কলিগ কথন-৯,১০
লিখেছেন লিখেছেন অপ্টিমিস্ট রোকন ১৬ জুন, ২০১৩, ০২:২৫:২৩ দুপুর
কলিগ কথন-৯
চার সিটির নির্বাচনের ফল দেখে ফোন দিলাম কলিগকে। ফোনের অপর প্রান্তের কণ্ঠটা অন্য রকম ঠেকলো। 'কী খবর ভাইজান?'
শত চেষ্টা করেও আমি আমার কন্ঠ থেকে খুশির ভাব দূর করতে পারলাম না। 'নেত্রী কত গোলে হারসে শুনছেন?'
'চার-শূণ্য গোলে।' কলিগের কন্ঠে হতাশা লুকানোর চেষ্টা নেই। 'আগেই কইছিলাম যেমনে হোক এই নির্বাচন বন্ধ করতে হইবো। কিন্তু কে শোনে কার কথা। নেত্রীর জিদ আর স্বেচ্ছাচারিতা দলটাকে ডোবালো।'
'হুম। কিন্তু এই ভুলের খেসারত হিনেবে কী কী মাশুল গুনতে হবে নেত্রীকে?' আমি ভবিষ্যৎটা বোঝার চেষ্টা করি।
'চড়া মাশুলরে ভাই, অনেক চড়া মাশুল গুনতে হবে নেত্রীকে। আজ মনটা খুব খারাপ। কথা বলতে ভালো লাগতেছে না। কাল অফিসে আইসা সব বলবো। রাখি আজ।'
আমি ফোন রেখে টিভি দেখতে বসি। খবর পাই, রাজশাহীতে ছাত্রলীগ মিছিল করতে গিয়ে র্যাবের পিটুনি খেয়েছে। ভাবি, এভাবেই আল্লাহ তায়ালা জালিমদের অপমানিত- লাঞ্ছিত করেন। আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। সকল প্রশংসা মহান রব্বুল আলামিনের।
কলিগ কথন-১০
সকালে অফিসে এসেই উসখুস করি। কলিগ গম্ভীর মুখে তার কাজে মনযোগ দেয়ার চেষ্টা করছেন। আমি বুঝতে পারি তিনি কাজে মনযোগ দিতে পারছেন না, বরং নিজের সাথে যুদ্ধ করছেন। দুপুরে একটু অবসর পেয়ে ধরলাম তাকে। "আওয়ামী লীগের লোকেরা কইতাছে চার সিটিতে হারলেও তাদের একটা লাভ হইছে, দেশে বিদেশে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করতে সক্ষম হইছে যে তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।"
কলিগের মুখ আরও গম্ভীর হলো। "যারা এই কথা কয়, তারা রাজনীতির অ আ ক খও জানে না। যে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিল না, সেই জনগণকেই আওয়ামী লীগ এই বইলা বোকা বানাইবো যে আমরা ভালো মানুষ, নির্বাচনে মোটেও দুষ্টুমি করবো না, আর আওয়ামী লীগ থেইকা মুখ ফেরানো সেই জনগণ নীরবে তা মাইনা নিবো, এটা যারা আশা করে তাদের রাজনীতি করা ঠিক না।"
"তাইলে বলতে চাইতেছেন যে, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্ষতি হইছে?" আমি কলিগকে বাজানোর চেষ্টা করি।
কলিগের কাটা ঘায়ে যেন নুনের ছিটা পড়লো। "অনেক ক্ষতি হইছে। প্রথমত, সারা দেশের বিরোধী শিবিরে প্রবল আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হইছে আর সরকার শিবিরে সৃষ্টি হইছে হতাশা। দ্বিতীয়ত, পুলিশ-প্রশাসন-আমলা-আর্মি-জুডিশিযারী-কূটনৈতিক-সাংবাদিক-বিদেশীদের কাছে একটা শক্ত বার্তা চইলা গেল যে আগামিতে সরকার গঠন করতেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। তৃতীয়ত, মক টেস্টের এই ভূমিধ্বস ফলাফল চূড়ান্ত ফলাফলে অনিবার্য প্রভাব ফেলবে।"
"হুম, বুঝলাম। কিন্তু এই অবস্থা মাইনা নেয়া ছাড়া কী ই বা করার ছিল বলেন?"
কলিগের কণ্ঠে স্পষ্ট হতাশা। "এই ইলেকশন দেয়াটাই আসলে ঠিক হয় নাই। নেত্রী আমাদের জুয়া খেলতে খুব ভালোবাসেন। অনেক বড় বাজি ধরে জুয়া খেলা তার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। কয়েকটা বাজিতে জেতার পর ওভার কনফিডেন্ট হইয়া নির্বাচনের এই বাজি ধরেছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই বাজিতে সর্বস্ব খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তিনি।"
"তো এখন আপনে নেত্রীরে কী করতে কন?"
কলিগ গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বললেন, "তত্বাবধায়কের দাবি মাইনা নেযাই নেত্রীর জন্য ভালো হইবো। কারণ তিনি নিজের অধীনে যে নির্বাচন করতে চাইতেছেন, সেই নির্বাচন শেষ পর্যন্ত তিনি করতে পারবেন না। বিশেষ কইরা সিটিগুলোতে হারার পর তার এই খায়েশ আর কোনক্রমেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এখন ভালোয় ভালোয় তত্বাবধায়ক দিযা তিনি যদি নাইমা যান, তাইলে ইলেকশনে কিছু অবস্থান তিনি অর্জন করতে পারবেন। কিন্তু তত্ববধায়ক নিযা 'চুদুর বুদুর' করলে ক্ষমতা তো যাইবো যাইবো, সাথে সদলবলে জনগণের মাইর খাইয়া ভূত হইয়া যাইতে হইবো।"
কলিগের মুখে নব আবিষ্কৃত শ্লীল শব্দ 'চুদুর বুদুর' শুইনা আমি হাসি। কলিগও আমার হাসি দেখে মনে হয় সারা দিনের প্রথম হাসিটি হাসেন।
বিষয়: বিবিধ
১৯২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন