ইসলাম, গনতন্ত্র, খেলাফতঃ বিভ্রান্তি নিরসন -১০
লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ২২ জুলাই, ২০১৩, ০২:৩৬:৫০ রাত
বিংশ শতাব্দীর আধুনিক বিশ্বে ইসলামী জাগরণের অগ্রদূত সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ) পঞ্চাশ বছর আগে তাঁর “ইসলামের রাজনৈতিক মতবাদ” বইয়ে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য Theo-democracy শব্দ দু’টি ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ তিনি Democracy বা গণতন্ত্র শব্দটি পরিত্যাগ করেননি বরং আল্লাহর সার্বভৌমত্বের অধীনে এটি গ্রহণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর জীবনের শেষ অধ্যায়ে - করাচির ‘আখবারে জাহান’ পত্রিকায় ১৯৬৯ সালের ২রা এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইসলাম ও গণতন্ত্র পরস্পর বিরোধী নয়। গণতন্ত্র সেই শাসন ব্যবস্থার নাম, যেখানে জনমতের ভিত্তিতে সরকার গঠিত, পরিচালিত ও পরিবর্তিত হয়। ইসলামী শাসন ব্যবস্থাও তদ্রুপ। তবে পাশ্চাত্য গণতন্ত্র থেকে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ভিন্ন। কেননা পাশ্চাত্য গণতন্ত্র লাগামহীন হয়ে থাকে। জনগণের রায় হলালকে হারাম করে দিতে পারে, যেমন বৃটেনে হয়েছে এবং হচেছ। পক্ষান্তরে ইসলামী গণতন্ত্র কুরআন ও হাদিস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। গোটা জাতি চাইলেও ইসলামের সীমানার বাইরে গিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সমাজতন্ত্র এর ঠিক বিপরীত। সমাজতন্ত্র এক জীবন দর্শনের নাম। তার রয়েছে নিজস্ব আকীদা, বিশ্বাস, দর্শন ও নৈতিকতা। ইসলামের সাথে তার কোনোই মিল নেই। [মাওলানা মওদূদীর সাক্ষাৎকার, আধুনিক প্রকাশনী , ১ম সংস্করণ, পৃ-২৬৩]
লন্ডনের মাজাল্লাতুন গুরাবা পত্রিকায় ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারী সংখ্যায় প্রকাশিত এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, 'যুগের মানুষদের কথা বুঝানোর জন্য আধুনিক পরিভাষা ব্যবহার কার অপরিহার্য। তবে এগুলো ব্যবহারে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কোনো কোনো পরিভাষা বর্জন করা ভালো এবং ওয়াজিব, যেমন সমাজতন্ত্র। আর কোনো কোনোটার ব্যবহার এ শর্তে জায়েজ যে, তার ইসলামী তাৎপর্য ও পাশ্চাত্য তাৎপর্যের পার্থক্য পুরোপুরিভাবে বুঝিয়ে দিতেহবে। যেমন- গণতন্ত্র, সাংবিধানিক ব্যবস্থা ও সংসদীয় পদ্ধতি। [মাওলানা মওদূদীর সাক্ষাৎকার, আধুনিক প্রকাশনী প্রকাশিত, ১ম সংস্করণ, পৃ-২৫৫]
আমরা স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করলে দেখি যে -ইসলাম এমন একটি সমাজের কথা বলে যেখানে সকলের মত প্রকাশের অধিকার থাকবে, একজন সাধারণ নাগরিক রাষ্ট্রের শাসককে সরাসরি জবাবদিহী করতে পারবে, আইনের শাসন থাকবে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকবে, মৌলিক মানবাধিকার রক্ষিত হবে । আমরা দেখি যে, যখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা বলা হয় তখন তার পূর্বশর্ত হিসেবে এসবের কথাই বলা হয়। অর্থাৎ গভীর বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ইসলামী দলগুলোর সরকার ও রাষ্ট্র সংক্রান্ত ধারণা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার গঠন কাঠামো মোটামুটিভাবে একই ধরণের।
ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান । ইসলাম যেসকল রাজনৈতিক মূল্যবোধের কথা বলে গনতন্ত্রও ভিন্ন নামে সেগুলোরই কথা বলে । শুধু নাম বা Term বদলের কারণেই কি তা কুফরি হয়ে যাবে ? দুধের বোতলের গায়ে মদ লিখে রাখলেই কি তা হারাম হয়ে যাবে ?
বিষয়: বিবিধ
১৩৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন