তোমরা যারা 'ও ডাক্তার' গান গাও...(৩)
লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১২:১৬:০১ রাত
নাপিত আর ডাক্তার একই তো নয়,
কিন্তু দুটোই আজ প্রফেশান !
বুঝতেই পারছেন ,খুবই জনপ্রিয় একটি গানের দুটি লাইনের প্যারোডি । পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত গায়ক নচিকেতার 'সামাজিক গঠনমুলক' হিসেবে খ্যাত গানগুলির একটি হলো 'ও ডাক্তার' গানটি । বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় । শুনতেও খারাপ লাগেনা বটে ! আমাদের মহান জনগনের কাছে এই গানটি একটি মোক্ষম অস্ত্র । যতজনের সাথে মিশেছি তার একটা বৃহত্ অংশ উপদেশ দিতে ভোলেননি 'ডাক্তারি পড়ছো , ভালো । এখনতো ডাক্তার আর কসাইর মধ্যে কোন পার্থক্য নাই । তুমি যেন ওরকম না হও ।' কেউ কেউ আবার গানটি হেড়ে গলায় গেয়ে শোনানোর চেষ্টা করে । তারা হয়তো এতেই আনন্দ পায় । হায়রে জনগন ! কেযে কিসে আনন্দ পায় বোঝা মুশকিল । মুচকি হেসে বলি , 'ঠিক আছে । ভবিষ্যতে কখনো জ্বর হলে আমাকে আর ফোন করিয়েন না । কসাইকেই করিয়েন ।' তখন আবার মুখটা মলিন করে বলেন , 'না আমি আসলে ওটা বোঝাতে চাইনি !' যাকগে , উনারা যে কী বোঝেন আর কীইবা বোঝাতে চান সেটা বোঝার চেষ্টা করে মাথায় অতিরিক্ত বোঝা চাপানোর কোন যৌক্তিকতা আমি এইমুহূর্তে দেখছি না ।
যাহোক , গোড়ার কথায় ফিরে যাই ।
কসাই এবং নাপিতরা অনেক আগে থেকেই ধারালো বস্তু ব্যবহার করে । আসলে তাদের কাজটাই এমন যে ধারালো উপকরণই প্রধানত দরকার ।
একসময় , চিকিত্সা ছিল শাস্ত্রের পর্যায়ে । চিকিত্সাবিদ্যা তখনো বিজ্ঞানের পর্যায়ে উন্নীত হয়নি । তখনকার দিনগুলোতে এই কসাই আর নাপিতরা ছিল জনগনের জন্য 'বিশিষ্ট সার্জন' ! জনগন যেসব সমস্যাকে মনে করত 'কেটে ফেলার মত' সেগুলোর জন্য নাপিতের দোকানে যেত । যেমন , ফোড়া হলে নাপিত সেটা ছিদ্র করে পুজ বের করে দিত ইত্যাদি । এরপর আবিস্কৃত হলো মানবদেহের বিভিন্ন কার্যকলাপের গতিপ্রকৃতি । আবিস্কৃত হলো রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া । Artery , vein এর গতিপথ । তখনো পর্যন্ত সেই 'নাপিতীয়' চিকিত্সাতেই জনগন অভ্যস্ত ছিলো । এতে করে অনেকেই হয়তো সাময়িকভাবে সুস্থ হতো । কিন্তু পরবর্তীতে Secondary এবং opportunistic infection হয়ে Septicaemia র মত ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে লাগলো । শেষমেষ ডাক্তাররাই ভরসা ।
এক অঞ্চলে একজন নাপিত খুব দক্ষ , নিষ্কম্প হাতে কাটাকুটির কাজ করতো । যথেষ্ট খ্যাতি পেয়েছিল সে । লোকজন ডাক্তারের কাছে না গিয়ে ঐ নাপিতের কাছেই যাওয়া অব্যাহত রাখলো । ভালোর চেয়ে খারাপই হচ্ছিল বেশি । একদিন ডাক্তার নাপিতকে বললেন , তুমিতো অনেক ভালো কাজ কর । তুমি মাঝে মাঝে আমার কাছে এসে মানবদেহ নিয়ে কিছু কিছু শিখে যেও । আমিতো অনেক পড়াশোনা করেছি । জানাশোনা থাকলে তুমি আরো ভালোভাবে কাজ করতে পারবে । নাপিত আনন্দিত হয়ে তাই করতে লাগলো । সে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে এসে শিক্ষা নিতে লাগলো । ডাক্তার তাকে রক্তনালী (Artery) ও স্নায়ুর (Nerve) গতিপথ সম্পর্কে জানালেন । 'দেখ , এদিক দিয়ে গেছে এই রক্তনালী আর এই স্নায়ু । সাবধানে কাজ করিও । এই স্নায়ু কাটা গেলে এই হাতটা অকেজো (Paralysed) হয়ে যাবে ।'
এসব জানার আগে নাপিতের হাত কাঁপত না । জানার পর থেকে নাপিত কোন কিছু ঠিকমত কাটতে পারলো না । তার হাত কাঁপতে লাগলো । এখানে কাটবো , যদি নার্ভ কেটে যায় ! এরপর থেকে রোগী আসলে নাপিত ডাক্তারের কাছেই পাঠিয়ে দিত । এভাবেই অবসান হলো কসাই ও নাপিতীয় চিকিত্সাব্যবস্থার !
নাপিতরা এখনো আছে । থাকা দরকারও । মাস দুয়েকের অনুশীলনে শেখা বিদ্যায় কাচি খচখচ করে অনেক নাপিত জীবনরক্ষাকারী ডাক্তারের চেয়েও বেশি বিল পেয়ে যায় ।(উদাহরণ হিসেবে হাবিবস এর কথা বলা যায় , সেখানে হাজার টাকার বিনিময়ে চুল কাটানো হয় !) কেউ প্রশ্ন করেনা , চুল কেটে এত টাকা দিব কেন ? শুধু বছরের পর বছর পড়াশোনা আর দিনরাত খেটে চিকিত্সা করা ডাক্তারের বেলায়ই যতসব । নাপিত তার কাচি দিয়ে চুল কাটে , আর ডাক্তারের কাচি আপনার জীবন বাঁচায় । একজন সন্ত্রাসী কিংবা কসাইর ছুরি মানুষের জীবন নাশ করে অন্যদিকে ডাক্তারও ছুরি ব্যবহার করে কিন্তু সেটা জীবন রক্ষা করে । জনগনের চোখ আজো নাপিত আর ডাক্তারের মধ্যেকার পার্থক্য বুঝতে শেখেনি । দুর্ভাগ্যই বটে ।
দুঃখের সাথে তাই বলতে হয়-
'নাপিত আর ডাক্তার একই তো নয় ,
কিন্তু দুটোই আজ প্রফেশান !!!'
বিষয়: বিবিধ
১২৬৭ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এ পেশার সাথে সেবা জড়িত আছে বোধ হয়, তাই সে দিকটাও একটু খেয়াল রাখা উচিৎ নয়কি? মাইণ্ড না করলে খুশী হব৷ সবাই অবশ্যই কসাই বা নাপিত নয়, আবার অনেকের ব্যবহারেই তাকে বলতে হয়, রাগে ক্ষোভে পড়ে৷ ধন্যবাদ৷
গুড পয়েন্ট ।
০ Cats Eye তে যান , একটা প্যান্ট ২.৫ থেকে ৩ হাজার টাকা । শার্ট ২-২.৫ হাজার টাকা । ওখানে Fixed Price লেখা থাকে । তাই এত পশ জায়গায় এসে মান সন্মান খোয়ানোর ভয়ে সেখানে কেউ দরদাম করে না । যেটা ডাক্তারের ফিস দেবার ব্যাপারে এবং বিভিন্ন টেস্টে টাকা দেবার সময় করে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন