অমানুষদের জন্যও আমরা ব্যথিত হই । কারণ, আমরা মানুষ
লিখেছেন লিখেছেন মুহসিন আব্দুল্লাহ ১২ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:১৯:২৯ রাত
ফটিকছড়ির পাহাড়ী রাস্তা ধরে কয়েকশত লোক ট্রাক, মিনিবাস, মোটরসাইকেলে করে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করতে যাচ্ছে কওমি মাদ্রাসায় । কওমি মাদ্রাসায় ছোট ছোট ছেলেরা পড়াশোনা করে । এদের বেশিরভাগই গরীব পরিবারের সন্তান । চরম হিংস্রতা নিয়ে এদের ওপর ঝাপিয়ে পড়তে যাচ্ছিল তারা । দৃশ্যটা কল্পনা করতেই তো গা শিউরে ওঠে । ঘটনাটা শুনেই আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠেছিল ।
কতটা নির্মম পিশাচ হলে কেউ এমন কাজে জড়াতে পারে ? অথচ ফটিকছড়িতে এমন কাজই করতে যাচ্ছিলো আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মীরা । কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাঁর অশেষ রহমতে রক্ষা করেছেন মাদ্রাসার ছোট ছোট ছেলেদের । জনগন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে । আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে জনগন নেমে পড়েছে লাঠি সোটা নিয়ে ।
ঐ পিশাচরা হয়তো জানত না - কওমি মাদ্রাসা কোন ব্যক্তির কিংবা দলের নয় । কওমি মাদ্রাসা ‘হেফাযতে ইসলামের’ নয় । স্থানীয় জনগনের দান-সদকায় তৈরি হয় মাদ্রাসা । পরিচালিত হয় এলাকার মানুষের লাউ-ডিম বিক্রির টাকায় । শত ঝড়-ঝাপ্টায়ও যক্ষের ধনের মত মানুষ বুক আগলে রক্ষা করে এতিমখানা , হেফজখানা, কওমি মাদ্রাসা । এসব মাদ্রাসা সরকারের সম্পত্তি নয়, খেটে খাওয়া মানুষের সম্পত্তি ।
পিশাচরা ভেবেছিলো মাদ্রাসায় হামলা করে ‘হেফাযতে ইসলাম’কে শিক্ষা দিবে । দুদিন আগে এরা চট্টগ্রামে গুলি করে হেফাযতে ইসলামের একজনকে হত্যা করেছিল । চট্টগ্রামের লালখান বাজারে অবস্থিত একটি মাদ্রাসায় হামলা করেছিল । ২০০৬ এর ২৮ অক্টোবর থেকে পৈশাচিকভাবে জামায়াত কর্মীদের খুন করে করে তারা সবকিছুকে সহজ মনে করে নিয়েছিল । ভেবেছিল , নির্দ্বিধায় চালিয়ে যাবে হত্যাযজ্ঞ । আল্লাহর অশেষ রহমতে জনগন তাদের উচিৎ শিক্ষা দিয়েছে ।
ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে গিয়ে তিনজন ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হয়েছে । আমি বুঝতে পারি , জনতা প্রতিরোধ না করলে হয়তো ওদের জায়গায় আমাকে দেখতে হত নিরীহ মাদ্রাসা ছাত্রদের কচি মুখ । নিথর নিস্তব্ধ । পাঞ্জাবী টুপি পড়া এসব ছেলের লাশ দেখে তারা উল্লাসে ফেটে পড়তো । হিসাব করতো কতটা ‘উইকেট’ ফেলতে পেরেছে ! আমি জানি , যে পৈশাচিক কাজের জন্য এরা যাচ্ছিলো- এদেরকে ঠিক মানুষের কাতারে ফেলে বিচার করা যায় না । (সুরা আত তীন ,আয়াত ০৫ )
তবু মনের মাঝে কষ্ট অনুভব হয় । ওরা হয়তো মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেছিল , আমি তো হারাই নি । শয়তানের পদাংক অনুসরণ করে পরবর্তীতে ‘অমানুষ’ হয়ে উঠলেও ওদেরও জন্ম হয়েছিল মানুষের ঔরসে, মানুষেরই গর্ভে । কে জানে , হয়তো একসময় তারা আবার মানুষ হয়ে উঠতেও পারতো !
যেমনটি আমাদের প্রিয় নবী(সাঃ) ভেবেছিলেন তায়েফে । তায়েফে কাফেরদের নিদারুণ নির্যাতনের পর আহত ব্যথিত রাসুল(সাঃ) এর কাছে যখন ফেরেশতাগন তাদের ধ্বংস করে দেয়ার অনুমতি চাইলেন , রাসুল(সাঃ) সব ব্যথা বুকে চেপে বলেছিলেন – হয়তো এদের বংশধররা একদিন আল্লাহর ইবাদাত করবে । ( আর রাহীকুল মাখতুম পৃ- ১৪৫ , সহীহ বুখারী প্রথম খন্ড পৃ- ৪৫৮ )
বিষয়: বিবিধ
১১২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন