তোমরা যারা 'ও ডাক্তার' গান গাও...(১)

লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ১৪ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:১০:৪২ সকাল

ফ্যাক্টরি অচল । কয়েকদিন থেকে মেশিন চলছে না । বিকল মেশিন কোনভাবেই সারাতে পারছে না ফ্যাক্টরির লোকেরা । উৎপাদন বন্ধ । বড় বড় অর্ডার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে । এভাবে চলতে থাকলে দেউলিয়া হয়ে যাবে কোম্পানি । ব্যাংকের লোন পরিশোধ করা যাবে না । শ্রমিকরা বিক্ষোভ করবে । বাধ্য হয়ে ফ্যাক্টরির ম্যানেজার একজন বিশেষজ্ঞ ইন্জিনিয়ার ডাকলেন । বিশেষজ্ঞ ভালোভাবে সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখলেন একটি গুরুত্বপুর্ণ জায়গায় একটি পেরেক খুলে গেছে । তিনি কর্মচারীদের দেখিয়ে দিলেন এবং সেখানে পেরেকটি মেরে দিতে বললেন ।

যথাস্থানে পেরেকটি লাগানোর পরই আবারও মেশিন চালু হলো ।পরদিন বিল পাঠানো হলো ১ লাখ টাকা । মালিক বেঁকে বসলেন । মাত্র একটা পেরেক ঠুকানোর জন্য এক লাখ টাকা ! তিনি বিল ফেরত পাঠালেন ।পরদিন বিশেষজ্ঞ নতুন করে বিল পাঠালেন । পেরেক ঠুকানো বাবদ ১ টাকা । আর পেরেক কোথায় লাগাতে হবে সেটা খুঁজে বের করা বাবদ ৯৯৯৯৯ টাকা !

এবার ফ্যাক্টরি মালিক কোন উত্তর খুঁজে পেলেন না । পোস্টের শিরোনামের সাথে গল্পটি মিলিয়ে বুদ্ধিমান পাঠক এতক্ষণে হয়তো আসল কথাটি বুঝে ফেলেছেন । ঠিকই ধরেছেন , আজকের বিষয় ডাক্তারের ফি । ডাক্তারের ফি নিয়ে অনেককেই উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায় । এদের মধ্যে 'বুঝদার' লোকের সংখ্যাও কম নয় । নিজে কোটি টাকার মালিক , ব্যবসায় আসল দামের দ্বিগুন মূল্যে জিনিসপত্র বিক্রি করে মার্সিডিজ বেন্জে ঘোরেন । ডাক্তারের ফি টা দেয়ার বেলায়ই কেবল তার পকেটে টান পড়ে ! এইতো সেদিন রেস্টুরেন্টে বসে একজন ডাক্তারদের চৌদ্দ দুগুনে আঠাশ গোষ্ঠীর কুষ্ঠি উদ্ধার করলেন । 'ওনাদের' মহা ক্ষোভ । 'ওমুক কার্ডিওলজিস্ট এর কাছে গেলাম , পালস আর ব্লাড প্রেসার মেপে ইসিজিটা দেখে ১০ মিনিটের মধ্যে কিনা কি লিখে ছেড়ে দিলো । বিল নিলো ৫০০ টাকা । ডাহা জোচ্চুরি !'

ওনাদের এটুকু বলা প্রয়োজন মনে করছি - কী দরকার ছিলো আপনার কার্ডিওলজিস্টের কাছে যাবার ? মুদি দোকানে গেলেই পারতেন ! দোকানদার আপনাকে দশঘন্টা ধরে চেকআপ করে লজেন্স দিতো , মজা করে সেটাই খেতেন !

এই দলকেই আবার দেখা যায় মেন্জ ক্লাবের শার্ট আর ক্যাটস আইর ক্যাপ মহানন্দে কিনছে । শৈল্পিক থেকে পান্জাবি । মহিলারা কে ক্রাফট থেকে ওয়ান টু থ্রিপিছ কিনছে । যেটার উৎপাদন খরচ সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা । সেটাই বিনা প্রশ্নে কিনছেন ওনারা ১৫০০ টাকায় । শোরুম থেকে বের হয়ে আফসোস করেন । ইস্ নতুন ক্যাটালগে একটা চরম ডিজাইন আসছে । আর কিছু টাকা থাকলে ওটাও নিতাম !'

ওনাদের' জন্য আর বেশি কিছু বলতে চাই না । শুধু এটুকু বলবো , যে ছেলেটা আজকে কার্ডিওলজিস্ট হয়েছে সে এমনি এমনি হয়নি । আপনি যখন বন্ধুদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা মেরেছেন তখন সে হাসপাতালে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে । আপনি যখন মুভি দেখে সময় কাটিয়েছেন , তখন তার সময় কেটেছে বইয়ের পাতায় আর অপারেশন থিয়েটারে । এমনি করেই সে জীবনের অনেক স্বাদ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে কমপক্ষে ৪০ বছর নষ্ট করেছে । এমবিবিএস করার পরও এমডি , এফসিপিএস, এমআরসিপি ইত্যাদি ডিগ্রি নিয়েছে । এখনো দিনেরাতে সেবা দিয়ে যাচ্ছে মানুষকে ।

১০০০ টাকায় বাফেট লাঞ্চ করতে পারেন, আর সেই খাওয়া খেয়ে জীবন বিপন্ন হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে তার অর্ধেকটা দিতেও বুকে টান লাগে !

বিষয়: বিবিধ

১২৯৭ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

162447
১৪ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৫০
অনুরণন লিখেছেন : আপনি যখন ডাক্তারি পড়েছিলেন তখন কি প্রকৃত খরচ দিয়ে পড়েছিলেন, নাকি দেশের মানুষের টাকায় সাবসিডাইজড রেটে পে করেছিলেন?

ঠিক কতভাগ সিনিয়র ডাক্তার সরকারী হাঁসপাতালে যতটুকু সময় দেয়ার কথা ততটুকু দেন।

কতভাগ সদ্য পাশ করা ডাক্তার মফস্বলে যেখানে পোষ্টিং সেখানে ফুলটাইম সময় দেন, আর কতভাগ নানা ভাবে ফাঁকি দিয়ে কোর্স করার নামে ঢাকায় বসে যে ট্যাক্সপেয়ারদের টাকায় তার পড়াশোনা তাদের কে বঞ্চিত করেন।

২১ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪
119494
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : সেই কাসুন্দি ? ট্যাক্সের টাকা ? হাসালেন ।
২১ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৪১
119672
অনুরণন লিখেছেন : হাসাটাই স্বাভাবিক, কাসুন্দি মনে করাটা আরো স্বাভাবিক, সুবিধাভোগী যখন আপনারা।
162544
১৪ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৫৪
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনি ডাক্তার কিনা আমার জানা নেই, যাই হন একটা প্রশ্ন করি; যারা মর্সিডিজ চোখেও দেখেনি এমন কি ভ্যান রিক্সা চড়ারও সামর্থ নেই তাদের কাছে কি পেরেক ঠোঁকার এক টাকাতেই সন্তুষ্ট হন না বাকী ৯৯৯৯ টাকাও যোগ করেন?
২১ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫
119495
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : মনে হচ্ছে আপনার কোন অভিজ্ঞতাই নাই এই ব্যাপারে ।
165575
২১ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:২৯
হতভাগা লিখেছেন : ০ অনেক লোক আছে দেশের বাইরে নিজের কোন আত্মীয়কে চিকিতসা করাতে নিয়ে গেলে নিজের চেক আপটাও সেখান থেকে করিয়ে নেয় ।

কিন্তু দেশে আসার পর যদি কোন ডাক্তার লিপিড প্রোফাইল করতে দেয় তখন টাকার জন্য হাহাকার করে ।

এইসব লোকেরা দেখবেন মামলার সময় কে কত বড় উকিল আনতে পারে , কে কেমন টাকা খরচ করাতে পারে তার একটা প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয় । ডাক্তারের চিকিতসা ফি দিতে গিয়ে বা টেস্ট করাতে গিয়েই তারা পকেটের কথা চিন্তা করে ।

মামলার সময় এক একজন হয়ে যায় সালমান এফ রহমান , ডাক্তারের কাছে এলে হয়ে যায় একেবারে দিন মজুর ।

কোন কোন পাবলিক এমনও আছে যে কোন নামকরা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখিয়ে সোসাইটিতে ভাব মারতে খুব পছন্দ করেছে ।

নামকরা একজন নিউরোলজিস্টের সিরিয়াল পেতে ২-৩ মাস অপেক্ষা করতে হয় । তাকে দেখিয়ে খুব ভাব মরা হয় যে উনাকে দেখিয়েছি ।

আশে পাশের অনেকেই তখন ঈর্ষা অনুভব করে যে , আহ হারে আমারও যদি ঐ ডাক্তারকে দেখানোর মত একটা রোগ থাকতো! আমারও ঐ নিউরোলজিস্টকে দেখানো চাই । কিন্তু শরীর ভাল হলেও তার সমাজে একটা স্ট্যাটাস আনতে ঐ নিউরোলজিস্টকে দেখাতেই হবে । এক্ষেত্রে ঘুমের সমস্যা তার কাছে সবচেয়ে বড় সুযোগ যেটা আদৈ তার নেই ।

অনেকে আবার হার্টের বাই পাস অপারেশন করানোর পর খুব ভাব মেরে বলে যে বাইপাস অপারেশন করিয়েছি । ভাব খানা এমন যে হার্টের রোগ +বাই পাস করানো একটা আভিজাত্যের , অ্যারিস্ট্রোকেসীর বহিঃপ্রকাশ ।
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:৪৬
120192
মুহসিন আব্দুল্লাহ লিখেছেন : বাস্তব কথা বলেছেন ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File