ইসলাম, গনতন্ত্র, খেলাফতঃ বিভ্রান্তি নিরসন- ৪

লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ২৮ জুন, ২০১৩, ০৯:৪২:৪০ সকাল

>> সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ কীভাবে শিরক ? বলা হয় যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে সংসদ তথা একটি পরিষদকে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে যারা আইন তৈরি করার ক্ষমতা পাচ্ছে । অথচ আইন দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা । অর্থাত্‍ কাউকে 'আইন তৈরি করার ক্ষমতা' দেয়া হচ্ছে যা শিরক ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে আইন তৈরি করার ক্ষমতাটাই কি কুফরি ? নাকি কুরআন হাদিসের পরিপন্থি আইন তৈরির পর তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা কুফরি ? আমি বলবো যে আইন তৈরির ক্ষমতাটাই কুফরি বা শিরক নয় ।

আল্লাহ তায়ালাই মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন আল্লাহকে মানার অথবা না মানার । আল্লাহ মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসরন করার অথবা নিজের খেয়ালখুশিমত চলার । নিজের তৈরি বিধান অনুসারে চলার ।

আমাদের হাত আছে যা দিয়ে ভালো কাজও করা যায় । খারাপ কাজও করা যায় । এখন হাত থাকাটাই কি হারাম ? নাকি হাত দিয়ে হারাম কাজ করাটা হারাম ? আমাদের চোখ আছে । চোখ দিয়ে ভালো কিছুও দেখা যায় , খারাপ কিছুও দেখা যায় । এখন চোখ বা দৃষ্টিশক্তিটাই কি হারাম নাকি হারাম কিছু দেখাটা হারাম ?

সুতরাং কারো আইন তৈরি করার ক্ষমতা থাকাটাই শিরক বা কুফরি নয় । বরং সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী আইন তৈরি করা হলে সেটা হবে কুফরি ।

প্রচলিত গনতান্ত্রিক সিস্টেমে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে দায়িত্ব দেয়া হয় মাত্র । তারা রাষ্ট্রের প্রশাসন পরিচালনা করে । দায়িত্ব দেয়া হয় এই বিশ্বাস করে যে তারা ভালোভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে ,যেমনটি তারা তাদের ইশতেহারে উল্লেখ করেছে ।

খলিফাকেও দায়িত্ব দেয়া হয় এই বিশ্বাস রেখে যে তিনি সবচেয়ে ভালো পরিচালনা করবেন । (খলিফাকেও আল্লাহ তায়ালা সরাসরি নিয়োগ দেননা ।) এরপর তারা যা করেন- প্রেসিডেন্ট হোন , প্রধানমন্ত্রী হোন আর খলিফাই হোন তা তাদের দায়িত্ব । তার দায় তাদের ঘাড়েই বর্তাবে ।

আমাদের অর্থাত্‍ জনগনের করণীয় কী ? আমাদের দায়িত্ব হলো এমন লোকদের দায়িত্ব দেয়া তথা নির্বাচিত করা যারা কুরআন সুন্নাহ অনুসারে সর্বাধিক যোগ্যতার সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন ।

একটা কথা কিন্তু মনে রাখতেই হবে - আল্লাহ তায়ালার দেয়া কুরআন সুন্নাহর আইনই হোক আর মানুষের তৈরি আইনই হোক সেই অনুসারে সমাজ রাষ্ট্র পরিচালিত হবে কিনা তা অনুমোদনের ক্ষমতাও কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষেরই হাতে । আর এটা আল্লাহই দিয়েছেন ।

>> কুরআন হাদীসে সব আইন কানুন একেবারে খুঁটিনাটি সহ এমন বিস্তারিতভাবে নেইযে আর কোনদিন নতুন কিছু যোগ করতে হবেনা । মূলনীতি আছে । ইজতিহাদের মাধ্যমে এ থেকে বিধান বের করতে হবে। অনেক আইনকে স্থানীয় প্রেক্ষাপটে নতুন করে লিখতে হবে ।

আইন লিখলেই সেটা আইন হয়ে যায়না । ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হয় । আর অনুমোদিত কোন আইনও যদি প্রয়োগ না হয় , তাহলে তার কোন মূল্য থাকেনা । ইসলামী রাষ্ট্রেও আইন অবশ্যই রাষ্ট্রের কারো মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে। কে অনুমোদন করবে ? খলিফা অথবা মজলিশে শূরা ? একজন বা কিছু মানুষ ? তাহলে পার্থক্যটা কোথায় রইলো ? মানুষের দ্বারা অনুমোদিত বলে কি সেটা পালন করা কুফরি হবে ? বলতে পারেন যে খলিফা অথবা শূরা কুরআন হাদীসের বিরুদ্ধে কোন আইন করবেন না । এটা হতে পারে আমাদের বিশ্বাস ,কিন্তু বাস্তবে সবসময় এরকম হয়নি। এজন্যই খোলাফায়ে রাশেদীনের পর খিলাফত পরিণত হয়েছে রাজতন্ত্রে কিংবা স্বৈরতন্ত্রে । যেখানে ব্যক্তির ইচ্ছাই হলো আইন ।

ইতিহাস আছে, নিরঙ্কুশ ক্ষমতাবলে খলিফা মজলিশে শূরাকে নিজের ইচ্ছামত এবং নিজের পছন্দমত লোকদের দিয়ে সাজিয়েছেন । হকপন্থি আলেমদের করেছেন নির্যাতন । ইমাম ইবনে তাইমিয়া , ইমাম আবু হানিফা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ । আরো অনেক উদাহরণ আছে ।

এজন্য প্রকৃত বিষয়টি হলো কে কিভাবে আইন বানালো সেটা বড় কথা নয় , আইনটি কুরআন হাদীসের নীতির সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ কিনা সেটাই হচ্ছে বিবেচ্য বিষয় । যে যেভাবেই আইন তৈরি করুক বা প্রয়োগ করুক তা যদি কুরআন সুন্নাহ বিরোধী হয় সেটাই কুফরি , আর যদি কুরআন সুন্নাহর বিরুদ্ধে না হয় সেটাই পালনীয় । কুফরি হওয়ার প্রশ্নই অবান্তর ।

প্রশ্নঃ সংসদে মানুষের মাধ্যমে আইন পাশ করা হয় বলেই যদি সেটা কুফরি হয় তাহলে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যরা যদি কোন ইসলামী আইন বাস্তবায়নের জন্য পাশ করে তাহলে কি তাও কুফরি হবে ? সেই আইন অনুসারে কাজ করাও কি কুফরি হবে ?

বিষয়: বিবিধ

১৩৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File