হেফাজতের লংমার্চ: কী পেলাম
লিখেছেন লিখেছেন রোকন উদ্দিন ০৬ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:৪৮:১৭ রাত
হেফাজতের আজকের লংমার্চ এবং লংমার্চ পরবর্তী সমাবেশ সর্বাংশে সফল, যদিও খুব শক্ত কর্মসূচির ঘোষণা না আসায় আমার মনটা একটু খারাপ। আমি ব্যক্তিগতভাবে আশা করেছিলাম কমপক্ষে দুটি রাত মতিঝিলে অবস্থান করে ধর্মদ্রোহীদের পৃষ্ঠপোষক জালেম সরকারকে খানিকটা ব্যাকফুটে পিছিয়ে দিতে পারলে হয়তো ভালো হতো। কিন্তু মনের সব আশা তো আর পূরণ হয় না। যাই হোক, আজকের সমাবেশ বিষয়ক আত্মতৃপ্তির যে কয়েকটি জায়গা আমাকে উৎসাহিত করেছে সেগুলো একটু পর্যালোচনা করছি।
১। সরকারের বি টিমের ডাকা হরতাল, সি টিমের ডাকা অবরোধ, পথে পথে বাধা, বাস, ট্রেন, লঞ্চ বন্ধ করে দেয়া স্বত্তেও আজকের সমাবেশে কয়েক লাখ জনতার উপস্থিতি প্রমাণ করেছে এদেশে ইসলামপন্থীদের অবস্থান দুর্বল তো হয়ইনি, বরং অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে শক্তিশালী হয়েছে।
২। ২০০১ এর সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখে আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলার পর সারা বিশ্বের মুসলিমদের গায়ে জঙ্গী তকমা লাগানোর যে সর্বগ্রাসী প্রচারণা শুরু হয, বাংলাদেশও কোন অংশেই এর বাইরে ছিল না। মুসলিম মাত্রই জঙ্গী ও সন্ত্রাসী পশ্চিমা মিডিয়ার এমন ঢালাও প্রচারণার ঢেউ বাংলাদেশেও আছড়ে পড়ে। ২০০৪ সালে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা জেএমবি কর্তৃক বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা, পরবর্তীতে বিভিন্ন বিচারালয়সহ সরকারী স্থাপনায় আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনাগুলো পশ্চিমা মিডিয়ার জ্বালানো আগুনে ঘি ঢালে। ফলে গত দশকের শুরু থেকে অদ্যবধি প্রাকটিসিং মুসলিমদেরকে জঙ্গী, ব্যাকডেটেড, অশিক্ষিত, ধর্মান্ধ ইত্যাদি গালি দিয়ে কোনঠাসা করার একটা প্রবণতা সমাজে চালু হয়। ধর্মপরায়ণ মুসলিমদের মধ্যেও এসময় আত্মবিশ্বাসের খানিকটা সংকট দেখা দেয়। একটি প্রেসার গ্রুপ হিসেবে সমাজে মুসলিমদের যে মজবুত অবস্থানটি ছিল, একসময় তারা নিজেরাই তা ভুলতে বসে। বয়োবৃদ্ধ শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের দীর্ঘদিনের নিষ্ক্রীয়তা এবং মৃত্যু, মুফতি আমিনীর মাঝে মাঝে ঝলসে ওঠার চেষ্টা এবং অবশেষে মৃত্যু বাংলাদেশের ধর্মপরায়ণ মুসলিমদেরকে অভিভাবকশূণ্য করে ফেলে। এমন নাজুক অবস্থায় দেশ যখন ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মদ্রোহীদের উল্লাস ও শয়তানী কারবারে সয়লাব তখন হেফাজতে ইসলামের ডাকে ইসলামপন্থী বিভিন্ন দল ও মতের কর্মীদের ঐক্য নিঃসন্দেহে একটি আশা জাগানিয়া খবর। ৬ এপ্রিলের লংমার্চের মূল অর্জনটা এখানেই। আজ সংকীর্ণ দলাদলি ভুলে মুসলিমরা এক পাতে রুটি কলা খেয়ে প্রমাণ করেছেন, বিভেদ নয়, ঐক্যই ঈমানকে মজবুত করে। আজ মুসলিমরা আল্লাহর অলী আল্লামা শফীর মতো একজন সর্বজনগ্রাহ্য অভিভাবক পেয়েছেন। মুসলিমদের পূর্ণ আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে যে তাদেরকে মাইনাস করে বাংলাদেশে কারোরই কোন কিছু করার সুযোগ আর অবশিষ্ট নেই। মুসলিমরা প্রমাণ করেছেন জঙ্গী বলে গালি দিয়ে তাদেরকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়ার দিন শেষ হয়ে গেছে। আজ মুসলিমরা নিজেদের সেই শক্তিকে চিনতে পেরেছেন যে শক্তি ঝড় হয়ে মিথ্যার পাহাড়কে টলিয়ে দিতে সক্ষম। ৬ এপ্রিল ইসলামবিরোধীদের জন্য যতটা ভয়ের, ইসলামপন্থীদের জন্য তার চাইতেও বেশি আনন্দের দিন।
৩। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের প্রায় অর্ধ ডজন মন্ত্রী এবং আওয়ামী বলয়ের নেতারা বার বার বলেছেন যে লংমার্চে জামায়াত-শিবির আসবে এবং নাশকতা করবে। আজকের সমাবেশ সরকারের সেই বক্তব্যকে মিথ্যে প্রমাণ করেছে। এত বড় সমাবেশ যে এত সুশৃঙ্খলভাবে করা সম্ভব তা দেখিয়ে দিয়েছেন ইসলামপন্থীরা। তারা প্রমাণ করেছেন ইসলামী ভ্রাতৃত্ব্ই একমাত্র শৃঙ্খলার ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা গড়ে তুলতে পারে, পৃথিবীর অন্য কোন শক্তির পক্ষে এতটা দৃঢ়তা প্রদর্শন করা সম্ভব নয়।
হেফাজতে ইসলাম নামক যে ছাতাটি বাংলাদেশের মুসলিমদেরকে একতাবদ্ধ করেছে সেই ছাতাটি আল্লাহর রহমতের বারিধারায় সিক্ত হোক, করুনাময়ের কাছে এই প্রার্থনা করছি।
বিষয়: রাজনীতি
১২১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন