জামায়াত কী করে এত ভোট পেল...

লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৭:০১:০৯ সন্ধ্যা

সরকার নানাভাবে চরম কোণঠাসা করে রাখার পরেও উপজেলা নির্বাচনে কী করে জামায়াত এত ভোট পেল ? এই নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা । জামায়াতের সমর্থক-জনশক্তিরা অনেক কষ্টের ভেতর, হতাশার ভেতর পেয়েছেন আশার আলো । নতুন করে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে তাদের । অপরদিকে আওয়ামী লীগ এবং বামদলগুলো কিছুটা হতবাক । হাসানুল হক ইনু বলেছেন – জনগন কেন জামায়াতকে ভোট দিয়েছে জনগনই জানে ।

এ ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ব্যাপারটি হলো , জামায়াত এবার অনেক বেশি ‘ভাসমান ভোট’ পেয়েছে । এমনিতে জামায়াতের সমর্থকগোষ্ঠী অনেকটাই নির্দিষ্ট । সাধারণত একটা বিশাল অংকের ভোট থাকে ‘ভাসমান’ । সেই ভোট নির্ভর করে ব্যক্তির জনপ্রিয়তা, বিরোধী প্রার্থীর জনবিচ্ছিন্নতা, সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু ইত্যাদির ওপর । এইসব দিক থেকে এবার জামায়াত অনেক বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ।

একটা বিষয় হলো আওয়ামী লীগের বিরোধিতা । আওয়ামী লীগযে নাস্তিকদের সমর্থক, নবী-রাসুল (আঃ) দের গালিগালাজ করা বিকৃত মানসিকতার ব্লগারদের লালনকারী, নাস্তিক ব্লগারকে ‘শহীদ’ ঘোষণাকারী এটা এখন গ্রামের সাধারণ কৃষকও জানে । প্রত্যেক মসজিদে- মাহফিলে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে । চায়ের দোকানে আলোচনা হয়েছে । মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে এই কথা । মানুষ এটাকে ভুলতে পারেনা , হয়তো ভুলবেওনা ।

৫ইমে ২০১৩র রাতে ঢাকায়, শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের শান্তিপুর্ণ সমাবেশে বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে যে গনহত্যা চালানো হয়েছিল – সেই রক্তের দাগ মানুষের মনে রয়ে গেছে । আমি দেখেছি – সাধারণ মানুষকে কাঁদতে, আফসোস করতে । আলেম ওলামা হত্যাকারি হিসেবে আওয়ামী লীগকে চিহ্নিত করেছে দেশের মানুষ । এই দাগ হয়তো আওয়ামী লীগ সহজে মুছতে পারবে না । যে একবার ৫ই মে’র বিভীষীকাময় সে রাতের গনহত্যার ভিডিও দেখে , মুহুর্মুহু গুলির ভেতর আলেম-অলামাদের জবাইকৃত গরুর মত কাতরাতে দেখেছে সে আওয়ামী লীগকে আর ভোট দেবে না নিশ্চিত করে বলা যায় । সেটি একটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে এই নির্বাচনে ।

যেসব এলাকায় জিতেছে , প্রায় প্রতিটি এলাকায় বিরোধী দলের- বিশেষ করে জামায়াতের কেউ না কেউ আওয়ামী লীগ অথবা পুলিশের দ্বারা হত্যার শিকার হয়েছে । টিভি- পত্রিকায় সারাদিন যাই বলা হোকনা কেন , মানুষ চোখের সামনে যা দেখেছে সেটাকে তো অস্বীকার করতে পারেনা । গ্রামের মানুষ সবাই বিভিন্নভাবে পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত । শহরের মত পরস্পরবিচ্ছিন্ন নয় । একজনের সুখে দুঃখে আরেকজন মিশে যায় ।

জামায়াতের নেতাকর্মীরা অমানবিক জীবন কাটাচ্ছে । তারা নিজেদের ঘরে থাকতে পারে না , শান্তিতে দুবেলা দুমুঠো খেতে পারেনা । পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারেনা । যেসব এলাকায় জামায়াতের কোন নেতা বা সক্রিয় কর্মী আছে (প্রায় প্রত্যেক এলাকাতেই কেউ না কেউ আছে ) সেসব এলাকার প্রতিটি মানুষের চোখে আতংক । আতংকের নাম যৌথবাহিনীর অভিযান , অভিযানের নামে লুটপাট ভাংচুর শ্লীলতাহানি । আর কাউকে ধরে নিয়ে গেলে দু-একদিনের মধ্যে লাশ পাওয়ার সম্ভাবনা । যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে দাড়ি-টুপি দেখে ওলামা লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকে পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে , আওয়ামী লীগের স্থানীয় কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে । জামায়াত ভেবে তাদেরও মামলা দেয়া হয়েছে অজামিনযোগ্য ধারায় ।

এই অবস্থায় আওয়ামী লীগের বিপক্ষে মানুষ যাকেই পাবে তাকেই ভোট দেবে । সেখানে যদি নির্যাতিত জামায়াতের লোক হয় তাহলে ভোট দিয়ে অন্তত সহানুভূতি না জানানোর কোন কারণ নেই ।

আর অনেক প্রচার-অপপ্রচার থাকলেও জামায়াতের লোকেরা ব্যক্তিগত জীবনে সৎ এবং ভালোমানুষ এটা সবাই স্বীকার করেন । কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে সবজায়গাতেই কমবেশি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে ।

এছাড়া এই সময়ে জনগনের পক্ষে, ইসলামের পক্ষে রাজনৈতিক ভুমিকা পালন করায় এগিয়ে ছিল জামায়াত । প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল – তাতে জনগন অনেকাংশেই হতাশ হয়েছে ।

সেজন্য নির্ধারিত ভোটের বাইরেও এবার ভাসমান ভোট পেয়েছে জামায়াত অনেক বেশি ।

জামায়াতের জন্য যেটা চিন্তার বিষয়- সেটা হলো বেশ কিছু উপজেলায় গতবারের জামায়াত চেয়ারম্যান হেরেছে । কেন হেরেছে ? হতে পারে আগে থেকে সরকারের নজর থাকায় কারচুপি হয়েছে । অথবা জামায়াতের চেয়ারম্যান জনগনের আশা আকাংখা পুরণ করতে পারেনি ।

আসল প্রশ্ন যেটা সবার মনে ঘুরছে- সেটা হলো ‘জামায়াতের কি জনসমর্থন বেড়েছে ?’ এই প্রশ্নের সহজ উত্তর নেই, কতটুকু সমর্থন বেড়েছে এখনই সেটা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল । এটা নিশ্চিত যে – সহানুভূতি বেড়েছে । সহানুভূতির সাথে সমর্থনও বেড়েছে, এটা ভোটেই প্রমাণিত হয়েছে । তবে এই সমর্থন অনেকটা সাময়িক প্রতিক্রিয়া । এই সহানুভূতিকে প্রকৃত সমর্থনে পরিণত করতে হলে জামায়াতকে আরো গণমূখী হবার বিকল্প নেই । এছাড়াও সেজন্যে জামায়াতকে ৭১সহ তাদের সম্পর্কে যেসব প্রশ্ন আছে তা জনগনের সামনে পরিস্কার করতে হবে । দীর্ঘমেয়াদে ভাসমান সমর্থন, প্রতিক্রিয়ামূলক বা সহানুভূতিমূলক সমর্থন খুব বেশি কাজে আসবে না । জামায়াতের মত আদর্শবাদী দলের জন্য আদর্শিক সমর্থন বেশি জরুরী ।

বিষয়: রাজনীতি

১২৯১ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

180814
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৮
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : সুন্দর বিশ্লেষণ
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৬
134063
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : ধন্যবাদ ।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৬
134064
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : ধন্যবাদ ।
180824
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৫
হতভাগা লিখেছেন : সব কটাতেই জিততো ? কি লাভ হতে তাতে ? আওয়ামী লীগ কি তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতো ?

৫ বছর অপেক্ষা করা লাগবে ভায়া ।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৭
134066
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : হুম । দেখা যাক ।
180833
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:০৬
লোকমান বিন ইউসুপ লিখেছেন : ভাল বিশ্লেষন...
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৭
134067
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : ধন্যবাদ ।
180860
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:১০
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : বিএনপি যদি ভোট দিত তাহলে সবকটিতে বিএনপির কারণে সবগুলোতে জিতে নাই।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৮
134072
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : বলা মুশকিল ।
180877
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:৫৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৮
134073
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : ধন্যবাদ ।
180928
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:৪২
এম এ আলীম লিখেছেন : এটা সত্য ভাসমান ভোট গুলো এবার জামায়াতের পক্ষে যাবে।তবে এর ফলাফল সুদুরপ্রসারী।জামায়াত এর এবারের রাজপথের আপোষহীন আন্দোলন মানুষ অনেকদিন মনে রাখবে।এসব ভাসমান ভোটের ১০% যদি স্থায়ী করে ফেলতে পারে তবে তা বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের জন্য অশনিসংকেত।জামায়াতের মুল রিক্রুট হলো ছাত্রশিবির।আর বর্তমানে বাংলাদেশে আর কোন ছাত্রসংগঠনের আদর্শিক বা নৈতীক ভিত্তি নেই বললেই চলে।এতে করে সাধারন ছাত্ররা শিবিরের দিকে প্রবলভাবে ঝুকে পড়ছে।এর বেনিফিট জামায়াত পাবে আগামী দশ বা বিশ বছর পর।তবে আশার কথা হলো তৃনমুলকে শক্তিশালী করার দিকে জামায়াত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।বিগত পাঁচ বছর আগে ও এটা ছিলনা।আর ধীরে ধীরে একেকটি জেলা জামায়াতের দুর্গে পরিনত হচ্ছে।জামায়াতের সবচাইতে বড় সুবিধা হলো তাদের দলীয় ভোটার কখনও কমেনা।কারন জামায়াত যে করে সে ইহজীবনে অন্য দলে যাবেনা।তবে লেখক যে পরামর্শ দিয়েছেন এর সাথে আমি একমত।সামাজিক কর্মকান্ডের বিকল্প কিছু নেই।গরীব কৃষক মজুর শ্রমিক সবার কাছে যেমন পৌঁছতে হবে তেমনি প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে ও সমান ভাবে পৌঁছতে হবে তবেই কাংখিত সাফল্য পাবে।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৯
134074
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : ধন্যবাদ ।
180931
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:৪৯
এম এ আলীম লিখেছেন : তবে লেখকের একটা কথার সাথে আমি দ্বিমত পোষন করছি।৭১ এর চেতনা এখন আর কাজে দিবেনা।সে সময় অতীত হয়ে গেছে।এখন বাংলাদেশে মুলত ধর্মীয় ইস্যুটা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।আর যেটা আওয়ামী লীগের তৈরী।এখানে অবস্থান পরিস্কার করার কিছু নেই।অনেকবার এগুলো পরিস্কার করা হয়েছে।সেদিন ভারতীয় আগ্রাসনের ভয়ে জামায়াত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।আজকে যখন আমরা ভারতীয় আগ্রাসন দেখি এবং সামাজিক মাধ্যমে সকল তরুন এর প্রতিবাদ করে তখন অনেকে জামায়াতের একাত্তরের ভুমিকা কে সঠিক মনে করে। আর এই মুহুর্তে ভারতীয় আগ্রাসনের হাত থেকে বাঁচতে জামায়াত শিবিরের বিকল্প নেই।কারন বাকি সবাই বিক্রি হয়ে গেছে।তাই এখন সত্যিকার দেশপ্রেমিক থাকলে এই একটি দলই আছে।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩০
134075
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : আপনার সাথেও দ্বিমত ।
180969
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:৪৬
অজানা পথিক লিখেছেন : রক্ত মেধা ঘাম ঝরে যায়
সীমাহীন সেই ক্লান্তি
মুক্তির মিছিল থামবেনা আর
থাকলেও ভুল আর ভ্রান্তি

সত্যের জন্যেই আসমান জমীন আর
সত্যের জন্যেই কুল মখলুক
একদিন সত্যের জয় হবে নিশ্চিত
উজ্জল হবে মহা সত্যের মুখ।

ডাঃভাইয়া! অসাধারন বিশ্লেষন করেছেন
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩০
134076
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : ধন্যবাদ ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File