নিরীহ মেডিকেল ছাত্রদের গ্রেপ্তারঃ পুলিশের বাণিজ্যই আসল উদ্দেশ্য !
লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০২:৪৪:০২ দুপুর
আজব এক দেশে আছি । না , দেশ ঠিক আছে- আজব এক সরকারের আজব পুলিশ পুরো দেশটাকে আজব বানিয়ে ফেলেছে । গত ৩০ আগস্ট কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ভালো রেজাল্ট করা ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আচমকা হামলা চালায় পুলিশ । সেখান থেকে ৮৬ জন মেডিকেল ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় । আজ খবরে দেখলাম, তাঁদের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে কানা আদালত !! যেমন পুলিশ, তেমন আদালত !! পুরাই জংলী শাসন ব্যবস্থা ।
কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করে মেডিকেল কলেজের মেধাবী ছাত্ররা শত শত মানুষের সামনে ‘নাশকতার ষড়যন্ত্র’ করছিল ? ‘মখা’ কি ঘরে ঘরে জন্মাচ্ছে নাকি ? আবার বিচারক কোন পর্যায়ের ‘মখা’- ৮৬ জনের জামিন না দিয়ে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে !
আসল কথা হলো অন্যখানে । এরা কাজে ‘মখা’ হলেও ‘তালে’ ঠিক আছে । এইটা একটা বানিজ্য । এদের ধারণা, ছাত্রদের গ্রেপ্তার করলে পরিবার থেকে ভালো পরিমাণে টাকা খাওয়া যাবে । এবং বাস্তবে তারা সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এইসব গ্রেপ্তার অভিযান চালায় । চোর ডাকাত ধরলে তো উল্টা পুলিশদেরই রিস্ক, চোর ডাকাত গ্যাংদের কাছ থেকে টাকা পায় উপর লেভেলের মখারা । সেজন্যে এরা চোর ডাকাত না ধরে বাসায় বাড়িতে হোস্টেলে মেসে কমিউনিটি সেন্টার মসজিদে হামলা চালিয়ে পড়াশোনারত, ঘুমন্ত, নামাজরত নিরীহ মেধাবী ছাত্রদের গ্রেপ্তার করে । ‘নাশকতার ষড়যন্ত্র’ আবিস্কার করে !! কুকুরের চেয়ে এদের ঘ্রাণশক্তি বেশি ! তারপরেও প্রতিদিন রাস্তা ঘাটে খালে বিলে লাশ পড়ে থাকে – একটা খুনিও ধরা পড়েনা । একটারও রহস্য উদ্ধার হয় না ।
গত বছরের নভেম্বরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের হোস্টেল থেকে প্রফ পরীক্ষার্থী- যারা হোস্টেলে পড়াশুনা করছিল, এমন ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ । এসব ছাত্রের পরিবারগুলোর কাছ থেকে নানান কায়দায় মোটা অংকের টাকা আদায় করে পুলিশ ।
কলিজার টুকরা সন্তানকে পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে বাবা-মা, আত্মীয়রা সর্বস্ব বিলিয়ে দিতেও রাজি থাকেন । তাদের চোখের পানিকে পুঁজি বানিয়ে বানিজ্য করা হয় ।
মেডিকেল কলেজের ছাত্র কারা ? এরা স্কুল-কলেজ-পাড়া-মহল্লা-গ্রাম-উপজেলার শ্রেষ্ঠ ছাত্র । এরা হাজার হাজার ছাত্রের ভেতর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে উৎরে আসা সেরা ছাত্র । এরা বাবা-মার নয়নমণি । এরা আত্মীয়-স্বজনের আশা আকাংখার কেন্দ্রবিন্দু । আর দশজন ছাত্র যখন কফি শপে, রাস্তার মোড়ে আড্ডায় ব্যস্ত থাকে – এরা তখন মুখ গুজে পড়ে থাকে মোটা মোটা বইয়ের পাতায় । এরা তখন ঘোরাফেরা করে হাসপাতালের অয়ার্ডে, করিডোরে , রিডিং রুমে, লাইব্রেরিতে ।
মনে হয় আমাজন জংগলের জন্তু জানোয়ারদেরও একটা ‘বিবেক’ আছে । আমাদের দেশের পুলিশ বাহিনীর, তথাকথিত আদালতের মনে হয় সেটুকুও আর অবশিষ্ট নেই । দুর্নীতি আর লেজুড়বৃত্তি তাদের সামান্যতম বিবেকও অবশিষ্ট রাখেনি । টিআইবি’র রিপোর্টে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান ছিল এই বিচার বিভাগ, পুলিশ বাহিনী ।
বাস্তবেও তাই দেখেছি । থানা এবং আদালতে মানুষ তো নয়ই- একটি ইট, একটি বালুও টাকা ছাড়া কথা বলে না ।
ডাক্তার হিসেবে সাথে সার্জারির ছোটখাট জিনিসপত্র – ছুরি, কাচি, স্কালপেল সাথে রাখতে হয় । ভয়ে থাকি- নাজানি কোনদিন মখাবাহিনী ধরে বলবে, ‘সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার , ধারালো অস্ত্র উদ্ধার’ !
টাকার নেশায় এরা কী না করছে , জাতির ভবিষ্যতকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে । ঘরে ঘরে তৈরি করছে একেকটা ‘ঐশী’ ।
বিনা কারণে গ্রেপ্তার করে যাদের কষ্ট দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে তারা যদি ভবিষ্যতে পণ করে – কোন পুলিশকে চিকিৎসা দেবো না, তবুও আমি আশ্চর্য হব না । কিন্তু আমি জানি, এদের কেউ তা করবে না । কারণ – তারা ডাক্তার হবে, তাদের বিবেক আছে । তারা মানুষ হবে, দুর্নীতিবাজ পুলিশ নয় ।
বিষয়: বিবিধ
১৪৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন