তোমরা যারা 'ও ডাক্তার' গান গাও...(২)
লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ২১ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:৪৮:১০ দুপুর
আগের পোস্টে কথা বলছিলাম ডাক্তারের ফি নিয়ে । সেখানেই আরেকটি বিষয় উঠে এসেছিল যে ডাক্তাররা রোগী দেখায় খুব কম সময় দেন ।
এখানেই মানুষের বাস্তববিমুখতা ও দ্বৈত মনোভাব প্রকাশ পায় । বাস্তবতা হচ্ছে , সরকারিভাবে চিকিৎসাসেবা এতই অপ্রতুল যে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ক্লিনিক ও হাসপাতাল গড়ে উঠলেও রোগীর ঠাই দেয়া যাচ্ছে না । ডাক্তারদের চেম্বারেও সিরিয়াল নিয়ে টানাটানি । (এই সুযোগে ডাক্তার যেমন তেমন ডাক্তারের পিএস এর ভাবটা উঠে যায় আসমানে !) এখন ডাক্তার যদি প্রতিজন রোগীর জন্য আধাঘন্টা করে সময় দেন (যদিও তা অবাস্তব ও অপ্রয়োজনীয়) তাহলে অনেক পেশেন্ট চিকিত্সা না পেয়েই ফিরে যেতে বাধ্য হবে । ডাক্তার তো আর সারাদিন রাত রোগী দেখবেন না । তারও তো একটা ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু আছে নাকি ? যাহোক পেশেন্ট নিজে চান ডাক্তার তাকে অনেকক্ষণ সময় দিন । আবার যখন ডাক্তার প্রয়োজনবশত একজন পেশেন্টকে বেশি সময় দেন তখন অপেক্ষায় থাকা অন্য পেশেন্ট ও এটেনড্যান্টরা অধৈর্য হয়ে ওঠেন । তারা ক্ষেপে যান । 'কি ভুয়া ডাক্তারের কাছে আসলাম , এতক্ষণ সময় লাগে একজন রোগী দেখতে !' বুঝুন ঠেলা । কীরকম দ্বৈত মনোভাব । ওনারা যে কী চান নিজেরাই বোঝেন না ।
আর প্রকৃত বাস্তবতাটা হলো ১৫-২০ বছর ধরে একটা বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে তারপর একজন ডাক্তার একটা বিষয়ের ওপর স্পেশালিস্ট হন । এসময়ের মধ্যে তাকে একইরকম হাজার হাজার পেশেন্ট নিয়ে কাজ করতে হয়েছে । এমবিবিএস কমপ্লিট করতে কমপক্ষে ৬.৫ বছর , এফসিপিএস শেষ করতে কমপক্ষে ৬ বছর , এমডি করতে কমপক্ষে ৬ বছর । এত সময় ব্যয় করেছে তো এজন্যই যেন অল্প সময়ে ট্রিটমেন্ট দিতে পারেন । এভাবে এত পড়াশোনা , এত পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট করার পরও যদি একজন ডাক্তার অল্প সময়ে পেশেন্ট ম্যানেজ করতে না পারেন তাহলে ঐ ডাক্তারের ক্লিনিক্যাল আই এবং শিক্ষাব্যবস্থার গলদ নিয়েই প্রশ্ন তুলতে হবে । Clinical eye হলো একজন ডাক্তারের সন্ধানী চোখ । অনেক প্র্যাকটিসের ফলে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় তার সাথে জ্ঞান মিলিয়ে তৈরি করে ক্লিনিক্যাল আই । এতে একজন ডাক্তার রোগীর Appearance , attitude থেকেই অনেকাংশে ডায়াগনোসিস এর কাছাকাছি পৌঁছে যান । যার ক্লিনিকাল আই যত বেশি প্রখর , তিনি ততোবেশি দক্ষ চিকিত্সক বলে গন্য হবেন । তার ডায়াগনোসিস হবে তত দ্রুত ও নির্ভুল ।
পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্রের এ বিষয়ে ব্যাপক খ্যাতি ছিল । আমাদের স্কুলের বাংলা স্যার বলতেন 'ডাক্তার হলে বিধান চন্দ্রের মত হবি '। তিনি নাকি একজন রোগীকে একনজর দেখেই ডায়াগনোসিস করে ফেলতে পারতেন । ওনার ভাগ্য ভালো যে তাঁকে এই সময়ে বাংলাদেশে প্র্যাকটিস করতে হচ্ছে না । তিনি যদি এই সময় রোগীকে একনজর দেখেই প্রেসক্রিপশন লিখে দিতেন , তাহলে জনগন কীযে বলতো আল্লাহ মালুম !
বিষয়: বিবিধ
১৩১৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর কয় পর্ব আসবে ভাই?
বোঝা উচিত যে , উনার সিরিয়াল পেতে পেতে যদি ২ মাস লেগে যায় সে সময়ে কি তার রোগ আজকের অবস্থানে থাকবে ?
একজন রোগী দেখতে একজন ডাক্তারের ১০-১২ মিনিট এর বেশী লাগার কথা নয় । বেশী সময় লাগে খাজুইরা আলাপ করলে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন