কলিগ কথন-৪

লিখেছেন লিখেছেন অপ্টিমিস্ট রোকন ০১ জুন, ২০১৩, ০৭:৫১:০৩ সন্ধ্যা

দুই দিনের ছুটিতে ঢাকার বাইরে থাকায় জাতীয় রাজনীতির খবরাখবর তেমন একটা পাইনি। তাই লাঞ্চের পর ধরে বসলাম কলিগকে। “তারেক রহমানরে নিয়া আসলে কী হইছে খুইলা কন তো ভাই!”

কলিগ আজ অনেক ব্যস্ত। ফাইলের পাহাড় থেকে মুখ তুলে বললেন, “আমার হাতে সময় বেশি নাই। সংক্ষেপে বলি শোনেন। তারেক রহমান লন্ডনে যা কইছে তার চাইতে হাজার গুন শক্ত কথা তার মায়ে দেশের ভেতর বইসা কইছে বহুবার। তাই তারেকের কথায় সরকার ক্ষেইপা গিয়া দুদকরে দিয়া বিদেশ থেইকা তারে ধইরা আনার চেষ্টা করতাছে, বিষয়টা এই রকম না আসলে।”

“কন কী? প্রকৃত বিষয় কী তাহলে?” আমি কথা বের করার চেষ্টা করি।

কলিগ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, “রাজনীতি বড় আজব জায়গারে ভাই। তারেক ইস্যুর টাইমিংটা খেয়াল করেন। সরকার যখন সংলাপ থেকে পিছু হটলো তখন দেশের রাজনীতিতে ম্যাটার করে এমন সব মহল থেইকা সংলাপ না হওয়ার জন্য সরকারকে দায়ি করা হইতেছিল। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সংলাপ থেকে মানুষের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য অন্য একটি ইস্যুর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিল সরকার। তো এই মোক্ষম সময়ে তারেক রহমান লন্ডনে বইসা হঠাৎ সরকারের বিরুদ্ধে দুই একটি কথা বইলা ফালাইলো। নেত্রী ইস্যু দিয়া ইস্যু ঢাকা দেয়ার বেলায় ওস্তাদ লোক। তিনি এই মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করলেন না। ফলাফল হলো তারেকের উপর দুদক, পুলিশ ও অনুগত আদালতের সম্মিলিত আক্রমণ।”

“আপনার এই কথার ভিত্তি কী?” কলিগের কথা বিশ্বাস করতে মন চায় না।

কলিগের কণ্ঠে খানিকটা উষ্মা ঝরে পড়ে। “তারেকরে ইন্টারপোলে যে ধইরা আনতে পারবে না, যুক্তরাজ্যও যে তারেকরে ঠেইলা বাংলাদেশে পাঠায়ে দিবে না এইটা কি হাসিনা জানে না মনে করতাছেন? তিনি জানেন এমনে কইরা তারেকরে আনা যাবে না। তবু তিনি কেন তারেকরে নিয়া এমন কীর্তি করলেন কন দেখি? উত্তরটা সোজা। তারেকরে লইয়া দেশ কয়েকটা দিন গরম থাকুক, সংলাপের কথা মানুষ ভুইলা যাক এই মহান উদ্দেশ্যেই তারেকরে লইয়া খানিকটা খেললেন নেত্রী এবং তিনি সফলও হলেন।”

“বুঝলাম। কিন্তু বিএনপি কি এই সহজ জিনিসটা বুঝলো না? তারা কেন খামাকা হরতাল ডাকলো?”

“এই খানেও ওই রাজনীতির মারপ্যাচরে ভাই।” কলিগ সাদা দাঁত বের করে হাসেন। “বিএনপি জানে হাসিনা তারেকের গায়ে ফুলের টোকাও দিতে পারবে না। তবু বিএনপি হরতালের ডাক দিল। কেন দিল? সোজা উত্তর। তারেক যে বাংলাদেশের রাজনীতির ‘একটা কিছু’ এইটা প্রতিপক্ষ জোট, সমর্থক জোট, দেশ-বিদেশের হোমড়া-চোমড়া লোকগুলো ও আম-জনতাকে বোঝানোর জন্যই এই হরতাল, এর বেশি কিছু না আসলে।”

“হুম। তাহলে আপনি বলতে চাইতেছেন দুই দল বুইঝা শুইনা ব্লাইন্ড খেলতাছে? মাঝখানে জনগণ চিড়েচ্যাপ্টা।” আমি রাজনীতিটা বোঝার চেষ্টা করি।

“এইবার ঠিক জিনিসটা ধরতে পারছেনরে ভাই। যান এবার নিজের ডেস্কে গিয়া কাজে মন দেন।” কলিগ নিজের ফাইলে মনোনিবেশ করেন। আমিও নিজের ডেস্কে ফিরে আসি।

বিষয়: রাজনীতি

১১৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File