গল্পঃ আন্তর্জাতিক বেহায়া প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সাফল্য !
লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ১৯ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:১৬:১১ সকাল
১.
কাঁদো কাঁদো মুখে ঘরে ঢুকলেন রওশন এরশাদ । লেজেহুমু এরশাদ তখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রুপচর্চা করছিলেন । ঘরে ঢুকেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেললেন রওশন । কিছু বুঝতে না পেরে এরশাদ জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই সাত সকালে কী কান্নাকাটি শুরু করলে ? কী হয়েছে বলবে তো !’
কাঁদতে কাঁদতে রওশন এরশাদ বললেন, ‘কুকুরটাকে সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না । দেখোনা একটু খুঁজে প্লিজ, কোথায় গেল আমার ‘ডগি’...হু হু হু...’
২.
প্রতিবছরের মত এবারো আন্তর্জাতিক পশু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সুন্দরবনে । অনেক দিন আগেই এ সম্মেলনের তারিখ সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল । সে অনুযায়ী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি পশুরা উপস্থিত হয়েছে । রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে লুকিয়ে তারা চলে এসেছে সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য । নানা দেশের নানা পশু । বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার অনেক বেশি পশু এসেছে । এত পশু দেখে তো ‘ডগি’র চক্ষু চড়কগাছ ! এবারই ডগি প্রথম আন্তর্জাতিক পশু সংঘের সদস্যপদ পেয়েছে ।
সম্মেলনের তারিখ তাকেও আগেই জানানো হয়েছিল । কিন্তু সে তো থাকে ঢাকায় । মেমসাহেব তাকে ছাড়া থাকতেই পারে না ! কীভাবে সম্মেলনে আসবে তা নিয়ে খুব চিন্তিত ছিল সে । কিন্তু শেষমেষ উপায় একটা হয়েই গেল । মেমসাহেব ঢাকার বাইরে- রংপুরে গিয়েছিলেন । এবার কী কারণে যেন ডগিকে নিয়ে যাননি তিনি । এইতো সুযোগ । জানালা খুলে সন্ধ্যাবেলাতেই চম্পট দিয়েছে ডগি । তারপর বিভিন্নভাবে সে ঠিকঠিক পৌঁছে গেছে সম্মেলন শুরুর কিছুক্ষণ আগে ।
এবারের সম্মেলনে এত বেশি পশু আসার কারণটা জানতে পারলো ডগি । এবার বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার মত এখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পদক দেয়া হবে । বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতাও এর মধ্যে আছে । এই সুযোগে অনেক সুন্দরী কুত্তিকেও দেখা যাবে, মন্দ কী !
সম্মেলন শুরু হয়ে গেল । একে একে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতে লাগলো । বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতা, বিশ্ব দৌড়বিদ প্রতিযোগিতা , শ্রেষ্ঠ খাদক প্রতিযোগিতা, সাদা মনের পশু প্রতিযোগিতা । দুঃখের বিষয় এর কোনটাতেই কোন কুকুর পদক পেলনা । কুকুর জাতির জন্য এটা খুবই অপমানজনক মনে হলো ডগির কাছে । তারচেয়েও বড় ব্যাপার হলো- বাংলাদেশের কেউই কোন পদক পেলনা । বাংলাদেশের প্রতিযোগিরা সবাই খুব বিমর্ষ হয়ে আছে । তাদের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের আকাশ বাতাস ।
মাইকে ঘোষিত হলো- এবারের প্রদেয় পদকের নাম ‘বিশ্ব বেহায়া পদক’ । এই পর্বে বিজয়ীকে ‘মিস্টার বিশ্ববেহায়া’ হিসেবে বিশেষ সম্মান দেয়া হবে ।
প্রস্তাবনায় বলা হলো- আমরা পশু । হায়া বা লজ্জা জিনিসটা আমাদের মানায় না । আমাদের ভেতর থাকতে হবে পশুসুলভ মনোবৃত্তি । আমাদের ভেতর পশুসুলভ আচার আচরণ তৈরির জন্য আমাদের হায়া বিসর্জন দিতে হবে । যার হায়া যত কম, তার মাঝে ততবেশি পশুত্ব প্রকাশিত হয় । আর এই বিষয়টিকে উৎসাহিত করার জন্য, নতুন প্রজন্মের কাছে একে মহিমান্বিত করে তোলার জন্য আমাদের এই উদ্যোগ ।
পশুগন, আপনারা জানেন মানুষেরা ‘নোবেল পদক’ দেয় । তাতে তারা নানারকম কারসাজি করে । কিন্তু আমরা কোন দুইনম্বরি করবো না । আমরা ঠিক ঠিক সবচেয়ে যোগ্য পশুকেই এই পুরস্কারে ভূষিত করতে চাই । আপনারা আপনাদের যুক্তি তুলে ধরুন, কাকে এই ‘বিশ্ববেহায়া পদক’ দেয়া উচিৎ হবে ।
ডগি এইবার একটা সম্ভাবনা দেখতে পেল । কিন্তু দেখা গেল শুকরেরা তাদের পক্ষে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করছে । বেশিরভাগ পশু তৃণভোজী অথবা মাংসাশী । কিন্তু আমরা শুকরের জাত বিষ্ঠা খাই । যদিও মানুষের বিষ্ঠাই আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রিয়, কিন্তু অন্য প্রাণীর বিষ্ঠাও আমরা খাই । আর সবচেয়ে বড় কথা – এই ‘শুওর’ শব্দটা মানুষ গালি হিসেবে ব্যবহার করছে । যদি আমাদের হায়া থাকতো তাহলে কি মানুষ এই শুওর শব্দটা গালি হিসেবে ব্যবহার করতো ? আর আমরা কি হায়া থাকলে এর প্রতিবাদ করতাম না ?
শুওরদের বক্তব্য শেষ হলে এক তাগড়া জোয়ান কুকুর উঠে দাঁড়ালো । তেজোদ্দীপ্ত কন্ঠে ঘেউ ঘেউ করে সে এর প্রতিবাদ জানালো । তার বক্তব্য হচ্ছে- মানুষের বিষ্ঠা আমরাও খাই । এছাড়া আমরা সারাদিন শত শত মানুষের সামনে পোষাক ছাড়াই ঘুরে বেড়াই । কেউ কি আমাদের পরণে প্যান্ট দেখেছে ? অথচ আমরা চাইলে হাজার হাজার প্যান্ট চুরি করে পরতে পারতাম । শুধু তাই নয়, আমরা জনগনের সামনে প্রকাশ্যে মূত্রত্যাগ করি ।
আর সবচেয়ে বড় কথা ভাদ্র মাসে আমরা প্রকাশ্য রাস্তা ঘাটে কী করি সেটা আপনারা সবাই জানেন । সুতরাং এই পদক আমাদেরই প্রাপ্য ।
পুরো সমাবেশ স্থল ঘেউ ঘেউ শব্দে মুখর হয়ে উঠলো । সবাই সমর্থন দিল । এক বৃদ্ধ সিংহ বললো , এরকম জোরালো বক্তব্য নাকি স্বাধীনতার পর থেকে আর শোনা যায়নি । রাজনীতিতে এই কুকুরের ভবিষ্যত অত্যন্ত উজ্জ্বল ।
মনের আনন্দে ডগিও গলা চড়িয়ে ঘেউ ঘেউ করে চলছিল । জুনিয়র সদস্য হিসেবে সে বসেছে পেছনের দিকে এক প্রান্তে । এই চিৎকার চেচামেচির মাঝেই হঠাৎ সে কাঁধে কার যেন স্পর্শ অনুভব করলো । মাথা ঘুরিয়ে ডগি দেখলো, তার মেমসাহেব রওশন এরশাদ । সাথে সাহেব লেজেহুমু এরশাদও আছেন । কীভাবে তাকে খুঁজে বের করলো ভেবে পাচ্ছিলো না ডগি । হঠাৎ করেই তার মনে পড়লো গলার চেনের সাথে কী যেন আটকানো । জিপিএস ডিভাইস । উফ ! কেন যে এইটা খুলে রেখে আসেনি সে ! সাহেব কোথায় কোথায় যায় জানার জন্য মেমসাহেব এইটা ডগির গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছিল । নিজের লোম ছিড়তে ইচ্ছে করলো ডগির । কিন্তু এখন কী আর করা , সাহেব-মেমসাহেবরা তো এসেই পড়েছেন ।
৩.
সম্মেলন স্থলের পেছন দিকে দুজন মানুষকে দেখে আয়োজক কমিটি তো হতবাক ! নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে এরা ঢুকলেন কী করে ? কী তাদের পরিচয় ?
সম্মেলন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান, নেকড়ে মাইকে এল । বললো, বন্ধুরা আপনারা ভয় পাবেন না । আপনাদের পেছনে যে দু’জন মানুষকে দেখছেন তারা আমাদের জন্য ক্ষতিকর নন । সুদর্শন পুরুষ যাকে দেখছেন চেহারা মানুষের মত হলেও প্রকৃতপক্ষে আচার আচরণে তিনি প্রায় আমাদের সমগোত্রীয় । বিশেষ করে যদি ‘হায়া’ কে বিবেচনায় নেয়া হয় । তার বাসায় থাকে আমাদের আন্তর্জাতিক পশু সংঘের তরুন সদস্য ‘ডগি’ । ‘ডগি’র মনিবকে আপনারা সবাই হয়তো চেনেন । অন্তত নামটা হয়তো আপনারা শুনে থাকবেন । পশু সমাজে তাঁকে নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয় । তিনি বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরাচারী রাষ্ট্রপতি, কবি ও প্রেমিক লেজেহুমু এরশাদ । সবাই ক্ষুরতালি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান । যাদের ক্ষুর নেই তারা যার যার রীতি অনুযায়ী শব্দ করুন । এখন আমাদের এই অতিথি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত বলবে তারই বাসায় থাকা আমাদের তরুণ সদস্য – ‘ডগি’ । লেজেহুমু এরশাদের হায়া কতটা কম, সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাতের জন্য আমি ডগিকে অনুরোধ করছি ।
৪.
গাড়ির পেছনের সিটে আরামে বসে আছে ডগি । তারা এখন ঢাকার পথে । ডগির হাতে ‘বিশ্ববেহায়া পদক’ । সে খুব আনন্দে আছে । তার মনিব লেজেহুমু এরশাদের হায়া সম্পর্কে সে খুব ভালো বক্তৃতা দিয়েছে । তিনি কীভাবে সকালে এক কথা, দুপুরে আরেক কথা এবং রাতে ঘুমানোর আগে সম্পুর্ণ ভিন্ন কথা বলে জাতির সাথে খেলছেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছে সে । শুনে তো বিচারকরা খুবই সন্তুষ্ট ! এমনিতেই তারা আগে থেকেই লেজেহুমু এরশাদ সম্পর্কে মোটামুটি জানতো , কিন্তু আজ তারই ঘরের কুকুরের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে আর তাঁকে সরাসরি দেখে সবাই মুগ্ধ হয়েছে । অবশেষে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে- 'পদকটা লেজেহুমু এরশাদকেই দেয়া হোক । মানুষ হয়েও যতটা লজ্জাহীনতা তথা বেহায়ার পরিচয় তিনি দিয়েছেন তা অতুলনীয় । আমরা পশুরা একে অসম্মান করতে পারিনা ।'
ডগি ভাবছিল , যাক অবশেষে দেশের জন্য সে কিছু একটা করতে পারলো । এই সাফল্য শুধু লেজেহুমু এরশাদের নয় , এই সাফল্যের অংশীদার ডগিও । এই সাফল্য সমগ্র বাংলাদেশের !
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন