কলিগ কথন-৫
লিখেছেন লিখেছেন অপ্টিমিস্ট রোকন ০৮ জুন, ২০১৩, ০৪:৫১:১৭ বিকাল
কলিগের মন আজ বেজায় ফুরফুরে। আমি মনে মনে একটু উৎসুক থাকলেও কাজের চাপে তার কাছে ঘেঁষতে পারছি না। বিকেলের দিকে চা খাওয়ার ফাঁকে তার সাথে আলাপ জুড়ে দিলাম। “নেত্রী তো রাবিশ বাজেট দিল এবার।” কলিগকে খেপানোর চেষ্টা করি আমি।
“আরে রাখেন বাজেট।” কলিগ আমার পাতা ফাঁদে পাঁ দিলেন না। “এই বাজেট যে নির্বাচনী বাজেট হইবো হেইডা তো পুরাতন কথা। নতুন কথা হইলো আমগো নেত্রী আরো পাঁচ বছরের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতেছেন।”
চেহারায় “কস্কি মমিন” টাইপের ভাব এনে বললাম, “কন কি? আপনে শিউর?”
কলিগের গলায় খুশির ছাপ স্পষ্ট। “হোনেন আম্রিকা ক্লিয়ারেন্স দিছে, হেরা হাসিনারেই আবার ক্ষমতায় দেখতে চায়। বিশেষ কইরা হেফাজতকে দমন করতে গিয়া নেত্রী যে কায়দা প্রয়োগ করসে, হেই কায়দাটা হেগো খুব পছন্দ হইছে। আপনে তো জানেন, ইসলামপন্থীদের উথ্থানকে আম্রিকার খুব ডর করে। আর ইসলামিস্টদেরকে নির্মম কায়দায় দমন করা যে একমাত্র আমগো নেত্রীর পক্ষেই সম্ভব হেইডা হেরা বুইঝা ফালাইছে। আরও একটা বিষয় আছে অবশ্য।”
“কী বিষয়?” আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।
কলিগ শান্ত গলায় বলে চলেন “দিপু মনি কিছুদিন আগে জেনেভায় বইলা আইছে নেত্রী সমকামিদের অধিকারের পক্ষে, এই ঘোষণাটা ছিল আসলে আম্রিকারে এইটা বোঝানোর জন্যে যে নেত্রী আম্রিকার পছন্দের এজেন্ডাগুলো বাংলাদেশেও কায়েম করতে চায়। গওহর রিজভী গত কয়েক মাস খুব দৌড়ঝাপ কইরা আম্রিকার কাছে এই কনসেন্ট নিতে সক্ষম হইছে যে খালেদারে চাপের মধ্যে রাইখা নেত্রী আবার ক্ষমতায় আইবো, আম্রিকা যেন তাতে বাধ না সাধে।”
“কিন্তু বিষয়টা কি এত সহজ হইবো?” আমার কন্ঠে হতাশা লুকানোর চেষ্টা।
“হোনেন, সহজ হইবো না, এটা যেমন ঠিক, আবার এটাও ঠিক হেইডা একমাত্র নেত্রীর পক্ষেই সম্ভব। নেত্রী ঘোষণা দিছে ২৫ অক্টোবর সংসদ ভাইঙ্গা দিবো। পৃথিবীর অন্য দেশে যেমনে নির্বাচন হয় তেমনে আমাদেরও নির্বাচন হইবো, এর অর্থ হইলো নেত্রীর অধীনেই আগামি নির্বাচন হইতে যাইতেছে। খালেদার পক্ষে সেই নির্বাচন ঠেকানো সম্ভব হবে না।”
“খালেদা যদি ইলেকশনে না যায়?” আমি রাজনীতিটা বোঝার চেষ্টা করি।
কলিগের কণ্ঠ শীতল, “না গেলে না যাবে। আর আসলে সত্যি কথা বলতে কী, নেত্রী চাইতেছেন খালেদা যেন নির্বাচনে না যায়, তাইলে নেত্রী ফাঁকা মাঠে গোল দিতে পারবেন। বাইরের দেশগুলোতো কব্জা হয়েই আছে। হেরা তখন খালেদার কান্দন শু্ইনা ফিরেও তাকাইবো না।”
“কন কি? খালেদার কাছ থেইকা সব কূটনীতিক কি ঘুইরা দাঁড়াইবো?” কলিগের কথা বিশ্বাস করতে মন চায় না আমার।
“কেন আপনে কি ভুইলা গেলেন যে কিছু দিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডী আর শারমেন খালেদার সাথে দেখা করার টাইম দিয়াও হরতালকে দোষারোপ কইরা সেই সাক্ষাত বাতিল করছিল। এইডা দেইখাও ঘটনা বোঝেন নাই?”
ডুবন্ত মানুষ যেভাবে খড়কুটো আঁকড়ে ধরে আমি সেরকম অবস্থায়। “হুম, কিন্তু জনগণ কি এই একচেটিয়া নির্বাচন মাইনা নিবো?”
কলিগ হাসলেন। অবুঝ বালক চাচ্চুর কাছে হাস্যকর প্রশ্ন করলে চাচ্চু যেভাবে হাসে, কলিগের মুখে সেই হাসি। “হোনেন ভাই, আপনে তো এই লাইনে এখনও শিশু। জনগণ কখনোই একা কিছু করে না। কেউকেটা কারো ডাক পেলে তবেই জনগণ ঘর থেকে বাইরে আসে। খালেদার ডাকে জনগণ বাইরে আসবো খালেদার সেই ইমেজও এখন নাই, আর খালেদার বিকল্পও কেউ দেশে নাই। তো জনগণ কার ডাকে বাইরে আসবো কন?”
আমি হতাশ কন্ঠে বলি “গরিবের পক্ষে কেউ না থাকলেও আল্লাহ আছেরে ভাই।”
“হ্যাঁ, সেটাই শেষ কথা, সেটাই শেষ কথা” কলিগ এখনও হাসছেন।
আমি ধীর পাঁয়ে নিজের ডেস্কে এসে কাজ মন দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করি।
বিষয়: রাজনীতি
১৫৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন