আমরা কি দিয়েছি নারীকে প্রাপ্য অধিকার ?
লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ১৯ মার্চ, ২০১৪, ০৯:৫৬:২৬ রাত
এদেশের ইসলামপন্থিরা অনেকেই সহশিক্ষার বিরোধিতা করেন । নারীদের স্বনির্ভর – কর্মমুখী করার ব্যাপারে ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংকের যে প্রচেষ্টা তার বিরোধিতা করেন । মুসলিম হিসেবে , আদর্শিক অবস্থান থেকে আমিও করি । কিন্তু তার আগে একবার চিন্তা করা উচিৎ , বিরোধিতা তো করলেন , আপনি এবং আপনারা কি দায়িত্ব পালন করেছেন ?
বেগম রোকেয়াকে কেন নারী জাগরণের কথা বলতে হয়েছিল ? কেন বলতে হয়েছিল – ‘জাগো গো ভগিনী’ ?
ইসলাম নারীর অধিকার দিয়েছে । নারীর মর্যাদা পশুর পর্যায় থেকে মানুষের পর্যায়ে এনেছে , দিয়েছে ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষের চেয়ে বেশি সম্মান । কিন্তু মুসলিম নাম নিয়ে আমরা কী করেছি ? আমরা কি নারীকে তার প্রাপ্যটা দিয়েছি ? বলার আগেই অধিকার দিয়েছি ? নাকি ধর্মের দোহাই দিয়ে – যেটুকু আমার পক্ষে যায় সেটুকু বলে নারীকে দমিয়ে রাখতে চেয়েছি ?
আসলে কী হয়েছে ?
রাসুল (সাঃ) বলেননি – অথচ আমরা দিব্যি হাদিস বানিয়েছি – ‘স্বামীর পদতলে স্ত্রীর বেহেশত’ !
জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসে দেখা যায় – পুরুষদের কথায় কথায় তালাক দেয়ার প্রবণতা । খুবই বাস্তব । গ্রামে দেখেছি- পুরুষ মাত্রই ‘তালাক’ নামক পারমানবিক অস্ত্রের অধিকারী ! পান থেকে চুন খসুক আর চুন থেকে পান খসুক – তারা যখন তখন ‘তালাক’ নামক স্টেনগান তাক করে স্ত্রীকে ব্রাশফায়ারের হুমকী দেন ! (নারী নির্যাতন বিরোধী আইন হবার পর এই প্রবণতা কমেছে । এখন উল্টা মহাবীর ‘পুরুষ’ মহোদয় নির্যাতিত হন ।)
এখন কিছুটা কমেছে , কিন্তু একসময় প্রতিটি গ্রামে অন্তত কয়েকজন করে ‘তালাকপ্রাপ্তা’ নারী থাকাটাই ছিল যেন স্বাভাবিক ব্যাপার । এদের কোন আশ্রয় নেই । এরা থাকে বাপের বাড়ির গলগ্রহ হয়ে । ননদ-ভাবীর গালমন্দ খেয়ে বেঁচে থাকাটাই যেন তাঁদের ভাগ্য । অথচ খোঁজ নিলে দেখা যাবে- খুব বেশি দোষ ছিলনা সংসার ভাঙ্গার মত ।
পুরুষেরা এমন আচরণ করেন,করতেন , কথায় কথায় এমনভাবে তালাকের হুমকী দেন যেন তারা ‘প্রভু’ । স্বামীর ‘খেদমত’ করা স্ত্রীর দায়িত্ব ! ‘স্বামী’র মাথা টিপে দেয়াও স্ত্রীর কাজ, পা টিপে দেয়াও স্ত্রীর কাজ ! ‘স্বামী’ – সে যেন এক মানব প্রভুর নাম !
পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা নয় , এ যেন মালিক-ভৃত্যের সম্পর্ক । স্বামীর নাম মুখে নেয়া যাবেনা , ভাসুরের নাম মুখে নেয়া যাবেনা । মেয়েমানুষ- লেখাপড়া করে কী হবে ? জজ-ব্যারিস্টার হবে ? কোনমতে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারলেই হবে । সুরা ফাতেহা , সুরা এখলাস পড়তে পারলেই হবে ।
মেয়ের বিয়ে হবে – ছেলের পছন্দই সব । মেয়ের পছন্দ-অপছন্দের কোন দাম নেই । বালাই নেই । জিজ্ঞেসও করা হয়না- বরকে তার পছন্দ হয়েছে কিনা ? সে যে একজন ‘মানুষ’, তা যেন আমরা ভুলেই যাই । কোনমতে একজন ‘পুরুষের’ কাছে গছিয়ে দিতে পারলেই কেল্লা ফতেহ ।
একটা যৌথ পরিবারে যদি কোন বউ চাকরি করে , নিজে উপার্জন করে , তাঁকে কিছুটা হলেও ভিন্ন চোখে দেখা হয় । সম্মানের চোখে দেখা হয় । কারণ, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতা । আজ আর পুরুষ ‘প্রভু’ নেই । বুক ফুলিয়ে বলতে পারেনা – ‘আমিই খাওয়াই-পরাই’ ।
বেগম রোকেয়ার প্রতি শ্রদ্ধা আসে । তিনি সাহস করে নারীশিক্ষার কথা বলেছেন । তিনি পুরুষকে ‘স্বামী’ নয়, অর্ধাংগ নাম দিয়েছেন ।
অসহায় নারীদের সাহায্য করার জন্য ইসলামপন্থী দের ভূমিকা কী ? তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা কি আমরা করতে পেরেছি ? তাঁদের দুর্বিষহ জীবনে এতটুকু স্বস্তি এনে দেবার জন্য আমরা কি কোন সহযোগিতা করতে পেরেছি ? ব্র্যাক যদি সেখানে এগিয়ে যায় , আশা যদি সেখানে এগিয়ে যায়- কেন এইসব নারীরা ছুটে যাবেনা ?
‘পতিতা’ নাম নিয়ে আর একদল নারী চরম অমানুষিক জীবন যাপন করছে । ওদের ঘৃণা করতে সবাই পারে । পতিতাদের উদ্ধার না করে তথাকথিত ‘যৌনকর্মী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেবার দাবি করে অনৈসলামিক সেক্যুলার নারীবাদি সংগঠনগুলো । ওরা নারীদের ব্যবহার করতে চায়- বিনিময়ে ‘পারিশ্রমিক’ দিতে চায় ! অথচ মানবতার চরম অপমান দেখেও , এই নারীদের – তথাকথিত পতিতাদের পুনর্বাসনের কোন উদ্যোগ কি নিয়েছে মুসলিমদের কেউ ? আলেম-ওলামাগনের কেউ ? ইসলামপন্থি কেউ ?
কোন মেয়ে কি কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে নিতে পারে ? মানবতার চরম অপমান দেখেও কী করে আমরা চুপ করে বসে থাকি ?
তসলিমা নাসরিনের মত সীমালংঘনকারী মহিলা- যে জরায়ুর স্বাধীনতা চায় , গাঁয়ের জামা খুলে একজন পুরুষের মত প্রকাশ্যে হাটে বাজারে ঘুরে বেড়াতে চায় –( ইমদাদুল হক মিলন আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে কিছুটা বোধোদয় হয়েছে হয়তো) সে পর্যন্ত এই পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে কথা বলছে ।
কুরআন নারীকে অধিকার দিয়েছে । ইসলাম নারীকে অধিকার দিয়েছে । আমরা কি দিয়েছি ? সেটাই ভাবতে হবে । থিওরি বলে , এর-ওর বিরোধিতা করে কোন লাভ নেই । নারীদের প্রকৃত অধিকার দিতে ও নিতে , অসহায় নারীদের কল্যানে কাজ করতে হবে ।
ইসলামের সঠিক বাস্তবায়নই পারে নারীকে তার সঠিক মর্যাদা দিতে । কিন্তু , ইসলাম কী দিয়েছে , কী দিতে চায় সেটা বাস্তবে দেখাতে হবে । তবেই আসবে প্রকৃত নারী স্বাধীনতা । নারীর প্রকৃত কল্যান ।
বিষয়: বিবিধ
১১০৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এটাই ফ্যাক্টস্।
আপনার লিখার স্প্রিট এর সাথে সহমত পোষন করছি।
ব্যাক্তিগতভাবে আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে - এনজিও, মাইক্রোক্রেডিট অর্গাইনাইজেশান ও নারী সংস্থাগুলোর কাজকে যতটা না 'নারী মুক্তি'র নিমিত্তে কাজ করছে বলবো - তার চেয়ে 'নারীর লাঞ্চনা' নিশ্চিত করছে বলবো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন