১৭ই রমজানের শিক্ষা

লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ৩০ জুলাই, ২০১৩, ১২:৪৩:৩২ দুপুর

১৭ই রমজানের ইতিহাস আমার জীবনে এক বিশাল পরিবর্তন এনে দিয়েছিল । আমি বাস্তববাদী মানুষ , তবু কল্পনায় ভেসে ওঠে একটা কাফেলা । এগিয়ে চলেছে দৃপ্ত শপথ নিয়ে – মোকাবেলা করতে হবে একটা পিশাচ বাহিনীর । যারা এগিয়ে আসছে আল্লাহর দেয়া বিধানের অনুসারী কয়েকশ মানুষকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে । ‘মদীনা’ নামক ক্ষুদ্র রাষ্ট্রকে চিরতরে বিলুপ্ত করতে ।

তিনশ জনের কাফেলার সবাই অনাহারে আছেন । এখন রমজান মাস । এইতো এ বছরেই সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে নির্দেশ এসেছে- রমজান মাসে সুবহে সাদিক হতে সুর্যাস্ত পর্যন্ত থাকতে হবে অনাহারে । শুধু খাদ্য নয়- যেকোন রকম ভোগ-আরাম থেকে সংযমী হতে হবে । আল্লাহর মনোনীত দূত যেভাবে বলেন – সেভাবে জীবন পুনর্গঠন করতে হবে ।

কাফেলা এগিয়ে চলেছে সামনে । মাঝে মাঝে শব্দ আসছে- ‘আল্লাহু আকবার’ । কাফেলার নেতা এমন একজন মানুষ- যিনি মানবজাতির আদি হতে অন্ত পর্যন্ত অনন্য একজন । নাম – মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ (সাঃ) ।

বিকেল হয়ে আসছে । সুর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে । আর ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই অনাহারের সমাপ্তি হবে । ইফতার করা যাবে । আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দার এই কষ্টের প্রতিদান নিজে দেবেন । যত ইচ্ছা দেবেন । আলহামদুলিল্লাহ । ১৭ তম সাওম আজ শেষ হয়ে যাবে ।

বদর নামক স্থানে এসে পৌছেছে কাফেলা । সিদ্ধান্ত হয়েছে এখানেই তাঁবু খাটানো হবে । পানির উৎস পাওয়া গেছে । সেটাকে দখলে রাখতে হবে । মক্কা থেকে কুরাইশ-কাফিরদের উদ্ধত বাহিনী এই স্থান থেকে আর বেশি দূরে নাই । হয়তো কাল এখানেই যুদ্ধ হবে । চূড়ান্ত হবে- পৃথিবীতে আল্লাহর বিধান মানার মত কেউ থাকবে নাকি থাকবে না , মদীনা নামক ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটি থাকবে কি থাকবে না ।

হঠাৎ কানাকানি শুরু হলো । অধিনায়ক, সৃষ্টিকর্তার মনোনীত পুরুষ, রাসুল (সাঃ) বলেছেন রোযা ভেঙ্গে ফেলতে হবে । কেন ? আর তো সময় বেশি নেই । এইসময় রোযা ভাঙ্গার কী দরকার ? কারো বুঝে আসে না । অনেকেই ইতস্তত করতে লাগলেন ।

অধিনায়ক এবার নিজেই বললেন- আমাকে খেজুর দাও । তিনি খেজুর খেলেন । সঙ্গীরা বাধ্য হয়ে রোযা ভাংলেন । এই ব্যক্তির অনুসরণ করাটাই তো তাঁদের জীবনের পরম পাওয়া ।

আল্লাহু আকবার ।

এমনিভাবে আরো একবার রোযা ভাঙ্গা হয়েছিল ৮ম হিজরিতে । মক্কা অভিযানের সময় ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন -

﴿يُرِيدُونَ أَن يُطْفِئُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَيَأْبَى اللَّهُ إِلَّا أَن يُتِمَّ نُورَهُ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ﴾

৩২) তারা চায় তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে ৷ কিন্তু আল্লাহ তার আলোকে পূর্ণতা দান না করে ক্ষান্ত হবেন না, তা কাফেরদের কাছে যতই অপ্রীতিকর হোক না কেন ৷ (সুরা- তাওবা)

.

পৃথিবীর সুচনালগ্ন থেকে আজও সারাবিশ্বে তাগুত শক্তি চায় যেকোন মূল্যে আল্লাহ্‌র দ্বীনের বিজয় ঠেকাতে, মানুষকে আল্লাহ্‌র দ্বীনের পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে । এই মুহুর্তে বাংলাদেশ এবং মিশরে নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা করছে তাগুতি শক্তি । তারাই আবার বলে- রমজান মাসে প্রতিবাদ করলে নাকি রমজানের পবিত্রতা নষ্ট হয় ! বলি রমজান মাসে গুলি করে মানুষ হত্যা করছো কেন ? রমজান মাসে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে জেলে আটকে নির্যাতন করছো কেন ? কত পরিবারকে ঈদের দিন কাঁদতে হবে জাননা ?

রমজান মাস শুধু সেহরী আর ইফতারের জন্য নয় । দীর্ঘ সময়ের নামাজ, উপবাস থাকা এই সবকিছু আল্লহর পক্ষ থেকে মুমিনের জন্য ট্রেনিং । তাগুতের বিরুদ্ধে লড়াই করার ট্রেনিং । রমজান মাস তাগুত শক্তির পরাজয়ের মাস । রমজানের শিক্ষা বদর যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার শিক্ষা । রমজানের শিক্ষা মক্কা বিজয়ের শিক্ষা । যদি আমরা রোযার ট্রেনিং ধারণ করে মাঠে নেমে যাই , দ্বিতীয় হিজরীর মত, অষ্টম হিজরীর মত আবু জেহেল ও তার বংশধররা আজও পরাজিত হবেই হবে ইনশাআল্লাহ ।

বিষয়: বিবিধ

১৩৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File