কলিগ কথন-৮
লিখেছেন লিখেছেন অপ্টিমিস্ট রোকন ১২ জুন, ২০১৩, ০৯:১০:২৮ রাত
অফিস ছুটি হয়ে গেছে। কলিগ ডেস্ক থেকে উঠেছেন, বাসার উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন। আমি পড়িমড়ি করে ছুটলাম কলিগের ডেস্কে। “জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল চেয়ে করা রিটের শুনানি আজ শেষ হইছে, রায় হবে যেকোন দিন, ফলাফল কী হবে বলেন তো দেখি?” আমার চোখে মুখে প্রবল আগ্রহ।
কলিগ এড়িয়ে যেতে চান। “বিচারকরা কী রায় দেবেন, সেটা তো বিচারকরা জানেন, আমি কেমনে কমু কন?”
আমি মরিয়া। “শোনেন ভাই, কেউ মুখে উচ্চারণ না করলেও সবাই জানে নেত্রীর টেবিল থেইকা যে ড্রাফট যাইবো, বিচারকরা সেটাই কোর্টে পইড়া শোনাইবো।”
কলিগ অফিস থেকে বেরুনোর জন্য আঁকুপাঁকু করছে, আমার এমন জটিল প্রশ্ন তাকে খানিকটা বিচলিত করে তুলল। “পরে এটা নিয়া আপনার সাথে বিস্তারিত আলাপ করবো। আপাতত একটা কথা শুইনা রাখেন। নেত্রী নিবন্ধন বাতিলের এই ইস্যুটাকে ট্রাম কার্ড হিসাবে ব্যবহার করার জন্য ঝুলায়া রাখবো কিছুদিন।”
“কী রকম?” আমার চোখে সীমাহীন কৌতূহল।
“শোনেন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হইলে এমনকি জামায়াত নিষিদ্ধ হইলেও আওয়ামী লীগের আপাতত কোন লাভ নাই, বরং ক্ষতি আছে। প্রথমত, জামায়াতের নেতারা ফিল্ডে না থাকলেও এদের ভোটাররা তো থাকবে। আগামি নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশ নেয়, তাইলে জামায়াতের সব ভোট গিয়া পড়বে বিএনপির বাক্সে। জামায়াতের কোন কেন্ডিডেট নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারলে জামায়াত অধ্যুষিত সিটগুলোতেও বিএনপির কেন্ডিডেট পাশ কইরা আসবো, ফলে বিএনপির সরকার গঠন আরও নিশ্চিত হইবো। দ্বিতীয়ত, জামায়াত নিষিদ্ধ হলে এর কর্মীরা বিএনপিতে যোগ দিয়ে বিএনপিকে আরও শক্তিশালি কইরা তুলতে পারে। তৃতীয়ত, শত্রু দমনের অনেক পুরোনো একটি কৌশল হলো ‘ডিভাইড এন্ড রুল’। জামায়াতকে বিএনপির মাঝে বিলীন হয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এসব কারণে জামায়াত নিষিদ্ধ হলে অন্য কারও লাভ হলেও হতে পারে অন্তত আওয়ামী লীগের কোন লাভ নাই। তাই আপাতত জামায়াত নিষিদ্ধ হইতেছে না। তবে...”
“তবে কী?” আমার পিপাশা মেটে না।
কলিগ মৃদু হাসলেন। “শেষ কথা একটাই, রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নাই। নেত্রী এই ইস্যুটা ঝুলায়া রাইখা জামায়াতকে এমনকি বিএনপিকেও খানিকটা টেনশনের মধ্যে রাখবো। যদি শেষমেস বিএনপি নির্বাচনে না আসে, তাহলে জামায়াতকে নির্বাচনে আনার জন্য এটাকে ট্রামকার্ড হিসাবে ব্যবহার করবো নেত্রী। জামায়াতকে ডাইকা বলবো, যদি বিএনপিরে রাইখা নির্বাচনে আসো তাহলে এই এই সুবিধা পাইবা, আর যদি ত্যাড়ামি করো তাইলে নিবন্ধন বাতিল করমু, এমনকি নিষিদ্ধও কইরা দিমু।”
“কিন্তু জামায়াত কি নেত্রীর টোপ গিলবো?” আমার কৌতুহলের শেষ নেই।
কলিগ হাঁটা শুরু করেছেন। আমিও তার পেছন পেছন হাঁটছি। “সেটা জানতে হলে ধৈর্য ধরে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ বাংলাদেশে জামায়াতই একমাত্র দল যারা কোন নেতার একক ডিসিশনে চলে না। তাই জামায়তের সেন্ট্রাল বডি কী করবে সেটা জানতে সময় লাগবে। আর তাছাড়া বাংলাদেশে জামায়াতই একমাত্র দল যারা নিজে থেকে কারও সাথে বন্ধুত্ব ভাঙ্গে না, যতক্ষণ না সেই বন্ধুটি চুক্তিভঙ্গ করে। বিএনপি নিজে থেইকা জামায়াতকে দূরে ঠেইলা না দিলে জামায়াত আঠার দল থেইকা বাইরাইয়া যাওনের সম্ভাবনা কম। এখন দেখা যাক, কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে গড়ায়। এই রিকশা দাঁড়াও।” কলিগ রিকশায় উঠেছেন। আমিও আমার পথে হাঁটা দিলাম।
বিষয়: রাজনীতি
১২৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন