রাত ০৩:১০
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৩ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪১
146802
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : ধন্যবাদ ।
196447
২৩ মার্চ ২০১৪ রাত ০৩:১৩
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : দারুনস: ভালো লাগলো পিলাচ
২৩ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪১
146804
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : ধন্যবাদ ।
196459
২৩ মার্চ ২০১৪ রাত ০৩:৪৬
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ভালো লাগলো এবং মনে করিয়ে দিল ক্যানাডায় প্রবাসী এক বান্ধবীর কথা যার ডায়রীতে প্রথম আমি পড়েছিলাম এই লেখাটা। লেখককে অনেক ধন্যবাদ
২৩ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৪
146805
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : বুঝলাম না আপনার কথা । এই লেখা আমি লিখেছিই গতবছর ডিরেক্ট কীবোর্ড দিয়ে , কানাডায় আরেকজনের ডায়েরীতে পড়বেন কেম্নে ???? আশ্চর্য !
196505
২৩ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫৫
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৩ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৪
146806
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : ধন্যবাদ ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File