তোমরা যারা 'ও ডাক্তার' গান গাও...(৫)

লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১২:৩২:১৮ রাত

ডাক্তার বাইরে প্রাকটিস করেন কেন ? প্রশ্নটা এভাবেই আসে । শিক্ষা এবং চিকিত্‍সা মানুষের মৌলিক অধিকার । কোন মানুষই যেন শিক্ষা এবং চিকিত্‍সা থেকে বঞ্চিত না হয় সেরকমটাই হওয়া উচিত্‍ । চাই সে ধনী হোক কিংবা কপর্দকহীন হোক । শিক্ষা এবং চিকিত্‍সার বেসরকারিকরণ আমি সমর্থন করিনা । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে , এই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব কার ? জনগনের ভাবগতিক দেখে মনে হয় এটার দায়িত্ব 'ডাক্তারের' !

এত এত ক্লিনিক , ডায়াগনোস্টিক সেন্টার গড়ে উঠছে । সেগুলোতে অতিরিক্ত খরচ ও নানা অনিয়মের কথা বলার সময় অনেকেরই গলা চড়ে যায় , যদিও রোগীরও অভাব হয়না । সমস্যাটা হলো . এজন্য ডাক্তারকেই দায়ী করা হয় ।

জনগনের মৌলিক অধিকার চিকিত্‍সা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের । ডাক্তারের নয় ।

এজন্য যত ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন সেটা সরকারকেই নিতে হবে । যারা সরকারি চাকুরিতে যোগ দিয়েছেন তাদের নির্ধারিত সময়ে দায়িত্ব ফাঁকি দেয়াটা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য নয় । কিন্তু এর বাইরে প্র্যাকটিস করতে ডাক্তারদের বাধ্য করছে সরকারই ! চার বছরে বিবিএ কোর্স করে কিংবা ইন্জিনিয়ারিং এর বন্ধুরা যখন চল্লিশ হাজার টাকা বেতনে চাকুরি শুরু করে তখন ছয় বছরে এমবিবিএস কোর্স শেষ করা একজন ডাক্তার বেকার ! স্বাভাবিকভাবেই ডাক্তারও চাইবে ত্রিশ চল্লিশ হাজার টাকা আয় করতে । বিবিএ করা বন্ধু তার অফিসে সময় দেয় ৮ ঘন্টা । একই পরিমাণ উপার্জন করতে সদ্য ডাক্তারকে দৈনিক ১৬ ঘন্টা ডিউটি দিতে হবে ক্লিনিকে ।

এভাবেই একজন নবীন ডাক্তারের মনে প্রথমেই একটা 'জেদী' এবং পুঁজিবাদী চেতনার বীজ বপিত হয় । ইন্টার্নশীপ শেষ করার পরেই যখন একজন ডাক্তার নিজের অবস্থান , নিজের এতদিনের কষ্টগুলোর কথা অন্য বন্ধুদের অবস্থার সাথে তুলনা করেন তখন তাঁর মনে একটা কঠোরতা তৈরি হয় । 'সেবা'র বিষয়টা তাঁর কাছে

একটা প্রহসনের মত মনে হয় তখন । কারণ , সেবার কথাটা শুধুমাত্র 'ডাক্তার' শব্দটার সাথেই উচ্চারিত হয় । ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ এর ব্যাপারে 'সেবা'র কথাটা কি শোনা যায় ?

সবাই সেবার ব্রত নিয়ে ডাক্তার হয় এটাই জনগনের ধারণা এবং বিশ্বাস । অথবা ভাবটা এমন যে ডাক্তার হলেই তাকে বাধ্যতামূলকভাবে সেবার মনোভাব রাখতেই হবে । ব্লগে একজনের কমেন্ট দেখলাম এরকম 'সেবার জন্য ডাক্তার হয়েছেন , এখন আবার ফি চান কেন ?' মামা নয় , এ যেন খালার বাড়ির আব্দার ! স্বভাবতই প্রশ্ন করতেই পারি , যারা বিবিএ করেছেন তারা কি সেবার ব্রত নিয়ে করেছেন ? যারা ইলেক্ট্রিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং এ পড়েন তারা কি সেবার ব্রত নিয়ে পড়েন ? অবশ্যই না ।

ডাক্তার সেবা দিতে বাধ্য ! গরীবদের ফ্রি চিকিত্‍সা করাতে বাধ্য ! বাংলাদেশের কোন দোকানে গরীবদের বিনামুল্যে দুইটাকার তেল দেয়া হয় ? চিনি দেয়া হয় ?

গরীব বলে কাকে বিনামুল্যে চাল ডাল দেয়া হয় ?

ডাক্তাররা সেবার মনোভাব রাখবেননা কিংবা মানুষকে সেবা দেবেননা আমি এমনটা বলছিনা । তবে ডাক্তার সেবা দিতে বাধ্য , জনগনের এমন ধারনার অসাড়তার কথা বলছি । খাদ্য , বস্ত্র , বাসস্থান , শিক্ষা , চিকিত্‍সা মানুষের মৌলিক অধিকার । এগুলো নিশ্চিত করার দায়িত্ব সবার , কোন নির্দিষ্ট পেশার মানুষের নয় । ডাক্তারি প্রথমত একটা পেশা , এরপর যোগ হতে পারে জনকল্যানের ব্রত । বিস্তারিত পরে লিখব , আজ এটুকুই বলছি যে এখন পর্যন্ত ডাক্তাররাই সবচেয়ে বেশি জনকল্যান করেন ।

বিদেশে তো বটেই , বাংলাদেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিয়োগ দেয়া হয় তিন চার লাখ টাকা বা তারও বেশি বেতনে । শর্ত থাকে তাঁরা বাইরে প্র্যাকটিস করবেন না । ,

ঐ একই মানের একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সরকারি হাসপাতালে বেতন পান ত্রিশহাজার টাকা । তাহলে তিনি বাইরে প্রাকটিস করতে বাধ্য হবেন না কেন ?

এইবার সেই মোক্ষম যুক্তির অবতারণা করবেন অনেকেই । আপনারা জনগনের টাকায় পড়াশোনা করেন ! এই যুক্তিটি শোনার জন্যই আমি যেন মুখিয়ে ছিলাম !

তো ভাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কার টাকায় পড়াশোনা করেন ? বুয়েট চুয়েটের ছাত্ররা ? তাদের বেলায় তো আপনাকে 'জনগনের পক্ষে' খুঁজে পাইনা ! বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য কী বলবেন ? তারা কার টাকায় পড়াশোনা করে ?

আরেকটি বিষয় খোলাসা করা দরকার । স্বাস্থ্যখাতে যে বাজেট দেয়া হয় তা কিন্তু শুধু মেডিকেল স্টুডেন্টদের জন্য খরচ করা হয়না ! এর প্রায় পুরোটাই জনগনের জন্যই ব্যয় হয় । কয়েকটি বেসিক সাবজেক্ট ছাড়া বাকি সকল সাবজেক্টের টিচারগনকে হাসপাতালে ডিউটি করতে হয় । জনগনের সেবার জন্যই তো নাকি !

বাজেটের সিংহভাগ ,বাঘভাগ কিংবা গন্ডারভাগই ব্যয় হয় হসপিটাল ম্যানেজমেন্টে । মেডিকেল স্টুডেন্টদের জন্য নয় ।

আরেকটি বিষয় লিখেই আজকের পর্বের ইতি টানবো । সেদিন হাসপাতালের করিডোরে একজনকে আক্ষেপ করতে দেখলাম । তার রোগী নাকি হাসপাতালে বেড পাচ্ছেনা । ডাক্তাররা বড্ড বজ্জাত ! জনগনের ধারণা , রোগী বেড না পেলে সেটাও ডাক্তারের দোষ ! আরে ভাই ডাক্তারের কাজ চিকিত্‍সা দেয়া , সিট ম্যানেজমেন্ট না । আর সরকারি হাসপাতালে এমনিতেই সিট সংকট । চমেক হাসপাতালে ১২00 বেড , প্রতিদিন চিকিত্‍সা নেয় গড়ে ২০০০ রোগী । এখানে ডাক্তার কী করবে ? এই সাধারণ বিষয়গুলো যদি কেউ না বোঝে ,সেটা আসলেই কষ্টের নয় কি ?

বিষয়: বিবিধ

১৪৩৫ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

182290
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:০৪
যোদ্ধা লিখেছেন : একটু রাগী রাগী লেখা হলেও যুক্তি আছে লেখায় । ক্যারি অন ।
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৫
135046
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : হা হা
182297
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:১৩
সজল আহমেদ লিখেছেন : তা বটে সাহেব।
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৫
135047
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : বটেই তো ।
182340
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৩:৫০
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৫
135048
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : ঠেংকু ।
182370
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৬:৪৬
তহুরা লিখেছেন : ডাক্তারী পরিক্ষা
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৫
135049
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : হে হে
182468
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৪৭
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : ধন্যবাদ
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৬
135050
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ ।
182903
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:৫৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ডাক্তাররা বাইরে কেন প্রাক্টিস করে এই প্রশ্ন কেউ করেনা। প্রশ্নটা হচ্ছে হাসপাতালের ভিতর ভালভাবে চিকিৎসা করেনা কেন। অতি সাম্প্রতিক অভিজ্হতার কথা বলছি। আমার চাচা বুকের ব্যাথা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ইনটেনসিভ কেয়ারে ভর্তি হন। কিন্তু তার পরদিন পযর্ন্ত তারভাল চিকিৎসা হয়নি। আমাদের কয়েকজন আত্মিয় ডাক্তার আসার পরই চিকিৎসা হয়। আর চল্লিশ হাজার টাকা বেতনের চাকরি সবাই করেনা। প্রতিবছর সারাদেশে সরকারী বেসরকারী মিলিয়ে প্রায় ২০০০ গ্রাজুয়েট প্রকেীশলি বের হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগই চাকরি পেতে কয়েকবছর লেগে যায়। কিন্তু ডাক্তার রা তাৎক্ষনিক তাদের পেশায় যোগ দিতে পারে। উন্নত বিশ্বে এবং আমাদের দেশেও আগে এবং এখনও কোনকোন সিনিয়র ডাক্তার কয়েকজন সহকারি রাখেন। যারা একই সঙ্গে তার থেকে অভিজ্হতালাভ করে এবং তাকে সহায়তা করে। কিন্তু আমাদের দেশে ানেক সিনিয়র ডাক্তার ছাত্রকে একবারে এফসিপিএস বা এমডি পাম করাননা এই চিন্তায় যে প্রাক্টিস এর ক্ষেত্রে সে প্রতিদন্বি হয়ে উঠবে। কথাটি সত্য। এই কথাটি আমি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের একজন সহকারি অধ্যাপক এর কাছে শুনেছি। যিনি বেশ সিনিয়র এবং প্র্যাক্টিস এর দিক দিয়ে ভাল হলেও প্রমোশন পাননি। আমি এমন ডাক্তার কেউ জানি যারা এখনও ১০০-২০০ টাকা ভিজিট নিয়ে চিকিৎসা করেন এবং যথেষ্ট ভালভাবেই পরিবার নিয়ে চলেন। সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশের বেশিরভাগ ডাক্তারই রোগিদের তুলনায় নিজেদেরকে অনেক উপরের স্তরের মানুষ মনে করেন। এবং তাদের শোষন করা নিজের অধিকার বলে মনে করেন।
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৪৫
136218
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : হাসালেন ।
187140
০৫ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:৫৪
হতভাগা লিখেছেন : সরকারের উচিত পেরিফেরিতে একজন ডাক্তারের বেতন সেন্টারে থাকা একজন ডাক্তারের বেতনে নিদেন পক্ষে ৫০ গুন করা । সাথে দেশের সবচেয়ে আধুনিক ব্যবস্থাপনা ও সুবিধাদিসহ তাকে সেখানে থাকার সুবন্দোবস্ত করা ।

ফলে সে পেরিফেরিতেই থাকবে সেবার মহান ব্রত নিয়ে ।

শিক্ষা ও চিকিতসা এখন আর কোন সেবা নয় , এটা এখন ব্যবসা ।

একজন ইন্জিনিয়ার কি যাবে তার পাশের ফ্ল্যাটের ওভেন ঠিক করতে যেভাবে একজন ডাক্তার যায় ?
০৭ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:৫১
139888
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : ধন্যবাদ ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File