শত্রু কমানো মিত্র বাড়ানো
লিখেছেন লিখেছেন অপ্টিমিস্ট রোকন ১৮ জুন, ২০১৩, ১০:০৩:৫২ সকাল
ইসলামপন্থী কিন্তু জামায়াতবিরোধী বেশিরভাগেরই প্রধান প্রশ্ন হলো, জামায়াত কেন একটি কুফরি মতবাদে বিশ্বাসী দলের সাথে এক হয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করতে চায়? আমাদের জন্যে কি আল্লাহর সাহায্য যথেষ্ট নয়? এই প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাব এরকম।
যতক্ষণ নিজে পূর্ণ শক্তি অর্জন না করা যায় ততক্ষণ পর্যন্ত শত্রুর সংখ্যা কমিয়ে, মিত্রের সংখ্যা বাড়িয়ে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করা নবী (সা) এর অনুসৃত একটি কৌশল। এর পিছনে নিম্নোক্ত দলিল দিচ্ছি।
দলিল-১: চাচা আবু তালিব নিজে ইসলাম গ্রহণ না করলেও ভাতিজা নবীকে (সা) রাজনৈতিক আশ্রয় দিযেছিলেন। নবী (সা) তো বলতে পারতেন, যেহেতু আপনি ইসলাম কবুল করেননি, সেহেতু আমি আপনার আশ্রয় প্রত্যাখ্যান করলাম। কিন্তু নবী (সা) তা করেন নি। তিনি নিজে পূর্ণ শক্তি অর্জন না করা পর্যন্ত আবু তালিবের আশ্রয়ে দাওয়াতের কাজ চালিয়েছেন। এথেকে প্রমাণিত হয় দ্বীনের প্রচার-প্রসারের খাতিরে প্রয়োজনে অমুসলিমের সাহায্য নেয়াও জায়েয।
দলিল-২: মদীনায় হিজরতের পূর্বে নবী (সা) তার সাহাবীদেরকে দুই দফায় আবিসিনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন রাজনৈতিক আশ্রয়ের সন্ধানে। অথচ তিনি জানতেন আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাসী একজন খৃষ্টান। এ থেকে প্রমাণিত হয় শত্রুর হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে প্রয়োজনে খৃষ্টানের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা জায়েয।
দলিল-৩: মদীনায় হিজরতের পর নবী (সা) মদিনার বেশ কয়েকটি ইহুদি গোত্রের সাথে চুক্তিবদ্ধ হযেছিলেন। এই চুক্তির একটি অন্যতম ধারা ছিল এ রকম। মদীনায় ইহুদিরা আক্রান্ত হলে মুসলিমরা এগিয়ে আসবে। মুসলিমরা আক্রান্ত হলে ইহুদিরা এগিয়ে আসবে। এ থেকে প্রমানিত হয় বৃহৎ শত্রুর মোকাবেলায় মিত্র বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনে ইহুদিদের সাথে চুক্তি করা জাযেয।
দলিল-৪: হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় নবী (সা) কাফিরদের সাথে লিখিত চুক্তি করেছিলেন যার একটি শর্ত ছিল এরকম যে আগামি দশ বছর যুদ্ধ বন্ধ থাকবে। এখানেও শত্রু কমানোই ছিল রাসুলের (সা) অন্যতম একটি উদ্দেশ্য।
উপরোক্ত চারটি দলিল থেকে দেখা যায় রাসুল (সা) দ্বীনকে বিজয়ী করার স্বার্থে বিভিন্ন সময় শত্রু কমিযে মিত্র বাড়ানোর কৌশল নিযেছেন। এমনকি তিনি অমুসলিম ও খৃস্টানের কাছেও আশ্রয় গ্রহণ করেছেন এবং ইহুদি ও মুশরিকদের সাথে লিখিত চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছেন। তবে প্রসঙ্গিকভাবে একথাটিও এখানে বলে রাখছি যে, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা আল মায়িদার ৫১ নং আয়াতে বলেছেন, "হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।" এই আয়াতে ইহুদি-খৃষ্টানকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে কিন্তু ইহুদি খৃস্টানদের সাথে চুক্তি করতে নিষেধ করা হয়নি। চুক্তি তো বেশিরভাগ সময় বন্ধু নয়, বরং শত্রুদের সাখে করা হয়ে থাকে। আর তাছাড়া কুরআনের ঐ পলিসির মর্মার্থ যদি এরকম হয় যে ইহুদি-খৃস্টানের সাথে চুক্তিও করা যাবেনা, তাদের কাছে আশ্রয়ও চাওয়া যাবে না, তাহলে নবী (সা) ইহুদিদের সাথে চুক্তিও করতেন না, খৃস্টানদের কাছে আশ্রয়ও চাইতেন না।
যাই হোক, উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তর হলো, জামায়াত বিএনপির সাথে মিলে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে নামেনি। বরং পূর্ণ শক্তি অর্জন না করা পর্যন্ত জামায়াত সাময়িকভাবে মিত্র বাড়িযেছে, শত্রু কমিয়েছে। আমাদের জন্য অবশ্যই আল্লাহর সাহায্যই যথেষ্ট, তবে উটের রশি বাঁধার পরেই আল্লাহর উপর ভরসা করতে বলা হয়েছে। উটের রশি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করলে সেই ভরসা কোন কাজে দেয় না, উট পালিযে যায় অজানার উদ্দেশে।
বিষয়: রাজনীতি
১৫৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন