ইসলাম, গনতন্ত্র, খেলাফতঃ বিভ্রান্তি নিরসন -৩
লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ২৬ জুন, ২০১৩, ০৯:২৩:৪৩ সকাল
'জনগনই সকল ক্ষমতার উত্সে ' বাংলাদেশ সংবিধানের এই কথাটিই যত আপত্তির উত্স । এই কথার উপর ভিত্তি করেই গনতন্ত্র কুফর এবং শিরক বলা হচ্ছে ।
কথাটিকে যেভাবে শিরকের প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে বিষয়টি কি আসলেই সেরকম ?
হিজবুত তাহরির সহ কয়েকটি গোষ্ঠি এই বিষয়টিকে এমনভাবে তুলে ধরছে যাতে মনে হয় এই বাক্যের মাধ্যমে জনগন বা জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে 'ইলাহ' বানানো হয়েছে । সত্যিই কি এটি বাস্তব ?
ইলাহ শব্দের অর্থগুলো কি? সৃষ্টিকর্তা , রিজিকদাতা , পালনকর্তা , আইনদাতা ইত্যাদি । 'জনগন'ই সৃষ্টিকর্তা , পালনকর্তা এই কথা কি সংবিধান প্রণেতারাও কেউ বিশ্বাস করে ? করেনা ।
তাহলে বাকি থাকলো কী ? কিছুলোককে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এই বক্তব্য !
নির্বাচনের মাধ্যমে কাউকে সংসদে পাঠানো মানেই কি এমন যে তারা যে আইনই করুক তাই আমরা বা জনগন নির্দ্বিধায় মেনে নেবো ?
সেরকম তো হচ্ছেনা । বরং সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই একটা রুপরেখা জনগনের সামনে পেশ করে যে তারা সরকার পরিচালনার ক্ষমতা পেলে কীভাবে পরিচালনা করবে । অধিকাংশ জনগন সম্মত হলেই পরে তারা ক্ষমতা পাচ্ছে । এরপরেও যদি কোন আইন বা আদেশ এমন হয় যা কুরআন সুন্নাহ বা জনগনের স্বার্থ -মতের বিরুদ্ধে তখন কিন্তু তারা প্রতিবাদ করছে । অর্থাত্ এই জনতা প্রকৃতপক্ষে সরকার বা সংসদকে সার্বভৌম হিসেবে বিশ্বাস করেনা ।
আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করি । তাই যেকোন বিবাদ বিসম্বাদে যখন কোন আয়াত বা হাদিস পাওয়া যায় তখন আমরা সেটাকেই চূড়ান্ত রায় বলে নির্দ্বিধায় মেনে নেই । কোন প্রতিবাদ করিনা । এটাকেই বলে সার্বভৌমত্ব। অর্থাত্ বাস্তবে কোন সরকার বা সংসদকেই সার্বভৌম বলা যাচ্ছেনা ।
তাহলে ঐ 'জনগন সকল ক্ষমতার উত্সল' এই কথার ব্যাখ্যা কী ? এর ব্যাখ্যা হলো দেশের প্রশাসন কারা পরিচালনা করবে সেটা নির্ধারিত হবে জনগনের মতামতের ভিত্তিতে । এটুকুই । এর বাইরে কী ক্ষমতা আছে জনগনের ?
আপনি যে কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারেন যে '' জনগন সকল ক্ষমতার উত্স।' এর অর্থ বলতে আসলে কী বুঝায় ? এর বাস্তব প্রয়োগ কোথায় ?
আসলে উপরোক্ত সহজ কথাটাই এর ব্যাখ্যা । অযথা ভজঘট ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর কোন দরকার নাই ।
জনগনের শাসক , জনগনের নেতা নির্বাচনে জনগনের 'মতামত নেওয়া' টাকে আমি যৌক্তিক মনে করি । এবং এটাতে ইসলামের মূলনীতি বিরুদ্ধ কিছু পাইনা । তবে হ্যা , জনগন যাদের ব্যাপারে মতামত দিতে পারবে তাদের কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা অবশ্যই থাকতে হবে । ঐসব নির্দিষ্ট যোগ্যতা যাদের নেই তাদের ব্যাপারে মত এলে বাতিল বলে গন্য হবে । (এইরকম বিধিনিষেধ এখনো আছে । নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত নিয়মে ভোট না দিলে যেকোন ভোট বাতিল হয় ।)
এটা পরিস্কার হয়েছে যে 'জনগন সকল ক্ষমতার উত্সয' কথাটি প্রকৃতপক্ষে একটি রাজনৈতিক রুপক মাত্র । তবু এই কথাটিকে সরাসরি এইভাবে গ্রহণ করাটা কঠিন এবং সন্দেহজনক । এটাকে ভাষাগত পরিবর্তন এনে ভিন্নভাবে লিখতে হবে । এটা সত্য ,বাংলাদেশ সংবিধান কুরআন হাদিসের ভিত্তিতে রচিত নয় । বাংলাদেশ সরকারও কোন ইসলামী সরকার নয় । কিন্তু এই 'জনগন সকল ক্ষমতার উত্স।' রুপক/ভুলভাবে প্রকাশিত কথাটি আছে বলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাই 'কুফরি' , এমনটি যারা বলছেন তাদের সাথে আমি একমত নই । (তারা কিভাবে দ্বিমুখী আচরণ করছেন তা পরবর্তী স্ট্যাটাসে দেখানো হবে ইনশাআল্লাহ) ।
আচ্ছা, ইসলামী রাষ্ট্র/খিলাফত ব্যবস্থায় 'খলিফা' নিযুক্ত হবেন কীভাবে ? সরাসরি তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নিয়োগ দিবেন না । মানুষই নির্বাচিত বা মনোনীত করবে । মজলিশে শূরার সদস্যরা কীভাবে নিযুক্ত হবেন ? মানুষের মতামতের ভিত্তিতেই তো ! ( মানুষের মধ্যে হয়তো গ্রহণযোগ্য/ শিক্ষিত একটা গোষ্ঠি ! আমেরিকার ইলেকটোরাল কলেজ সিস্টেমটা অনেকটা সেরকম )
কিন্তু ঐযে মানুষের মতামতের ভিত্তিতেই কিছু মানুষকে ক্ষমতা দেয়া হলো (খলিফা /গভর্নর /মজলিশে শুরা সদস্য নিয়োগ) সেটাতে কি আপাতদৃষ্টিতে মানুষই ক্ষমতার উত্সে হয়ে গেলো না ?
প্রশ্নঃ ১।
ক. এই বাড়ির সর্বময় কতা নাসির সাহেব ।
খ. এই জমির মালিক আমি ।
আমাদের দেশে এভাবে বলা হয়, লেখা হয় । লিখিত দলিলও করা হয় । এভাবে বলা কি কুফরি হবে ?
ইসলামী রাষ্ট্রেও একটা সর্বোচ্চ পরিষদ থাকতে হবে যারা যেকোন বিরোধ বা সমস্যা নিষ্পত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বোচ্চ ক্ষমতা রাখবে । এই 'সর্বোচ্চ' শব্দটা বলাটা কি কুফরি ? অথচ সবাই জানে যে এটা 'আপাতঃভাবে' বলা হচ্ছে ।
প্রশ্নঃ ২। মানুষের মতামত নেওয়াটাই যদি শিরক হয় তাহলে কি হযরত ওসমান (রাঃ) শিরকের মাধ্যমে খলিফা নির্বাচিত হয়েছিলেন ?(নাউযুবিল্লাহ)
বিষয়: বিবিধ
১৮৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন