LOAD-SHEDDING এবং শিক্ষাগুরুর মর্যাদা…
লিখেছেন লিখেছেন কানামাছি ১৬ মার্চ, ২০১৩, ০৭:০৫:০৫ সকাল
বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন প্রথম বর্ষে ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের পরিবেশ নিয়ে খুব সুখকর কোনো বার্তা ছিলনা আমার কাছে ।তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, হলে থাকবনা ।এরই মাঝে কলেজের এক বন্ধুর সাথে আমার দেখা ,আমি ওকে বললাম, বন্ধু “বিশ্ববিদ্যালয়ে তো চান্স পেলাম কিন্তু কোথায় থাকব, ঠিক বুঝতে পারছি না” ,রাসেল বলল, “কিরে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এত হল থাকতে তুই বলছিস কোথায় থাকব?” ,আমি বললাম, [b]বন্ধু হলে নাকি সন্ত্রাসী আর ছাত্র পাশাপাশি বেড এ থাকে[/b]।ও বল্, বন্ধু্,তুই তো রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে ,পড়েছিস তুই তো বরং হলে থাকার ব্যাপারে আরো বেশি আগ্রহী হবার কথা।আর শোন ওসব কান কথায় মন দিসনা, হলে উঠে যা ।সেইথেকে হলে থাকা ।ঢাকাতে এত সমস্যা ,বিশুদ্ধ পানির অভাব ,নিরিবিছিন্ন বিদ্যুত নেই ,গাছপালাও খুব একটা দেখা যায়না।এতসব সমসার মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো যেন এক একটা স্বর্গ ।এখানে নিজস্ব পাম্প দ্বারা পানি উঠানো হয় ,সার্বক্ষনিক বিদ্যুত,গাছপালাও বেশ ,সবমিলে loadshedding নামে যে একটা শব্দ আছে dictionaryte,তা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম ।ভুলে যাবার অবশ্য আরো একটা না দুটো কারণ আছে ।প্রথম কারণ,আমার বাড়ী সিরাজগঞ্জ শহরে ,গত চার দলীয় ঐক্যজোটের আমলের (বর্তমানে ১৮=(৪^২ +২ )দলীয় জ়োট)বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রীর বাড়িও আমাদের সিরাজগঞ্জ।সেই আমলে সিরাজগঞ্জের মানুষেরাও load-shedding নামক সুখকর!অনুভুতির কথা ভুলতে বসেছিল ।এর একটা কারণ আছে বৈকি ,একটা বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলে(NTV) একটা প্রতিবেদন ও হয়েছিল ,সারাদেশে যেখানে দেশের মানুষের দফায় দফায় Load-shedding এর সুখকর ! অনুভুতি হচ্ছে, সেখানে সিরাজগঞ্জে loadshedding নেই বললেই চলে ।উনাকে আর দোষ দেই কিভাবে ,নিজ মাতৃভূমির প্রতি ভালবাসা এই আর কি ! বাকিটুকু বুঝে নিবেন ।এরপর ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে ক্লাস IX এ ভর্তি হলাম ।এখানেও ঠিক আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত, নিজস্ব পাম্প দ্বারা পানি উঠানো হতো ,সার্বক্ষনিক বিদ্যুত,আর পরিবেশের কথা আর কি বলব,এক কথায় অসাধারণ …।প্রথম বর্ষেই বুঝতে পারলাম অন্তত একটা tuitoni আমাকে পেতেই হবে ..যদিও ক্যাম্পাস এ tuitoni কিছু মানুষের জন্য অপরিহার্য …কিছু মানুষের কাছে এটা profession,আবার কিছু মানুষের কাছে এটা passion..আমি এটাকে অবশ্য passion হিসেবেই নিলাম । প্রথম বর্ষে যখন সেজে- গুজে tuitonite যেতাম। বন্ধুরা হইতোবা ভাবত , বাবারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না হতেই ছেলেটা tuitoni পেল । না জানি ছেলেটার কত! link..কি ভাবছেন মামার জোর ..না আমার এক বন্ধুর জোর।আমার বন্ধুটি ওর tuitonita আমাকে দিয়েছিল ,ভাবছেন এত মূল্যবান জিনিস এত সহজে দেবার কারণ ।আদাবরে ক্লাস six এর এক ছেলেকে ও পড়া্ত ।মাঝে মাঝে আবার ওর ভর্তি পরীক্ষার্থী বড় বোনকেও বিভিন্ন বিষয় বুঝিয়ে দিতে হত …এতেই হলো সারা …বাকিটা বুদ্ধিমান পাঠক বুঝে নিবেন।কিছুদিন যেতে না যেতেই তাই ঠাই হলো আমার ।tuitoni বেশ ভালই চলছিল ,মাইনেও বেশ ভাল দিত। শীতকালে যেতে খুব কষ্ট না হলেও গরমকালে বেশ কষ্ট হত ।অনেক সময় বাদর ঝোলার মত বাসে চড়ে যেতে হত।ছাত্রটি
আমার লেখাপড়ায় বেশ ভাল,পড়া ধরলে খুব ঝট পট উত্তর দিত ।একদিন পড়ানোর সময় হটাৎ বিদ্যুত চলে গেল ।ভাবলাম এই সেরেছে , এখন উপায় ? Loadshedding এর সুখকর ! অনুভুতির কথাতো প্রায় ভুলতে বসেছিলাম ,বই খাতা দিয়ে তো আর ছাত্রের সামনে বাতাস দেয়াও যায়না ।এই যখন ভাবছিলাম ,তখন অমনি আমার সেই ছাত্রটি এক ভৌদৌড় দিয়ে একটা তালপাতার পাখা নিয়ে এসে আমায় বাতাস করতে লাগলো ,আমি অনেক চেষ্টা করলাম ওকে নিবৃত করবার কিন্তু ও বাতাস দিয়েই চলছিল ।বাসে যেতে যেতে ভাবলাম , হইতোবা আমি নতুন শিক্ষক এজন্য আমাকে একটু বেশি খাতির যত্ন করছে।কিন্তু না আমার ভুল ভেঙ্গে গেল আবার যখন পড়ানোর সময় loadshedding হলো ..এরপর যতবার পড়ানোর সময় বিদ্যুত চলে যেত ততবারই ও হাতপাখা নিয়ে এসে ও আমায় বাতাস করত ।ছেলেবেলায় গোলাম কাদের নেয়াজ এর “শিক্ষাগুরুর মর্যাদা ” কবিতা খানি পড়েছিলাম …..”একদিন বাদশা আলমগীর দেখলেন ,তার পুত্র মৌলভির (teacher)পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছে আর মৌলভি সাহেব নিজ হাতে তার পায়ের ধুলা -বালি পরিষ্কার করছেন … বাদশাহ আলমগীর তার পুত্রের উপর প্রচন্ড রাগান্নিত হন এজন্য যে , পুত্র কেন শুধু মাত্র তার পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছিল, পায়ের ধুলা বালিও কেন পরিষ্কার করছিল না ,শিক্ষকের এত অমর্যাদা”। ছেলে বেলায় কবিতা পড়ার সময় বুঝতে চেষ্টা করেছিলাম শিক্ষা গুরুর আসলে কত! মর্যাদা ।যদিও আমার শিক্ষা গুরুদের আমি কত খানি সম্মান করতে পেরেছি তা বলাই বাহুল্য ..কিন্তু আজ যখন আমি নিজেই সেই গুরুর ভূমিকায়, তখন এই সম্মান টুকু পেয়ে আমি সত্যিই অভির্ভুত ।তাই মনে হয়,আজ়ো বাংলার ঘরে-ঘরে বাদশাহ আলমগীরের মত বাবা আছেন যারা তার সন্তানদের শিক্ষকের মর্যাদা সম্পর্কে শিক্ষা দিয়ে থাকেন ।আর তাইতো load shedding এর কষ্টকর অনুভুতি তো দুরে থাক loadshedding এর মাঝে এই সুখকর অনুভূতিটিই আমার ক্ষুদ্র শিক্ষকতার জীবনে পরম পাওয়া ..তাইতো ধন্যবাদ loadshedding কে ………
বিষয়: সাহিত্য
২০২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন