বিজ্ঞাপনের হিরো
লিখেছেন লিখেছেন অপ্টিমিস্ট রোকন ০৫ জুন, ২০১৩, ০৬:২০:৪৫ সন্ধ্যা
সাংবাদিকতার ছাত্রদেরকে প্রথম বছরেই গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটা শেখানো হয় তা হলো নিউজ করতে গিয়ে অপরাধীরা যেন হিরোইজম না পায়। একই ঘটনা ফিল্ম বা বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও। ফিল্মের ভিলেন যদি নাচা-গানা মার-দাঙ্গা হিরোর চাইতে বেশি হিরোইজম পায়, বা বিজ্ঞাপনের কোন নেতিবাচক চরিত্রকে যদি হিরোর মর্যাদা দেয়া হয় তাহলে সমাজে এর খারাপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। কারণ সেক্ষেত্রে দর্শক-শ্রোতা-পাঠকগণ নেতিবাচক চরিত্রটিকে তাদের আদর্শ হিসেবে বেছে নিতে উৎসাহিত হয়ে থাকে।
ব্যাপারটা একটা উদাহরণ দিয়ে বলি। গ্রামীন ফোনের একটি এড দেখানো হচ্ছে বেশ কিছু দিন আগে থেকে। এক ডিজুস ছেলে (বয়স আঠার থেকে বিশ। পরনে হাফ প্যান্ট, টিশার্ট, দুই কান আর কপাল ঢেকে যাওয়া চুল, হাতে বালা) অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠল মায়ের বকুনি শুনে। উঠেই শুরু করলো মোবাইল ফোন চাপাচাপি। একটু পর দেখা গেল একদল ছেলেমেয়ে তার বাসায়। তারা সারাদিন আড্ডা দিল এবং এক সময় মায়ের বকুনি শুনে বন্ধুরা চলে গেল। মা রাগ করে ডিজুস ছেলের মোবাইল ফোন কেড়ে নিল এবং এক সময় ছেলে লুকিয়ে রাখা মোবাইলটি উদ্ধার করে আবার শুরু করলো মোবাইল চাপাচাপি। রাত বারটায় দেখা গেল ডিজুস ছেলের বন্ধুরা আশে পাশের বিল্ডিংগুলোতে আলো জ্বালিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে একটি লেখা, হ্যাপি বার্থ ডে মা। মা তার জন্মদিনে এমন অদ্ভুত উইশ পেয়ে আবেগাপ্লুত।
এই বিজ্ঞাপনের যে হিরো তার সব কাজই নেতিবাচক। প্রথমত তার ড্রেস আপ। এই ড্রেস আপ কোন ভদ্র ঘরের সন্তানের ড্রেস আপ হতে পারে না। আর তাছাড়া এই ড্রেস আপ আমাদের দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি-মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যশীলও নয়। দ্বিতীয়ত দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা, তৃতীয়ত ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল নিয়ে দীর্ঘসময় নাড়াচাড়া করা, চতুর্থত এরপর বন্ধু-বান্ধব ডেকে এনে দীর্ঘসময় বাসায় অনর্থক আড্ডা দেয়া, পঞ্চমত রাত জেগে উদ্ভট কায়দায় মাকে খুশি করার চেষ্টা করা। এগুলোর কোনটাই আমাদের সমাজে ইতিবাচক কাজ হিসেবে স্বীকৃত নয়।
নেতিবাচক চরিত্রের নেতিবাচক কার্যক্রমে ভরা একটি বিজ্ঞাপন নিঃসন্দেহে তরুণ সমাজকে নেতিবাচক কাজেই উদ্বুদ্ধ করবে। আমাদের সমস্যা হলো আমরা নেতিবাচক কার্যক্রমগুলো সমাজে জারিও রাখতে চাই আবার আমাদের তরুণরা গোল্লায় যাচ্ছে বলে হা পিত্যেশও করি।
বিষয়: বিবিধ
৯৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন