Study tour 2011 - “মধ্যরাতের সৈকত ও মাছুমের অভিনয়”

লিখেছেন লিখেছেন কানামাছি ০৩ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:০০:২৭ সকাল

“বিশ্ব কবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ,

জীবনান্দের রূপসী বাংলা,রূপের যে তার নেইকো শেষ”।



সত্যি রূপসী বাংলার রূপের কোনো তুলনা নেই। রূপসী বাংলার এই রুপের বর্ণনা দেয়নি এমন কবি সাহিত্যিক হয়তবা এই বাংলায় একজনও খুঁজ়ে পাওয়া যাবেনা। প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক চিরদিনের,তাইতো প্রকৃতির এই শ্বাশত আকর্ষনে মানুষ প্রতিনিয়ত ছুটে চলছে দেশ থেকে দেশে, ইতিহাস অধ্যয়ন করলে তাইতো আমরা জানতে পারি, ইবনে বতুতার সফর,কলম্বাসের শান্তা মারিয়া জাহাজে চড়ে আমেরিকা আবিষ্কার কিংবা চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এর ভ্রমণ কাহিণী।একটা সময়ের অনেক কষ্টকর ভ্রমণ কালের পরিক্রমায় মানুষের শিক্ষা ও বিনোদনের অন্যতম একটি প্রধান মাধ্যমে এ পরিণত হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পাঠশালায় শিক্ষাগ্রহণ করতে এসে আমারও সু্যোগ হয়েছে এই রূপসী বাংলার সৌন্দর্য আবিষ্কার করবার।বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের এই পড়ন্ত বিকেলে এসে এক ঝাঁক সৌন্দর্য পিপাসু তরুণ-তরুণী এক হপ্তা ছুটেছি অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড়,অরণ্য আর সাগরের তীর ঘেঁষে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল।আমাদের জাতীয় কবি,জাতীয় চেতনার কবি কাজী নজ়রুল ইসলাম সংকল্প করেছিলেন..

“থাকব না ক বদ্ধ ঘরে

দেখব এবার জগতটাকে”

জাতীয় কবির চেতনা বুকের মাঝে ধারণ করে প্রকৃতির সাথে অভিসারে এসে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রোমাঞ্চকর এবং মনমুগ্ধকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি।আজ লিখবো…

“মধ্যরাতের সৈকত ও মাছুমের অভিনয়”



আমাদের বাস দুটি যখন কক্সবাজার এ পৌছাল তখন ঘড়িতে সময় প্রায় ৭ টা বেজ়ে ১৫ মিনিট।আমাদের সাথে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা ছিলেন।আমাদের ছাত্রপ্রতিনিধিরা আমাদের জানিয়ে দিলেন রাত ৮ টায় আমরা আমাদের রাতের খাবার খাব। আমাদের ভ্রমণটা বেশ দীর্ঘ ছিল,বান্দরবান হয়ে সরাসরি কক্সবাজার।প্রত্যেকের চোখেমুখে তাই ক্লান্তির ছাপ ছিল সুস্পষ্ট ।

বাস থেকে নেমে সোজ়া ছুটে চললাম হোটেলের লবিতে।সেখানে যথারীতি কিছু “INSTRUCTION” এর পর আমাদেরকে আমাদের রুমের চাবি দেয়া হলো।

আমাদের হোটেল টা ছিল মূলত একটা পর্যটন মোটেল।“বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন”এর নিজস্ব মোটেল,নাম মোটেল উপল।চাবি পেয়ে আমরা দ্রুত ছুটে চললাম রুমের দিকে।রূম খুলেই দেখতে পেলাম ,বেশ বড় রুম, A.C আছে,সাথে টেলিভিশন,সুন্দর গোছানো, একটা আভিজাত্যের ছাপ সুস্পষ্ট।মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম আমাদের ছাত্রপ্রতিনিধিদের।ভ্রমণটা বেশ দীর্ঘ ছিল তাই ক্লান্তির সাথে সাথে ক্ষুধাও লেগেছিল বেশ।তাই যত দ্রুত সম্ভব আমরা চার রুমমেট পলাশ,রিয়াল,জয়ন্ত আনুষংগিক কাজ দ্রুত সেরে সোজ়া ছুটে চললাম পেটের পূজার নিমিত্তে।

খাবারের হোটেল টা ছিল মোটেল থেকে একটু দূরে ।কিন্তু দূরে থাকলে কি হবে,কক্সবাজার এর মাটির গন্ধ নেবার জন্য সবাই প্রায় পায়ে হেঁটে রওনা দিলাম।খাবার খেতে বসে মনে হলো,SM ZAKIR HOSSAIN এর একটি কথা “খাবার কে ভোগ না উপভোগ করতে হয়।তাহলে খাবারটি যেমন খেতে ভাল লাগবে তেমনি একটু পরে আর ক্ষুধাও লাগবেনা।খাবার খেতে গিয়ে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম।খাবার মেন্যুতে ছিল… “রুপচান্দা আর লইট্টা ফিস ফ্রাই।এই মাছগুলোর নামের সাথে আমরা পরিচিত হলেও সাগর পাড়ে এসে এই মাছের স্বাদ নেয়ার অভিজ্ঞতা আমার মনে হয় খুব কম মানুষেরই আছে।

আমাদের খাবারের দায়িত্তে ছিল “রাকিব”…মশিউদ্দিন রাকিব।বন্ধুটি আমার বেশ কষ্ট করছিল,ঘুরে ঘুরে প্রতিটি টেবিল দেখছিল কে পেয়েছে, কে পায়নি? একটা বিষয় বলে রাখা ভালো,কক্সবাজারের হোটেল গুলোর “SERVICE SYSTEM” ভালোনা। আমার মনে হয়েছে ওরা এক সংগে অনেক লোককে ভালোমতো “SERVE” করতে পারেনা, একেবারেই অগোছালো, আর তাইতো এই অগোছালোর দায় ভার আমরা ভুলক্রমে “FOOD MINISTER-রাকিব কে দিয়ে ফেলেছি, আর রাকিব ও মাঝে মাঝে একটু উত্তেজিত(!) ভংগিতে জবাব দিয়েছে…যদিও ওর কিছুই করার ছিলনা, তারপরও আমি বলব, উত্তেজিত না হয়ে মুখে একটু মুচকি হাসি দিয়ে জবাব দিলে ব্যাপারটা আরও ভালো হতো…”আর কে না জানে হাসির ক্ষমতা সম্পর্কে”…আমার তো মনে হয়েছে ওদের হোটেল বয়গুলো কে ধরে এনে নীলক্ষেতের “মামা হোটেল কিংবা চানখার পুলের মিতালি রেস্টুরেন্টে এনে “২ দিন ৩ রাত” ফ্রি TRAINNING করাই।

সাগর পাড়ে এসে রূপচাদা আর লইট্ট্যা ফিশ ফ্রাই দিয়ে খাবারটি বেশ উপভোগ করলাম। খাবার শেষে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা আমাদের কিছুক্ষণ relax করতে বললেন এবং যতদ্রুত সম্ভব হোটেলে ফেরার জন্য তাগিদ করলেন। আমরা এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে আচার, কড়ির মালা, শামুকের গহণা কিনে ঘরে ফিরলাম। আমাদের দুই হাত না ভরলেও আমাদের বান্ধবীদের দেখে মনে হলো “Shopping” যে কি আনন্দের বিষয়। আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো পুরো দোকানটাই কিনে নিয়ে আসতো। জানিনা আমার বান্ধবীরা আবার আমার কথায় রাগ করল কি না।

এই যখন ভাবছিলাম, তখন মনে হলো আমার জীবনেওতো একজন permanent “বন্ধু” আসবে।সেও যদি আমার এই বান্ধবীদের মতো shopping করতে শুরু করে তাহলে তো……………!। সত্যি কথা বলতে কি shopping করতে সব মেয়েই ভালবাসে।কারণ আমার তো একটা ছোট বোন আছে।

মোটেলে যখন ফিরলাম তখন ঘড়িতে রাত ১১.৩০ মিনিট। পলাশ বলে উঠল দোস্ত, চল কার্ড খেলি; রিয়াল একটু confused হয়ে গেল কি করবে, “তাসখেলব না ঘুমাবো” ....জয়ন্ত অবশ্য বিয়ালকে একটা ঝাড়ি দিয়ে বলল, শালা confused , ঘুমাবি... না...., তোকে আমি ঘুমাতে দিলে তো। দুই তিন মিনিট অবশ্য দুজনের মাঝে মল্লযুদ্ধ হয়ে গেল। তারপর সিদ্ধান্ত হলো কার্ড খেলার। ওরা আবার 29 খেলবে, আমি আবার Call-bridge ছাড়া কিছুই পারিনা। কলেজ জীবনের পর তাও খেলা হয়ে উঠেনি। কি আর করা যথারীতি আমি Disqualified, কিন্তু Disqualified হলে কি হবে, আমি 29 পারিনা কেন? পারতে হবে? আমি না খেললে যে চারজন হচ্ছে না!! আমি বললাম,”ভাইরে, যাও তো ভাই যাও” আমি তো পারিনা কি করব। মনে মনে একটা কায়দা কললাম, যে এই গণধোলাই এর হাত থেকে বাঁচতে হলে অতিদ্রুত একটা খেলোয়াড় যোগাড় করতে হবে, বাধ্য হয়ে হানা দিলাম রুমে রুমে। অবশেষে একটা BD চানাচুরের বিনিময়ে শরিফকে রাজী করালাম পাশের দেশ থেকে।

ওরা চারজন কার্ড পিটাচ্ছে। আমি আর কি করব। রুমে TV আছে, তাই রিমোর্টের উপর নির্যাতন করতে লাগলাম। এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করতে গিয়ে হঠাৎ একটা বাংলা চ্যানেলের উপর চোখ পড়লো, দেখলাম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা হয়েছে। ঢাকায় সেদিন বাংলাদেশের বৃহত্তম দুই দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপির প্রোগাম ছিল। মনটা কেন জানি খারাপ হয়ে গেল, ভাবলাম জাতিগত ঐক্য না থাকলে একটা জাতিকে কখনো এগিয়ে নেওয়া যায়না।

টেলিভিশন দেখতে দেখতে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ছিলাম, হঠাৎ দেখি মাছুম এর ফোন। বুঝতে আর বাকি রইলনা কোন উদ্দেশ্যে ফোন দিয়েছে। রাতের বেলায় ত্রি-চক্রযান এ করে শহর দেখবে। নতুন জায়গা, রাতের বেলা ঘোরার মজাই আলাদা। তারপরও মাছুমের আগ্রহের মাত্রা দেখে ভালই লাগে। জ্ঞানের বা জানার অনেক মাধ্যম আছে, কেউ বই পড়ে জানে, কেউ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জানে, কেউবা বিশাল প্রকৃতির কাছ থেকে শেখে, কেউবা আবার ঠকে শেখে। মাছুমের অবশ্য প্রকৃতির কাছ থেকে শেখার আগ্রহটা মনে হয় সবচেয়ে বেশি। আর তাইতো সাধুবাদ জানাই ওর এই আগ্রহকে।

ঘড়িতে তখন রাত ১.০৫ মিনিট। আমি মাছুম আর OMI তিনজন একটা ত্রি-চক্রযান নিলাম একঘন্টা চুক্তিতে, শহরটা ঘুরে দেখব এবং কক্সবাজার লাবনী পয়েন্ট এ কিছুক্ষন থেকে চলে আসব। আমাদের ত্রিচক্রযানের পাইলট ধীরে ধীরে আমাদেরকে শহরের দিকে নিযে যাচ্ছিল। নিঃস্তব্ধ রজনীতে প্রকৃতি দেখতে মাছুমের ভাল লাগলেও নিঃস্তব্ধ থাকাটা হয়তবা মাছুমের ভাল লাগেনা, এজন্যই বলল, “দোস্ত, একটা গান ধর”, আমিও সাথে সাথে একটা গান ধরলাম,

ওরে নীল দরিয়া...

আমায় দে...রে দে ছাড়িয়া..........

OMIও আমার সাথে কোরাস গাচ্ছিল। এই innocent বালকটা যে এত সুমধুর গাইতে পারে এটা জানতাম না। সবকিছু মিলে সময়টাকে বেশ উপভোগ করছিলাম। কনকনে শীতের রাত। রাস্তায় জনমানুষের আনাগোনা খুব একটা নেই। আকাশে অবশ্য চাঁদের বুড়ি লক্ষ তাঁরাদের গল্প শোনাচ্ছে। ধীরে ধীরে আমাদের ত্রি-চক্রযানটি একটি চায়ের দোকানের সামনে এসে থামল। আমরা চা খাচ্ছিলাম আর স্থানীয় এক দোকানদারের সাথে গল্প করছিলাম। দোকনদার অবশ্য গল্পের ফাঁকে ফাঁকে কক্সবাজারের ভাষায় আমাদেরকে একটা ইঙ্গিত(!) দিচ্ছিল, আমি আর OMI বুঝতে না পারলেও আমাদের সাথে আবার অতিরিক্ত বেশি বুদ্ধিমান(মাছুম) বালকটি ছিল, উনি আবার পরে তা আমাদের জানালেন, সত্যিই অতিরিক্ত বেশি বুদ্ধিমান। রানাকে ধন্যবাদ এজন্য যে নামটি ওরই দেয়া। একজন দার্শনিক বলেছেন, “A beautiful name is better than a lot of wealth”

চা-বিরতি শেষে এবার আমাদের যাত্রা “Laboni point” এর দিকে। আবার আমরা তিনজন কোরাসে গান গাইতে শুরু করলাম। এক ফাঁকে আমাদের পাইলটকে জিজ্ঞাসা করলাম এত রাতে কোন সমস্যা হবে না তো?? পাইলট সাফ জানিয়ে দিলেন “সমস্যা হওয়ার কথা নয়, তারপরও বলা যায়না, খারাপ মানুষ তো সব জায়গায় কম বেশি আছে”। আমরা অবশ্য খুব বেশিক্ষণ থাকব না এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে ১৫ মিনিটের সৈকত বিরতি নিলাম। যমুনা নদীর কোল ঘেষে আমার বাড়ী, নদীর সাথে আমার নাঁড়ীর টান। আর তাইতো প্রথম কক্সবাজার সৈকত দেখার অনুভূতি আমার কাছে একটু হলেও অন্যরকম।

শীতের তীব্রতা আর উত্তেজনায় শরীরটা বেশ কাঁপছিল। সৈকতে বালু থাকে এটা জানতাম কিন্তু এত বালি থাকে তা জানতাম না। হাটতে গিয়ে বেশ কষ্ট হচ্ছিল, প্রায় বালিতে পা দেবে যাচ্ছিল, বারবার মনে হচ্ছিল যেন কাদামাটিতে হাটছি। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, জনমানুষের দেখা নেই বললেই চলে। ধূর হতে লন্ঠনের মিটি মিটি আলো আর উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের বারবিকিউ এর উচ্ছাস চোখ পড়ল, এর মাঝে মাছুমের আবার বিড়ি খেতে ইচ্ছা হলো। সিগারেটকে বিড়ি বললে অনেকে অবশ্য Mind করে, মাছুম আজকে Benson বিড়ি খাবে। কিন্তু বিড়ি খেতে ইচ্ছা করলে কি হবে, সৈকতে বাতাস থাকায় দেয়াশলাই এর আগুন বার বার নিভে যাচ্ছিল। অবশেষে আমরা ত্রিকোনাকার রূপ ধারণ করে আগুন জ্বালালাম।

ভাবছিলাম বাতাসের কথা, যে বাতাস না থাকলে আগুন জ্বলেনা আবার সেই বাতাসের আধিক্যের জন্যও আগুন জ্বলেনা। বাতাস আমায় আজ শেখাল, “একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামোর মাঝেই জীবনের আনন্দ।ধীরে ধীরে সাগরের পাঁনে হাটছিলাম, সত্যি বলতে কি আসলে বালুর জন্য জোরে হাটতেও পারছিলাম না।

দূর থেকে সাগরের গর্জন শোনা যাচ্ছিল, কি ভয়ংকার রে বাবা !! মনে হচ্ছিল সাগরের ওপারে বুঝি যুদ্ধ লেগেছে। যতই সাগরের কাছাকাছি যাচ্ছিলাম গর্জনের তীব্রতা যেন ততই বেড়ে যাচ্ছিল।

মাঝে মাঝে এত বিকট শব্দ হচ্ছিল যে, আমরা ভয়ে পিছনের দিকে দৌড়াচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল এই বুঝি কোন দৈত্যাকার ঢেউ এসে আমাদের তিমি মাছের মত গ্রাস করে ফেলবে। চারিদিকে সুনশান নীরবতা, শুধুমাত্র ঢেউয়ের কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছিল। উত্তেজনা আর ভয়ে গায়ের লোমগুলোও দাড়িয়ে যাচ্ছিল। তারপরও কি জানি এক অজানা আকর্ষণে সাগরের নীল জলের স্পর্শ পেতে আমরা ভীরু পায়ে হেটে চলছিলাম। একটু হাটছি হয়তবা আবার ঢেউয়ের বিকট গর্জনে পেছনে ফিরে দৌড়াচ্ছি। এক সময় তিনজনে এত ভয় পেলাম যে আর সামানে যেতে সাহস পেলাম না।

মধ্যরাতের এই সৈকত উপভোগে যেমন প্রচন্ড ভয় ছিল তেমনি অসম্ভব রোমঞ্চ অনুভব করেছিলাম। জীবনের প্রথম সৈকত দেখতে এসে এমন এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হব যা কথনো ভেবে দেখিনি। মধ্যরাতের এই সৈকত দেখার সময় মনে হয়েছে সাগরে নামা তো দূরের কথা এর কাছেও আমি আর কখনো যাবনা। ১৫মিনিট পরা যখন আমরা ফিরে আসলাম তখন দেখলাম আমাদের পাইলট আমাদের জন্য বসে আছেন। মোটেলের দিকে যাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম উত্তেজনা, ভয় আর রোমাঞ্চকার অনুভূমি সবাই পছন্দ করে। ছেলেবেলায় দাদী বা নানীর কোলে শুয়ে ভূতের গল্প শোনেনি এমন একজনকেও হয়তবা খুজে পাওয়া যাবেনা। ভূতের ভয়ে হয়তবা নির্ঘুম রাত্রি যাপন, তাই বলে কি আমরা কেউ ভূতের গল্প শোনা ছেড়ে দিয়েছিলাম? মোটেও না। সৈকত এর অভিজ্ঞতার কথা মনে হলে যেমন ভয় পাই তেমনি অপেক্ষায় থাকি আবার তোমার সাথে কবে দেখা হবে।

এবারই আমার প্রথম সৈকতে আসা, OMI এর আগে একবার আসলেও গভীর রাতে আসেনি, মাছুমও পরে জানালো যে ও এর আগে চারবার এসেছে এবং গভীর রাতের সমুদ্র দেখার অভিজ্ঞতাও ওর আছে। সত্যি কথা বলতে কি ঢেউয়ের বিকট গর্জনে যখন বারবার পেছনে ফিরে দৌড় দিচ্ছিলাম আমি আর OMI, তখন মাছুমও কিন্তু ভয়ে দৌড়াচ্ছিল আমাদের সাথে। আমার সব আনন্দই মাটি হয়ে যেত যদি মাছুম আমাদের ভয় ভেঙ্গে দিত, কারণ তাহলে হয়তবা আমার প্রথম সৈকত দেখা এত রোমাঞ্চকর হত না। মাছুমকে দেখে একবারও মনে হয়নি এই গভীর রাতে সৈকত দেখার অভিজ্ঞতা ওর আছে, কি সাবলীলভাবেই না একজন পাকা অভিনেতার মত অভিনয় করে যাচ্ছিল। ওর অভিনয় দেখেতো আমি এখন সত্যিই মুগ্ধ।

আসলে কেন জানি মনে হয় কিছু মানুষ জন্মগত ভাবেই পাকা অভিনেতা। এদেরকে থিয়েটারে যেতে বা কর্মশালা করতে হয়না। বেঁচে থাকলে হয়বা মধ্যরাতে আবারও সৈকত দেখার সুযোগ হবে কিন্তু সেদিনে সেই রোমাঞ্চকর অনুভূতির কথা মনে পড়লে হয়ত একটু আবেগতাড়িত হয়ে যাবো। মনে পড়বে তখন মাছুমের কথা, কুমিল্লার গর্ব OMI’র কথা, আর মনে পড়বে আমার একঝাঁক তারুণ্যে ভরপুর বন্ধুদের কথা। বুকের ভেতরে তখন একটা হাহাকার অনুভব করবো, যন্ত্রনায় হয়তোবা চোখের কোন বেয়ে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়বে, আড়ালে গিয়ে চোখটা মোছার চেষ্টা করবো, আমার পাশে থাকা সেদিনের সেই permanent বন্ধুটি হয়তোবা জিজ্ঞেস করবে, “কি ব্যাপার তোমার কি হয়েছে? আমি বলব, “কই কিছু হইনি তো, চোখে সম্ভবত কোন পোকা পড়েছে”।

বিষয়: বিবিধ

১৫৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File