ক্রসফায়ার ও একপেশে মানবতাঃ মতি গংদের সেকাল একাল

লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ২৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:৩৩:০২ সকাল

প্রথম যখন র্যাফব ক্রসফায়ার শুরু করে , তখন সব পত্র পত্রিকাই এর প্রতিবাদ করেছিল । প্রশ্ন তুলেছিল ।

গতবছর যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যাকান্ডের পর তার হত্যাকারীকে ক্রসফায়ারে দেয়া হয় । এর সমালোচনা করে প্রথম আলো লিখেছিল-

‘প্রতিবারের মতো এবারও র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যা ব) ক্রসফায়ারের যে গল্প সাজিয়েছে, তা জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না। সরকারের একজন মন্ত্রী, যাঁর কোনো দপ্তর নেই, তিনিও গতকাল এক আলোচনা সভায় ঘটনাটিকে র্যা বের নাটক বলে অভিহিত করেছেন। মন্ত্রীর চোখে যখন এটি নাটক, তখন সাধারণ মানুষের কাছে কী, তা সহজেই অনুমান করা যায়।

গত বুধবার রাতে গুলশানের একটি বিপণিবিতানের সামনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন যুবলীগের নেতা রিয়াজুল হক মিল্কি । র্যা বের দাবি অনুযায়ী, হত্যার দায়ে অভিযুক্ত এস এম জাহিদ সিদ্দিকীকে তাদের সদস্যরা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে উত্তরা থেকে গুলশান থানায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে তাঁর সহযোগীরা তাঁকে ছিনিয়ে নিতে র্যােবের গাড়িতে হামলা চালায় এবং দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে সিদ্দিকীসহ দুজন নিহত হন ।

এ ঘটনা যেসব প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে তা হলো, হত্যার প্রতিকার কি হত্যাকারীকে ধরে নিয়ে হত্যা করা ? তাহলে দেশে আইন-আদালতের প্রয়োজন কী ? অভিযুক্ত ব্যক্তি যত ঘৃণ্য অপরাধই করুক না কেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার তাঁর আছে।...

...হত্যার বিচারের পরিবর্তে এভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটতে থাকলে মানুষ প্রচলিত বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে, যা একটি সভ্য দেশে কাম্য হতে পারে না । আমরা তো সেই দাঁতের বদলে দাঁত এবং প্রাণের বদলে প্রাণ কেড়ে নেওয়ার মধ্যযুগে ফিরে যেতে পারি না । …

...আমরা রিয়াজুল হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সেই সঙ্গে সহযোগীসহ রিয়াজুল হত্যার মূল আসামি জাহিদের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হওয়ার ঘটনারও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি’’ ।
( আগস্ট ০২, ২০১৩)

কিন্ত এখন যেন ক্রসফায়ার স্বাভাবিক, বৈধ !

আজ যখন বিরোধীদলের কর্মী হবার অপরাধে (!) নির্বিচারে ক্রসফায়ারে দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে- তখন ‘প্রথম আলো’সহ তথাকথিত মানবাধিকারের হাতিঘোড়ারা সবাই ভুলে গেছে – ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি যত ঘৃণ্য অপরাধই করুক না কেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার তাঁর আছে’ ।

সারাদেশে একের পর এক বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । সকালে মাঠে ঘাটে খালে বিলে পাওয়া যাচ্ছে তাদের গুলিবিদ্ধ লাশ । পুলিশ-র্যা ব এবং পত্রিকার ভাষ্য হচ্ছে ‘বন্দুকযুদ্ধে নিহত’ ! যারা হত্যার শিকার হচ্ছে তাদের নামে কোন অস্ত্র মামলা নেই , বন্দুকযুদ্ধ হতে উদ্ধার হয়না কোন বন্দুক , বন্দুকযুদ্ধে কেউ আহত হয়না – শুধু ধরে নিয়ে যাওয়া সেই হতভাগা হয় ‘নিহত’ ! বন্দুকযুদ্ধ হয় ধরে নিয়ে যাওয়া খাঁচায় বন্দী মানুষের সাথে ! কী নির্মম তামাশা !

জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের প্রাণ ঝরছে বেহিসেব । প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে কয়েকজনের হত্যার খবর । এক সপ্তাহে অর্ধশতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে । গতকালও সাতক্ষীরায় ছাত্রদল নেতা খুন হয়েছে । প্রথম আলোর সংবাদ শিরোনাম ছিল -

‘সাতক্ষীরায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ছাত্রদল নেতা নিহত’

তারা সংবাদের শিরোনামে কোন বিস্ময়সূচক চিহ্ন ব্যবহার করেনি । বুঝাতে চেয়েছে- এটাই সঠিক ।

আজ কেউ প্রশ্ন তুলছে না – ‘তাহলে দেশে আইন-আদালতের প্রয়োজন কী ?’

তাদের মানবতা বড়ই একপেশে । খুনী সন্ত্রাসীকে মারলেও ওরা প্রতিবাদ করে, কিন্তু নিরীহ বিরোধীদলের কর্মী হত্যায় তারা উল্লাসে মাতে ।

‘প্রথম আলো’ লিখেছিল (অন্য পত্রিকাগুলোও তথৈবচ) – ‘বিচারের পরিবর্তে এভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটতে থাকলে মানুষ প্রচলিত বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে, যা একটি সভ্য দেশে কাম্য হতে পারে না । আমরা তো সেই দাঁতের বদলে দাঁত এবং প্রাণের বদলে প্রাণ কেড়ে নেওয়ার মধ্যযুগে ফিরে যেতে পারি না’ ।

মধ্যযুগ পেরিয়ে আজ বাংলাদেশ ফিরে গেছে আদিম যুগে । দাঁতের বদলে নয় , প্রাণের বদলে নয়- কোনকিছুর বদলে নয়- ইচ্ছেমত কেড়ে নেয়া হচ্ছে তাজা প্রাণ ।

আমরা মধ্যযুগে ফিরে যেতে পারিনা , আদিম যুগে নির্দ্বিধায় ফিরে যেতে পারি !

বিষয়: বিবিধ

৮৯১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

168853
২৮ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৫৮
প্রিন্সিপাল লিখেছেন : আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রক্ষা করুন।
২৮ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২২
122872
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : আমীন ।
২৮ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২২
122873
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : আমীন ।
169423
২৯ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:৫০
সালাম বাংলাদেশ লিখেছেন : মতি জানোয়ার গং একেকটা বাস্টার্ড,

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File