কলিগ কথন-৭
লিখেছেন লিখেছেন অপ্টিমিস্ট রোকন ১১ জুন, ২০১৩, ০১:৩৩:০৭ দুপুর
সকালে অফিসে এসেই কলিগকে ডেকে নিয়ে আসলাম আমার ডেস্কে। আজকের নয়া দিগন্ত পত্রিকার দ্বিতীয় পাতার তৃতীয় কলামের ছোট্ট একটি নিউজের দিকে আঙ্গুল তুলে বললাম, এই ঘটনার ব্যাখ্যা কী?
কলিগ মনযোগ দিয়ে নিউজটা পড়লেন। আমিও তার ঘাড়ের উপর উঁকি দিয়ে দ্বিতীয়বার নিউজটা পড়লাম।
আইন প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের সংশোধনী
গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যড. কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অসাবধানতাবশত কিছু কথা উচ্চারণ করেছেন। অসাবধানতাবশত তিনি বলেছেন, 'আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের তিন নেতাকে জরিমানা এবং এর মধ্যে দুজনকে কারাদণ্ড দেয়ায় আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে তারা অযোগ্য হবেন এবং যারা সংসদ সদস্য তাদের সংসদ সদস্য পদ থাকবে না।' প্রকৃত পক্ষে তার একথা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে তার বক্তব্য হলো- 'তাদের দণ্ড বাতিল করতে হলে ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করতে হবে।' তথ্যবিবরণী।
কলিগ সংবাদপত্র খেকে মাথা তুলে বললেন, 'ঠিকই তো আছে, সমস্যা কী?'
আমি বললাম, 'আওয়ামী লীগ গত চার বছরে জামায়াতের সাথে যে আচরণ করছে, কামরুলের বক্তব্য তারই প্রতিধ্বনি। কিন্তু ঘটনা সেটা না, ঘটনা হলো সরকার তড়িঘড়ি করে এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানালো কেন? এত তড়িৎ গতিতে সরকার নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে এরকম ঘটনা তো গত চার বছরে একটাও ঘটেনি!'
কলিগ হাসলেন, 'আইনে বলা আছে দুই বছরের বেশি সাজা হলে তবেই সদস্যপদ যাবে, এই জিনিসটা হয়তো না দেইখাই কামরুল সাহেব উল্টা পাল্টা বইলা ফালাইছেন, পরে সরকার ভুল বুইঝা সংশোধনী দিছে।'
আমি নাছোড়বান্দা। 'নাহ। কামরুল না বুইঝা এইটা কইছে এটা যেমন বিশ্বাসযোগ্য না, আর সরকার সুবোধ বালকের মতো সৎ উদ্দেশ্যে তড়িঘড়ি কইরা সংশোধনী দিছে এইটাও বিশ্বাসযোগ্য না। আপনি ঝেড়ে কাশেন। সত্যি ঘটনাটা খুইলা কন।'
কলিগের মুখ এবার গম্ভীর হলো। 'এত যখন জানতে চাচ্ছেন, শোনেন তাহলে। আসলে নেত্রী চাইতাছে তার আন্ডারেই নির্বাচন করতে, এবং বাইরের দুনিয়ায় তিনি এইটাও বুঝাইতে চান যে বিএনপি না আসলেও বাংলাদেশের সব দল সেই নির্বাচনে অংশ নিছে। তত্বাবধায়ক না দিলে যদি খালেদা নির্বাচনে না আসে, তাইলে এরশাদ, ১৪ দল, ১৮ দলের দুই একটি দল, কিছু নামকাওয়াস্তে ইসলামী দল এবং সম্ভব হইলে জামায়াতকেও সেই নির্বাচনে নামাইতে চান নেত্রী। এখন ট্রাইবুনালের এই ইস্যুতে জামায়াতের একজন রানিং এমপি এবং একজন সম্ভাব্য এমপি যিনি গতবার অল্প ভোটের ব্যবধানে হারছেন তারা দুইজনই যদি আগামি নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হয়, তাইলে জামায়াতকে সেই পাতানো নির্বাচনে টাইনা আনা সম্ভব হবে না। এই জিনিসটা সরকারের মাথায় আছে বইলাই ট্রাইবুনাল ২ বছরের জেল দেয় নাই, দিছে ৩ মাসের জেল, যাতে জামায়াতের ঐ দুই নেতা নির্বাচনে অযোগ্য না হয়। কিন্তু মূর্খ কামরুল তো নেত্রীর পেটের সব কথা জানে না। সে জোসের ঠেলায় বরাবরের মতো মুখে যা আসে তাই বইলা ফালাইলো। নেত্রী এই নিউজ দেইখা তাড়াতাড়ি কইরা সংশোধনী পাঠাইছে।'
'কিন্তু এই সংশোধনী দেয়ার কী দরকার ছিল? এমনিতেই তো কোর্টে গেলে বিষয়টার ফয়সালা হয়ে যেত!' আমার কৌতুহল এখনও মেটেনি।
কলিগ অল্প হাসলেন, 'এটাই তো রাজনীতিরে ভাই! এই সংশোধনীর মাধ্যমে নেত্রী জামায়াতকে কয়েকটা বার্তা দিলেন। এক, জামায়াত এই টার্মে নিষিদ্ধ হইতেছে না। দুই, বিএনপিরে ছাইড়া দিয়া জামায়াত যদি আগামি ইলেকশনে অংশ নিতে রাজি হয়, তাইলে জামায়াতরে মোটামুটি কিছু ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। তিন, জামায়াত যদি আওয়ামী লীগের সাথে আপোষ করে, তাহলে ট্রাইবুনাল এবং আপিল বিভাগের আগামি রায়গুলো অন্য রকম হতে পারে।'
আমার বড় হয়ে যাওয়া চোখকে অগ্রাহ্য করে কলিগ তার নিজের ডেস্কে চলে গেলেন।
বিষয়: রাজনীতি
১০৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন