কলিগ কথন-২

লিখেছেন লিখেছেন রোকন উদ্দিন ২৭ মে, ২০১৩, ১০:২৪:৪৪ রাত

আজ সকাল থেকেই আকাশ থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ঝড়ছে। অফিসে ঢুকে লক্ষ করি কলিগের মুখটা আকাশের মতোই ভার। আমি মনে মনে এর কারণ জানার জন্য উৎসুক হলেও কাজের চাপে তার সাথে কথা বলার কোন সুযোগই পেলাম না। লাঞ্চের পর আমাদের অফিসে একটু আড্ডার সুযোগ পাওয়া যায়। আমি সেই সুযোগের অপেক্ষায় রইলাম। দুপুরের খাওয়া শেষে আমার যেতে হলো না, কলিগ নিজেই এলেন আমার কাছে। উদাস কন্ঠে বললেন, ‘সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে তো ঝামেলাই হয়ে গেল।’

‘কী ঝামেলা?’ আমার সরল প্রশ্ন।

কলিগ রাগে গর গর করে উঠলেন, ‘আরে ভাই মেয়াদের শেষ প্রান্তে কোন সরকার কখনো এত বড় ঝুঁকি নেয়? আমাদের নেত্রী এক ইস্যু ঢাকতে আর এক ইস্যু খাড়া করার যে তরীকা চার বছরে ফলো করেছেন, চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ছিল সেরকম একটি কাউন্টার ইস্যু। ‘হেফাজত’ আর ‘আল্টিমেটাম’ ইস্যু চলে যাবার পর নেত্রীর উচিৎ ছিল আদালতকে ব্যবহার কইরা এই কাউন্টার ইস্যুকে হিমাগারে পাঠানো। কিন্তু নেত্রী কী করলো, বিএনপি-জামাতের একক প্রার্থী থাকে কিনা বা বিএনপির একাধিক প্রার্থী দাঁড়িয়ে থাকে কিনা সেই দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় বইসা রইল। এখন কী হলো দেখেন, চারটা সিটিতেই আওয়ামী লীগকে লড়তে হচ্ছে বিএনপি-জামাতের একক প্রার্থীর সাথে।’

‘বুঝলাম, কিন্তু এখানে ঝুঁকির কী আছে? আমার কন্ঠ স্বাভাবিক।

‘ঝুঁকির কী আছে মানে?’ কলিগ তার নেত্রীর উপর মহা খাপ্পা। ‘এই নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের যদি ভরাডুবি হয় তাইলে কী হবে? মেয়াদের শেষে আইসা সারা দেশের নেতা-কর্মী-ভোটারদের কনফিডেন্স যাবে নষ্ট হয়ে। এমনিতেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, নারায়নগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দল যেভাবে মাইর খাইছে তাতে সারা দেশের লোকাল নেতা-কর্মীরা এলাকায় বিএনপি-জামাতের সাথে সমঝোতা কইরা চলতেছে যাতে আগামিতে বিএনপি ক্ষমতায় আসলেও যেন এলাকা ছাড়তে না হয়। এখন এই শেষ মুহূর্তে সিটিগুলোতে দল হারলে আগামি জাতীয় নির্বাচনে ভোটের ক্যাম্পেইন করার মতো লোক খুঁইজা পাওয়া যাবে না। নেত্রীর ওভার কনফিডেন্সই দলটারে ধ্বংশ কইরা দিতেছে।’

আমি বললাম, ‘কেন ভাবতেছেন যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হেরে যাবে? এমনও তো হতে পারে যে কমপক্ষে দুটি সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জিতে আসলো। আর তাছাড়া গাজিপুর সিটিতেও ইলেকশন হইতেছে। এখানে তো আওয়ামী লীগের অবস্থা অনেক ভালো।’

কলিগ কন্ঠ নামিয়ে ফিস ফিস করে বললেন, ‘ভাই বাস্তব বড় কঠিন। কামরান আর লিটন যা করছে তাতে সিলেট ও রাজশাহীতে হেরা সেকেন্ডও হতে পারে কিনা দেখেন। আর খুলনা সিটি হারানোর জন্য এক পদ্মা সেতুই যথেষ্ট। বরিশাল আর গাজিপুরের কথা বলতেছেন? বাংলাদেশের নাগরিকেরাই তো ভোট দেবে নাকি? আপনি লেইখা নেন, একটা সিটিতে জিততে পারবে না আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।’

আমি মাথা নাড়ি। ‘হুম। তাইলে এখন নেত্রীরে আপনে কী করতে কন?’

‌কলিগ চেয়ার সরিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। তার নিজের ডেস্কে যাওয়ার সময় হয়েছে। যাওয়ার সময় কানে কানে বললেন ‘যেমনে হোক এই সর্বনাশা ইলেকশন ঠেকাইতে অইবো! নাহলে আওয়ামী লীগের কপালে বহুত খারাপি আছে।’

কলিগ চলে গেলে আমি আমার ফাইলপত্রে মনযোগ দিলাম। অনেক কাজ পড়ে আছে।

বিষয়: রাজনীতি

১২৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File