তোমরা যারা 'ও ডাক্তার' গান গাও...(৬)
লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ০৫ মার্চ, ২০১৪, ০১:৩৯:৪৫ রাত
মাঝে মাঝে পত্রিকাগুলোতে ডাক্তারদের বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে সংবাদ , সম্পাদকীয় , উপসম্পাদকীয় দেখা যায় । সেসবে 'অপ্রয়োজনীয়' টেস্ট দেয়া ও দামী ওষুধ দেয়া নিয়ে ডাক্তারদের দোষারোপ করা হয় । মজার বিষয় হলো ঐ কলামগুলো লেখেন অডাক্তার সাংবাদিক ও কলামিস্টগন । এটা স্বতসিদ্ধ যে তাদের চিকিত্সাবিদ্যা সম্পর্কে যথাযথ ও যথেষ্ট জ্ঞান নেই । তাদের এ বিষয়ে কোন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান নেই । তারা আন্দাজ অনুমানের ভিত্তিতে ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেন । জনসাধারনের চিকিত্সা ব্যবস্থা সম্পর্কিত সচেতনতা ও সঠিক ধারণা না থাকায় তাদের এসব মন্তব্যে অনেকেই প্রভাবিত ও বিভ্রান্ত হচ্ছে । এবং এর প্রভাব পড়ছে সামাজিকভাবে । এর প্রমাণ আমরা পাচ্ছি কোথাও কেউ মারা গেলেই তার আত্নীয় স্বজন ডাক্তারদের দোষারোপ করে হামলা চালাচ্ছে । হাসপাতালে ভাংচুর চালাচ্ছে । আদালতে মামলা ঠুকে দিচ্ছে । জজ উকিল মোক্তাররাও টুপাইস কামানোর উদ্দেশ্যে অভিযোগ আমলে নিয়ে হয়রানি করছে । এই প্রবণতার শেষ ফলাফল ভালো নয় । এতে করে ডাক্তাররা আর কোন রোগীকে ঝুঁকি নিয়ে চিকিত্সা দিতে আগ্রহী হবেন না । সমস্যা মনে হলেই অন্য কোথাও রেফার করে দেবেন । পথে পথেই চিকিত্সা না পেয়ে মারা যাবে রোগী । কিছুই বলার থাকবে না ।
এইসব সাংবাদিক কলামিস্ট এবং জনগনের মুখপাত্রকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করি , টেস্ট কিংবা ওষুধ অপ্রয়োজনীয় কিনা আপনি বুঝলেন কেমনে ? এতই যদি বোঝেন , তাহলে কাল থেকে আপনিই চেম্বার দিয়ে বসে যান । রোগী দেখে সঠিক ওষুধ আর টেস্ট নাহয় আপনিই দিলেন ! অন্তত আমার কোন আপত্তি নেই এতে ।
একজন ডাক্তার বছরের পর বছর পড়াশোনা এবং বাস্তব শিক্ষা থেকে যে ওষুধ দিলেন , আপনি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখেই বলে দিলেন এটা অপ্রয়োজনীয় ! পা অবশ হয়ে গেলে ডাক্তার যখন সিটিস্ক্যান কিংবা MRI করান তখন তারা সেটাকে 'অপ্রয়োজনীয়'র কাতারে ফেলে দেন । তাদের ধারণা , অবশ হয়েছে পা , মাথার এক্সরে করাচ্ছে কেন ? নিশ্চয়ই কমিশনের আশায় ! সমস্যা প্রস্রাবে , রক্তপরীক্ষা করাচ্ছে কেন ? নিশ্চয় প্যাথোলজি ল্যাব থেকে ডাক্তার কমিশন নেয়ার জন্যই এটা করাচ্ছে ! এটার আদতে কোন প্রয়োজন ছিলনা !
নচিকেতা মজা করে সুর (ভুল বুঝবেনা , শুড় নয় কিন্তু !) দিয়ে গেয়েছেন 'ডাক্তার চাইবেন রক্তরিপোর্ট , খদ্দের পাঠালেই কমিশন !' নচিকেতার গান নিয়ে আগের একটি পোস্টেও বলেছি । Brain function disturbance এর ফলে যে পা নাড়াতে পারছেনা ,পায়ে অনুভূতি পাচ্ছেনা এটাতো নচিকেতার জানার কথা না । রক্তসঞ্চালন অথবা রক্তের উপাদানগুলোর কমবেশির ফলেই যে প্রস্রাবে সমস্যা সেটাতো নচিকেতার মত গায়ক কিংবা সাংবাদিক ভাইদের জানার কথা না । তবু তারা লিখবেন ! তবু তারা গাইবেন ! কারন ,বলার যে কেউ নেই !
শরীরের প্রতিটি অঙ্গ কিভাবে গঠিত ও সজ্জিত হয়েছে , শরীরের প্রতিটি কাজ কিভাবে সম্পাদিত হয় একজন ডাক্তারকে তা জানতে হয় । কোন কারণে কোন সমস্যাটি তৈরি হয় তা জানতে হয় । জানতে হয় প্রতিটি ওষুধের উপাদান কী , ওষুধের উপাদানগুলো কিভাবে কাজ করে , কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে সব । পাঁচ বছরের এমবিবিএস কোর্সে (ইন্টার্নশিপ ছাড়া) সাড়ে চার বছরই এসব পড়তে হয় । এই সকল বিষয় বিবেচনা করেই একজন ডাক্তার ওষুধ দিয়ে থাকেন । টেস্ট করাতে দিয়ে থাকেন ।
মানুষের শরীর কোন জীবনহীন যন্ত্র নয় । আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ ব্যাপার হলো মানুষের শরীর কিংবা জীবন কোন মানুষ তৈরি করেনি এবং করেনা । এমনকি মানুষের শরীরের সব রহস্য এখনও উদঘাটন করতে পারেনি মানুষ । সব কার্যপ্রণালী এখনো জানতে পারিনি আমরা । ,
তাই কোন অসুখেই ডাক্তাররাও বলতে পারেননা যে এটাই একমাত্র কিংবা প্রকৃত কারণ । বলা সম্ভব নয় এটাই একমাত্র এবং সঠিক ওষুধ ।
অর্জিত জ্ঞান , টেস্টের রিপোর্ট এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ধারনা করেই চিকিত্সা দেয়া হয় ।
রোগের সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে । সেগুলোই মেডিকেল টেস্ট । একটা যন্ত্র সমস্যাগ্রস্ত হলে সেটাকে খুলে দেখা যায় । আবার সব পার্টস লাগিয়ে দেয়া যায় । একাজটি করা যায় যখন ইচ্ছে তখনই । যেকোন পার্টস সহজে বদলে ফেলা যায় । কিন্তু মানুষের শরীরের অঙ্গ গুলো কি ইচ্ছেমতন খোলা কিংবা লাগানো যায় ? পেটের সমস্যা হলেই কি পেটটা কেটে দেখা সম্ভব ভেতরে কী হয়েছে ? মাথার সমস্যা থাকলেই কি মাথাটা খুলে পরীক্ষা করা যাবে ? উত্তর -না ।
এজন্যই সকল পরীক্ষা করতে হয় বাইরে থেকে । যতবেশি পরীক্ষানিরীক্ষা করা যাবে , রোগনির্ণয় হবে তত নির্ভুল । চিকিত্সা হবে তত সহজ ,সঠিক এবং উপকারি ।
আমাদের দেশে এখনো CT Scan, Ultrasonogram এগুলোকে উচ্চমানের টেস্ট হিসেবে ধরা হয় । উন্নতবিশ্বে এগুলো রুটিন চেকআপের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে । শুনেছি প্রবাসী অনেক বাংলাদেশি অসুস্থ হলে দেশে চলে আসেন । চিকিত্সা করিয়ে আবার চলে যান । কারণ , জ্বর সারানোর জন্য চিকিত্সা করতে গেলে যা খরচ- সেই খরচে দেশে আসা যাওয়া , চিকিত্সা এবং বাসায় একটা পার্টি দেয়া যায় !
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৯ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগ্লো...
ভালো মন্দ সকল পেশাতেই আছে। ডাক্তাররাও ভুলের উর্ধ্বে নন। তবে ব্যক্তিগত ভুলকে পুরো পেশার উপর চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়।
ডাক্তারী নিঃসন্দেহে একটি মহৎ পেশা। ডাক্তাররা সুখনিদ্রা ত্যাগ করে রোগীর চিকিৎসায় ছুটে যান। এ পেশাকে আমাদের সম্মান করতে হবে।
তবে বর্তমানে কিছু টাউট বাটপার সার্টিফিকেটবিহীন ভন্ড কবিরাজ, তান্ত্রিক, পীর ফকির এ মহৎ পেশাটিকে কালিমালিপ্ত করছে। আমাদের সচেতনতাই পারে এ পেশাটির মর্যাদা টিকিয়ে রাখতে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন