ইসলাম, গনতন্ত্র, খেলাফতঃ বিভ্রান্তি নিরসন -৯
লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ২১ জুলাই, ২০১৩, ১২:৩৫:১৯ রাত
ড. আবু সাঈদ নূরুদ্দীন-এর ‘মহাকবি ইকবাল’ বইটিতে আমরা দেখতে পাই যে, আল্লামা ইকবাল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট ছিলেন না । কিন্তু তিনি তার লেখায় উল্লেখ করেছেন যে , গণতন্ত্রের কোন বিকল্প নেই। তিনি তার Reconstruction of Religious Thought in Islam-এর ৬ষ্ঠ ভাষণে নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র সম্পর্কে মতামত দিতে গিয়ে আরও বলেন,‘ইসলামী রাষ্ট্র স্বাধীনতা, সাম্য, এবং স্থিতিশীলতার চিরন্তন বিধানসমূহের উপর
প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং গণতান্ত্রিক শাসন পদ্ধতির নীতিমালা শুধু ইসলামের মৌলিক ভাবধারার সাথেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, বরং যেসব শক্তি মুসলিম বিশ্বে কার্যরত রয়েছে তাকেও সুসহংহত করা অপরিহার্য।’ [মহাকবি ইকবাল, ড. আবু সাঈদনূরুদ্দীন, পৃ-২৩৫]
ইকবালের মতে, গণতন্ত্রের ভিত্তি যদি রূহানী ও নৈতিক হয় তাহলেই তা হবে সর্বোৎকৃষ্ট রাজনৈতিক পদ্ধতি। ইসলামী রাষ্ট্রকে এ কারণেই তিনি “রূহানী গণতন্ত্র” বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইংরেজী সাময়িকী ‘The New Era’ – এর ২৮ জুলাই ১৯১৭ সংখ্যায় তিনি বলেন, ‘ইসলামে গণতন্ত্র অধিকাংশ ইউরোপীয় সমাজসমূহের মতো অর্থনৈতিক সুযোগের সম্প্রসারণ থেকে উৎপন্ন হয়না; বরং এটি একটি রূহানী নীতি, যা ঐ কথার ভিত্তিতে এসেছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তিই কতকগুলো সুপ্ত শক্তির এমন একটি আধার, যার সম্ভানাসমূহকে এক বিশেষ গুণ ও চরিত্রের দ্বারা উন্নত করা যেতে পারে। ’ [প্রাগুক্ত, পৃ-২৩৯]
রাজনৈতিক কর্মকান্ডে মানুষ তথা উম্মতের দায়িত্ব সম্পর্কে মহাকবি ড. আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল- এর মতামত হচেছ এরকমঃ
‘ইসলাম গোড়াতেই স্বীকার করে নিয়েছে যে, বাস্তবে রাজনৈতিক ক্ষমতার ধারক ও বাহক হল উম্মত এবং যেসব কার্যক্রম নির্বাচকমন্ডলী তাদের নেতা নির্বাচনের নিমিত্ত গ্রহণ করে তার অর্থ শুধু এই যে, তারা তাদের সম্মিলিত ও স্বাধীন নির্বাচন পদ্ধতি দ্বারা উক্ত রাজনৈতিক ক্ষমতাকে এমন একজন নির্দিষ্ট ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের মাঝে ন্যস্ত করে দেয়, যারা তাকে উক্ত ক্ষমতা প্রাপ্তির জন্য উপযুক্ত বিবেচনা করে। ইসলামী আইন প্রণয়নের ভিত্তি মিল্লাতের সংখ্যাগরিষ্ঠের সম্মতি ও যৌথ মতের উপর প্রতিষ্ঠিত।’ [ইসলামের রাজনৈতিক চিন্তাধারা, লাহোর ১৯১০-১৯১১, ‘মহাকবি ইকবাল’,ড. আবু সাঈদ নূরুদ্দীন, পৃ -২৩৪]
পাকিস্তানে যখন আধুনিক বিশ্বের প্রথম ইসলামী সংবিধান রচিত হচ্ছিল তখন তার মধ্যে গণতন্ত্র শব্দটি নেওয়া হয়েছিল আলেমদের সমর্থনে। প্রকৃতপক্ষে একটি আদর্শ প্রস্তাবনা রূপে পাকিস্তানে শাসনতন্ত্রের ভূমিকা আলেমরাই প্রণয়ন করেছিলেন। এই ভূমিকায় গণতন্ত্রের বিষয়টি বলা হয়েছে এভাবেঃ
Wherein the principles of democracy, freedom, equality, tolerance and social justice, as enunciated by Islam, shall be fully observed.
গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সমতা, সহনশীলতা এবং সামাজিক ন্যায়পরায়ণতার নীতি ইসলামে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, পুরোপুরি সেভাবে মান্য করতে হবে।
অর্থাৎ ইসলাম গণতন্ত্রকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে তা সেভাবে অনুসৃত হবে। এর অর্থ হচ্ছে আলেমগণ, ইসলামী রাজনীতিকগণ শর্তসাপেক্ষে গণত্ন্ত্র শব্দটি, গনতন্ত্র পরিভাষাটি এবং তা দ্বারা যা বোঝায় তা গ্রহন করেছেন।
বিষয়: বিবিধ
১৩১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন