দ্বীনের ব্যাপারে জবরদস্তি
লিখেছেন লিখেছেন রোকন উদ্দিন ১৬ মে, ২০১৩, ০৬:০৪:০০ সন্ধ্যা
মুসলিম নামধারী হয়েও যারা ইসলামকে মসজিদের ভেতরে বন্দী রাখতে চায় এবং রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারণী কক্ষের ভেতরে ইসলামের প্রবেশকে যারা নিষিদ্ধ দেখতে চায় তাদের একটি প্রিয় আয়াত হলো: দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই (সূরা আল বাকারা: ২৫৬)।
এই ভদ্রলোকেরা এই আয়াত ব্যাখ্যায় বলেন যেহেতু দ্বীন মেনে চলতে বাধ্য করার এখতিয়ার ইসলাম কাউকে দেয়নি সেহেতু দ্বীন থাকবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে, যার ইচ্ছা মানবে, যার ইচ্ছা মানবে না।
সূরা বাকারার এই আয়াতটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এই লোকগুলো যে চাতুর্যের আশ্রয় নেয় তা হলো দ্বীন মেনে চলার ক্ষেত্রে জবরদস্তি নেই এই কথাটি কার জন্য প্রযোজ্য, মুসলিমের জন্য নাকি অমুসলিমের জন্য, এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি অমীমাংসিত রেখেই তার এই আয়াত থেকে ফায়দা লাভ করতে চায়।
এই আয়াতের প্রকৃত গোমরটা আসলে এখানেই। যারা কুরআন সম্পর্কে সামাণ্য ধারনাও রাখেন, তারা সহজেই বুঝতে পারেন যে দ্বীনের ব্যাপারে জোর জবরদস্তি নেই বলতে বোঝানো হয়েছে যে কোন লোককে দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার জন্য বাধ্য করা চলবে না।
কিন্তু দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে ইসলামের সীমার মধ্যে প্রবেশ করার পর দ্বীনের ব্যাপারে জোর জবরদস্তি নেই এই রেফারেন্স ব্যবহার করে কোন মুসলিমকে শিরক করা, নামাজ-যাকাত পরিহার করা, মদ, জুয়া, জেনার সাথে সম্পৃক্ত হওয়া, কিংবা রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর বিধি বিধান চালু করার বিরোধিতা করার অনুমোদন ইসলাম দেয় না। এ ব্যাপারে আল কুরআনের সুস্পষ্ট কয়েকটি আয়াত নিচে উল্লেখ করছি।
‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ স্বীয় দ্বীন (ইসলাম) হতে ফিরে যায় এবং কাফের রূপে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের কর্মসমূহ নিষ্ফল হয়ে যাবে। তারাই জাহান্নামের অধিবাবাসী এবং সেখানে তারা থাকবে চিরকাল’। সূরা বাকারা :২১৭।
‘যারা নিজেদের নিকট হেদায়তের পথ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর তা পরিত্যাগ করে, শয়তান তাদের কাজকে শোভন করে দেখায় এবং তাদেরকে মিথ্যা আশায় প্রলুব্ধ করে’। সূরা মুহাম্মদ:২৫।
‘আল্লাহ কীভাবে সৎপথে পরিচালিত করবেন সেই সম্প্রদায়কে, যারা ঈমান আনয়নের পর ও রাসূলকে সত্য বলে সাক্ষ্য দান করার পর এবং তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসবার পর আবার কুফরি করে। আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না’। সূরা আলে ইমরান:৮৬।
এমনকি দ্বীনের ব্যাপারে জোর জবরদস্তি নেই এই আয়াতাংশের পরবর্তী অংশেও স্পষ্টভাবে আল্লাহ বলে দিয়েছেন যে, হেদায়াত ও গোমরাহী সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি জিনিস, যে গোমরাহীর পথকে পরিহার করে হেদায়াতের পথকে আঁকড়ে ধরবে সেই সঠিক পথপ্রাপ্ত।
‘দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। নিঃসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন যারা গোমরাহকারী ‘তাগুত’দেরকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করবে এমন সুদৃঢ় হাতল যা কখনো ভাঙবে না। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন।’ সূরা বাকারা:২৫৬।
এখানেও বোঝা যাচ্ছে হেদায়াতপ্রাপ্ত হওয়ার পর অর্থাৎ দ্বীন গ্রহণ করার পর গোমরাহীর পথ অবলম্বন করার অনুমতি ইসলাম দেয় না।
সুতরাং এটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে দ্বীনের বিষয়ে জবরদস্তি নেই এই আয়াতকে ব্যবহার করে কোন মুসলিম ইসলামের বিধি বিধানকে অগ্রাহ্য করার এখতিয়ার রাখে না।
যারা কুরআনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
১১৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন