আমার আওয়ামী লীগার মামা
লিখেছেন লিখেছেন রোকন উদ্দিন ২৪ মে, ২০১৩, ১২:৩৭:৪৩ দুপুর
সেদিন সস্ত্রীক আমার এক মামা শ্বশুরের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। তাঁর বাসায় এটাই ছিল আমার প্রথম যাওয়া। মামার বসার ঘরে দেখতে পেলাম শেখ মুজিবের ছবি দেয়ালে লটকানো। আমি ম্যাডামের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে তিনি আমাকে কানে কানে বললেন মামা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেন, কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে দলীয় কোন কর্মকান্ডের সাথে তিনি সম্পৃক্ত নন।
মামা সর্ম্পকে আরও যা জানলাম তা হলো তিনি ব্যবসা করেন এবং মোটামুটি স্বচ্ছল। তার দু্ই ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করছে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বেশ ধর্মপরায়ণ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে আদায়ের চেষ্টা করেন। তাছাড়া সামনের বছর তিনি সস্ত্রীক পবিত্র হজ্ব করার নিয়ত করেছেন (এই ঘটনা বছর খানেক আগের। আল্লাহর কৃপায় তিনি সস্ত্রীক হজ্ব করে আসতে সক্ষম হয়েছেন)। মামার সাথে আলাপ করে বুঝলাম তিনি খুব সজ্জন ও মাই ডিয়ার টাইপের মানুষ। মামীও বেশ দিলখোলা ও অতিথিপরায়ণ মহিলা। তাঁরা উভয়ে আমাদের খুব আদর আপ্যায়ণ করলেন। তাঁদের আদর-ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার সময় আমার নিজের মৃত মামা ও বিধবা মামীর কথা মনে পড়ছিল খুব।
মামার বাসা থেকে যখন বিদায় নেই তখন রাত প্রায় দশটা এবং আকাশ থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। তার উপর বিদ্যুৎও চলে গেছে। পরদিন সকাল ছয়টার বাসে আমার ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেয়ার কথা। তাই রাতটা মামার বাসায় থেকে যাওয়ার জন্য মামা-মামীর শত অনুরোধকে উপেক্ষা করতে হলো। মামা বৃষ্টিতে ভিজে টর্চ হাতে অনেক দূর থেকে একটি অটো রিকশা ভাড়া করে আনলেন। আমি মামার আতিথেয়তা ও ত্যাগ দেখে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেললাম।
মামার সাথে ওটাই ছিল আমার প্রথম সাক্ষাৎ, তাই তার রাজনৈতিক সমর্থনের বিষয়ে আমি কোন আলাপ তুলিনি। তিনিও আমার রাজনৈতিক অবস্থান জানা স্বত্বেও এ সম্পর্কে কোন কথা বলেননি।
অটো রিকশায় চেপে বাসায় ফেরার পথে ভাবছি মামার তুলনায় আমি কতই না ভালো আছি। মামা এই দুনিয়ায় এমন একজন নেতাকে বেছে নিয়েছেন যিনি ভুলের ঊর্ধে নন। শেখ হাসিনাকে সমর্থন করার কারণে শেখ হাসিনার সব অপকর্মকেও মামার সমর্থন করতে হচ্ছে। শেখ হাসিনা গণহত্যা করলে, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করলে সেই পাপের একটি অংশ মামার ঘাড়েও এসে পড়ছে। অথচ মামা হাসিনার এই অপকর্মগুলোর এক টাকারও বেনিফিট পাচ্ছেন না।
মামা এত নামাজ-রোজা-হজ্ব পালন করছেন আল্লাহর ক্ষমা পাবার আশায়, গোনাহ মাফের আশায়, অথচ শুধু সমর্থন করার কারণে তাকে খামাকাই একগাদা গোনাহর ভাগীদার হতে হচ্ছে। এমনকি এই সমর্থনের কারণে তার সব আমল নষ্ট হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা আছে। এ সম্পর্কে বিখ্যাত একটি হাদীস আছে। হারেস আল-আশআরী (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, ‘... আর যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের নিয়ম-নীতির দিকে লোকদেরকে আহ্বান জানাবে সে জাহান্নামের জ্বালানী হবে, যদিও সে রোযা রাখে, নামায পড়ে এবং নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করে।’ (আহমাদ, তিরমিযী)
অন্যদিকে আমি এমন একজন নেতাকে আমার আদর্শ হিসেবে বেছে নিয়েছি যিনি সকল মানবীয় ভুলের ঊর্ধ্বে এবং যিনি স্বয়ং আল্লাহর নির্দেশনায় পরিচালিত। তাই আমি হয়তো শুধু আমার অপরাধেরই শাস্তি পাবো। আমার আদর্শ নেতার যেহেতু কোন অপরাধ নেই, সেহেতু তাকে সমর্থন করার জন্য কোন শাস্তি আমি পাবো না। বরং আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক তার রাসুলকে (সা) নেতা হিসেবে মেনে নেয়ার জন্য আশা করা যায় আমি আল্লাহর কাছে পুরস্কৃত হবো। আল্লাহ বলেন, ‘বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’(সূরা আলে ইমরান:৩২)।
হায়! আমরা যদি বুঝতাম, দুনিয়ার নেতাকে নেতা মানার পরিণাম কত মারাত্মক, আর রাসুলকে (সা) নেতা মানার পরিণাম কত আনন্দের!
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন