চোর-বাটপারদের সঙ্গে বসতে কেন আগ্রহী হলেন তিনি?
লিখেছেন লিখেছেন রোকন উদ্দিন ০২ মে, ২০১৩, ০৯:৩১:১২ রাত
বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী
চোর-বাটপারদের সঙ্গে বসে কী হবে
নিউইয়র্ক প্রতিনিধি | তারিখ: ২৬-০৯-২০১১ (প্রথম আলো)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে বৈঠকে বসার প্রয়োজনীয়তা নাকচ করে দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা প্রশ্ন করে বলেন, ‘চোর-বাটপারদের সঙ্গে বসে কী হবে? যারা অরফানেজের টাকা মেরে খায়, তাদের সঙ্গে বসে কী লাভ। বসলেই তো বলবে দুর্নীতিবাজ ছেলেকে ছেড়ে দাও। যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দাও।’ তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে কোনো সুফল পাওয়া যাবে বলেও তিনি মনে করেন না।
প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে গত শনিবার জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বিএনপির নেত্রীর এখন একটাই দাবি, তাঁর দুর্নীতিগ্রস্ত ছেলেদের মুক্তি। সেই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ এবং দুর্নীতি ও বিদেশে অবৈধভাবে অর্থ পাচারের মামলা প্রত্যাহার। তাঁদের আন্দোলনের উদ্দেশ্যও অভিন্ন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের বিরুদ্ধে এখন খালেদা জিয়া আন্দোলনের ডাক দিচ্ছেন। অথচ একটা সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করায় আমাদের বিরুদ্ধে অত্যাচার-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ হতে পারে না। তারপর বাধ্য হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করেছিলেন। তাঁর কাছে প্রশ্ন, এখন উনি কোন পাগলের সন্ধান পেয়েছেন?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিরূপ বাস্তবতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছেন। আমরা আদালতের সেই সিদ্ধান্তকে সঠিক মনে করি।’ তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াই নির্বাচন হবে। নির্বাচনে সবাই অংশ নেবে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও সার্বভৌম। আমরা নির্বাচন কমিশনের কোনো কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করব না।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, পররাষ্ট্রসচিব মিজারুল কায়েস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ।
বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে তাঁর ১১ দিনব্যাপী সফরের বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরেন।
‘ইয়াজউদ্দিন, ফখরুদ্দীন সবাই খালেদা জিয়ার লোক’: সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে মাত্র একবার ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে এবং তা হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাধ্যমে। জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন করেছি।’ তিনি বলেন, ‘সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের ইয়াজউদ্দিন, ফখরুদ্দীন, মইনুদ্দিন—সবাই খালেদা জিয়ার লোক ছিলেন। নয়জন সেনা কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে জেনারেল মইনকে সেনাপ্রধান করেছিলেন খালেদা জিয়া। মনে করেছিলেন, তিনি তাঁকে রক্ষা করবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হয়েছে, সেটা সবাই জানেন।’
দু-একটি হরতালে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব নয়: বিরোধী দলের আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দু-একটি হরতাল বা আন্দোলন করে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব হবে না। তবে বিরোধী দল তাদের অস্তিত্বের স্বার্থে কিছুটা আন্দোলন করুক, এটা আমরাও চাই।’ তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে তারা আন্দোলন করে। অথচ ৬০ টাকা মূল্যে প্রতি লিটার তেল কিনে ৪০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে জনগণের স্বার্থে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাঁরা কেন আন্দোলন করছেন, এটা আমাদের জানা আছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা চুরি করেছেন, দুর্নীতিবাজ ছেলেকে বাঁচাতে চান ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ব্যাহত করাই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য। তবে আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, দুর্নীতি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। এই বিচার না হলে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে না।’
বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ দুর্নীতিবাজদের পক্ষে দাঁড়াবে না। কাজেই তারা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। তিনি আন্দোলনের নামে জনগণকে কষ্ট না দেওয়ার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান।
‘এটা কে বলেছে?’: এই সরকারের সময়ও দুর্নীতি আছে। এটাকে বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে সহনীয় পরিবেশে নামিয়ে আনতে হবে—বিমানমন্ত্রী জি এম কাদেরের এমন মন্তব্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কে বলেছে? ও, এরশাদের ভাই জি এম কাদের? সে তার ভাইয়ের কথা মনে করে এ কথা বলতে পারে। আওয়ামী লীগের সরকারে দুর্নীতি হলে এই উন্নতি করা সম্ভব হতো না। আরও আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারতাম না।’ তিনি বলেন, ৪০ বছরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল ১০-১১ বছর। আর অন্যরা ছিল বাকি সময়। দুর্নীতির সংস্কৃতি চালু করেছে তারাই।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার সরকারের কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই।’ তিনি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক উন্নয়নের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘দেশ বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকার রাজনীতি আমি করি না।’
‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ভোট দেব’: প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ সব সময় ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে থাকবে। প্রয়োজন হলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে আমরা ভোট দেব।’
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ও মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার দেওয়া ভোজসভায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ওবামা বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চান এবং বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ ব্যক্ত করেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা আমাকে বলেছেন, দেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে তাঁর মাথার চুল পেকে যাচ্ছে। জবাবে আমি তাঁকে বলেছি, এটা তো প্রথম মেয়াদ, তাই এখনো কিছু চুল কালো দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় মেয়াদে এগুলোও পেকে যাবে।’
শান্তি সমাবেশ: শেখ হাসিনা শনিবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য দেওয়ার সময় সংলগ্ন সড়কে আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা শান্তি সমাবেশ করেন। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের নেতা খালিদ হাসান, সিদ্দিকুর রহমান, সাজ্জাদুর রহমান, নিজাম চৌধুরী, কাজী কায়েস, আবদুর রহমান প্রমুখ।
বিএনপির বিক্ষোভ: একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও সমমনারা বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এতে নেতৃত্ব দেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা জিল্লুর রহমান, সোলেমান ভূঁইয়া, আবদুল লতিফ, আবু সাঈদ আহমেদ, মাওলানা আতিকুল্লা, মনজুর আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন