তোমরা যারা 'ও ডাক্তার' গান গাও...(৪)

লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১১:৩০:২৩ রাত

মাসুদ সাহেব আজকের মত দুঃখ আর কখনো পান নাই । তিনি ভাবছেন , এখন থেকে তিনিও স্বার্থপর হয়ে যাবেন । কারো কাছে ফি কম নিবেন না । রাত বিরাতে নিজের সুখ দুঃখ ভুলে কারো চিকিত্‍সা করারও প্রয়োজনবোধ তিনি করছেন না । এতটুকু কৃতজ্ঞতাবোধ যাদের নেই , তাদের জন্য অযথা কষ্ট করবেন কেন তিনি ? মাসুদ সাহেব গরীব পরিবারের সন্তান । অনেক কষ্টের মাঝে পড়ালেখা করেছেন । ডাক্তার হয়েছেন । সম্পূর্ণ বিনামুল্যে চিকিত্‍সাসেবা দেয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় । তাঁর ইচ্ছা ছিল তিনি যথাসম্ভব কম খরচে মানুষের চিকিত্‍সা করবেন ।

মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় মাসুদ সাহেবের এক বন্ধু তাঁর এই ইচ্ছার কথা শুনে যা বলেছিলেন তার বাস্তব প্রমাণ হাতে হাতে পেয়ে আজ সেকথা মনে পড়লো তাঁর । তাঁর বন্ধু বলেছিলেন একটা প্রবাদের কথা ।

জনগন যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন ডাক্তারকে 'বাবা' ডাকে । যেকোন মুল্যে সুস্থ হতে চায় । এরপর সুস্থ হয়ে গেলে প্রথম এক মাস খুব কৃতজ্ঞ থাকে । পথেঘাটে দেখা হলে ভক্তিতে গদগদ হয়ে পড়ে । দ্বিতীয় মাসে দেখা হলে শ্রদ্ধার সাথে সালাম দেয় । তৃতীয় মাসে দেখা হলে কোনমতে শ্রদ্ধাভক্তি বিহীন সালাম দিয়ে চলে যায় । ছয় মাসের পর দেখা হলে মুখরক্ষার খাতিরে সালাম দেয় । আর ডাক্তার চোখের আড়াল হলেই বলে 'শালা ডাক্তার । আমার কাছে ২০০ টাকা ফি নিছিলো !'

কাশেম সাহেব যেদিন রাত তিনটায় ডাঃ মাসুদকে ডেকে ঢোক গিলতে গিলতে কোনমতে তার ছেলের অসুস্থতার কথা বলছিলেন সেই রাতের কথাও মনে পড়লো । একটা জরুরী কাজ সেরে এসে তিনি ঘন্টাখানেক আগে ঘুমিয়েছিলেন মাত্র । এরই মধ্যে কাশেম সাহেব এসে ডাক দিয়েছেন । ডাঃ মাসুদ তাড়াতাড়ি উঠে ব্যাগটা নিয়ে গেলেন কাশেম সাহেবের বাসায় । ছেলেটাকে দেখে ওষুধপত্র দিলেন । এরপরেও কয়েকবার তিনি নিজে গিয়ে ছেলেটার খোঁজখবর নিয়েছেন । ফিও নিয়েছেন যথেষ্ট কম । সে মাস পাঁচেক আগের কথা । একটু আগে চায়ের দোকানে চা খেতে বসে শুনলেন কাশেম সাহেবের কথা । কাশেম সাহেব তাঁর নামে কটুক্তি করে বলেছেন , 'ডাঃ মাসুদ চিকিত্‍সার নামে মানুষ ঠকাচ্ছেন !

তিনি আমার কাছে এতটাকা বিল নিয়েছিলেন !'

আপনি যতকিছুই করেন না কেন , জনগন শেষমেষ মনে রাখবে আপনার ফি-র অংকটা । তা যত কমই হোকনা কেন ! মাসুদ সাহেব আজ সিদ্ধান্ত নিলেন , খুব গরীব হলে একেবারে বিনামুল্যে চিকিত্‍সা দেবেন আর বাকিদের ক্ষেত্রে যথাযোগ্য পরিমানেই ফি নিবেন । নো মার্সি ।

আমার এক বন্ধু একদিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলো , তাকে নাকি কে একজন বলেছে 'ডাক্তাররা রোগীকে আইসিইউ তে পাঠায় টাকার জন্য !'

শুনে তো আমার ঙঞ অবস্থা । এ কীরকম অজ্ঞতা আর অকৃতজ্ঞতা ? আইসিইউ (Intensive care unit) একটি বিশেষায়িত চিকিত্‍সাব্যবস্থা । মুমূর্ষু রোগীদের এখানে নিবিড় পরিচর্যা ও তত্বাবধানে রাখা হয় । দেহের প্রধান প্রধান অংশগুলি (Vital organ) যখন প্রায় অক্ষম হয়ে পড়ে তখন সেগুলোকে কৃত্রিম সহায়তা (Artificial support) দিয়ে সক্রিয় রাখা হয় । এর মাধ্যমে অনেকেই বলতে গেলে 'জীবন ফিরে পান' । ডাক্তারের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে রোগীর কষ্টলাঘব এবং যথাসম্ভব দ্রুত রোগ নিরাময় । স্বভাবতই এখানে খরচ কিছুটা বেশি হয় । এই অতিরিক্ত খরচটা কিন্তু ডাক্তারের পকেটে যায়না । ডাক্তার তার নির্দিষ্ট বেতন-ফি টাই পান । এখন কেউ যদি বলে অতিরিক্ত টাকার জন্য 'ডাক্তার' রোগীকে আইসিইউ তে পাঠান , এর চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতা আর কী হতে পারে ?

বিষয়: বিবিধ

১১২৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

187136
০৫ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:৪৩
হতভাগা লিখেছেন : আপনার শেষ প্যারার ব্যাপারে কঠিনভাবে দ্বিমত পোষন করছি ।

ঢাকারই এক বিখ্যাত হসপিটাল এই কাজ করে । আমার ছোট ভাইয়ের নবজাত শিশুকে শুধু মাত্র ক্যানুলা করার জন্য N.I.C.U. তে রাখতে চেয়েছিল ।

ঐ একই হসপিটাল সামান্য হার্নিয়া অপারেশনের প্যাশেন্ট আমার মাকে অপারেশনের পর ওরাল করে দেবার পরও আই.ভি. স্যালাইন চালিয়ে যাচ্ছিল । ফলে উনার মারাত্মক শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গিয়েছিল । ডিউটি ডক্টর আর কনসালটেন্টরা হিমশিম খাচ্ছিল কেমনে কি ? সার্জন তো বলেই দিয়েছেন যে , আমার অপারেশনে তো কোন সমস্যা হয় নাই । এখন এগুলো কিভাবে হচ্ছে ?

পরে একজন ইন্ডিয়ান ডক্টর এসে ব্যাপারটা ধরে ফেলেন ।
০৭ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:৫৩
139891
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : হতে পারে ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File