একুশ শতকের সক্রেটিস,প্লেটো,এ্যারিস্টটল...
লিখেছেন লিখেছেন কানামাছি ১৩ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:০৭:২৩ সকাল
Philosophy শব্দটি Phylo and Sophia এই দুইটি শব্দ থেকে এসেছে। Phylo অর্থ অনুরাগ বা আসক্তি এবং Sophia অর্থ জ্ঞান।
জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ বা আসক্তিকেই Philosophy বলে।
"জীবন ও জগতের অগণিত রহস্য মানবমনে যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে সেই বিস্ময়ের অবস্থা থেকে মুক্তির আকুতিই হলো জ্ঞানানুরাগ।"
অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে মুক্তির প্রয়াসই Philosophy. বাংলায় এর অনুবাদ দর্শন।
সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষের মাঝ এই অনুরাগ বা আসক্তি বিদ্যমান। এটা কি? এটা কেন হয়? এটা কিভাবে হয়? এটা দ্বারা কি হয়? কেউ সৃষ্টি নিয়ে কথা বলে, কেউবা আবার স্রষ্টা নিয়ে প্রম্ন করে। মানুষ কেন পৃথিবীতে? মানুষের দায়িত্ব কি এই পৃথিবীতে? মানুষকে কে সৃষ্টি করেছেন? মানুষের মাঝে এরকম নানাবিধ প্রশ্ন প্রতিনিয়ত দানা বাঁধে। যার ফলশ্রুতিতে মনে এক সাইমুম ঝড় বয়ে চলে প্রতিনিয়ত। প্রত্যেকেই তার সেই কাঙ্খিত উত্তরটা খোজার জন্য দেশ থেকে দেশে, অন্যকে জিজ্ঞাসা করে কিংবা কোন কিতাব তালাশ করে। আবার কেউবা উত্তরটা না পেয়ে নিজে নিজেই একটা উত্তর তৈরী করে নেয়। অনুসন্ধানী ব্যক্তির মনে প্রশান্তি আনলেই সে কিছুটা শান্ত হয়। উত্তর ভূল হোক আর সঠিক হোক উত্তর পেলেই স্বস্তি।
দার্শনিক বা Philosopher শব্দটি আামদের সামনে উচ্চারিত হলেই আমরা সক্রেটিস কিংবা প্লেটোর কথা ভাবি। দার্শনিকরা দর্শনের সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে দিয়েছেন।
দর্শনের উদ্দেশ্য বলতে গিয়ে Plato বলেন, " Philosophy aims at the knowledge of the eternal, of the essential natural of things"- অর্থাৎ দর্শনের উদ্দেশ্য শ্বাশত এবং বস্তুর আসল প্রকৃতির জ্ঞান।
দার্শনিক Weber দর্শনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, " Philosophy is the search for comprehensive view of nature, an attempt at a universal explanation of things"- অর্থাৎ প্রকৃতির সামগ্রিক অর্জনের সন্ধান করা এবং সবকিছুর বিশ্বজনীন ব্যাখ্যার চেষ্টাই হলো দর্শন।
আবার দর্শনের কৌতুকপূর্ণ সংজ্ঞা দিয়েছেন ড. দেব। তিনি বলেন- " Philosophy is search for a black cat in a dark room where there is no cat. অর্থাৎ দর্শন প্রমাণিত কোন নিশ্চিত জ্ঞান নয় মূলত তিনি এটিই বলতে চেয়েছেন।
দার্শনিক Cunningham এর সংজ্ঞা দেখলে দেখা যায় এরকম; "Philosophy grows directly out of life and it's need. Every man who lives, if he lives at all reflectively, is in some degree a philosopher"
জীবন ও এর প্রয়োজন থেকেই প্রত্যক্ষভাবে দর্শনের জন্ম। প্রত্যেক জীবিত ব্যক্তি যদি সে সামান্য চিন্তাশীল হয়। তাহলে সে কোন না কোন মানের একজন দার্শনিক।
Cunningham এর সংজ্ঞাকেই হয়তবা আমরা বেশি পছন্দ করব এজন্য যে এই মুহুর্ত থেকে আমরা সবাই নিজেদেরকে দার্শনিক হিসেবে আবিষ্কার করলাম সক্রেটিস, প্লেটো, এ্যারিষ্টটল এর সাথে. তাই না। তবে হ্যাঁ প্রকৃত দার্শনিকরা তাদের দর্শনের আলোকে সত্যকে যাচাই করেনা বরং সত্য দ্বারা তাদের দর্শনকে যাচাই করে এবং তাদের কাছে মাথা নত করে এবং সত্যকে পৃথিবীর মাঝে ছড়িয়ে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার অনেক আগে থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কথা মানুষের মুখে মুখে অনেক শুনেছি। প্রতিটি শিক্ষক, এক এক জন দার্শনিক। মিথ্যে বলবনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সবুজ গালিচায় আমাকে আমি কোনদিন দেখতে চাইনি। কিন্তু হয়তবা স্রষ্টার ইচ্ছা কিংবা ভাগ্যের খেলায় আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। এই কথা বলে আমি আমার এই বিশ্ববিদ্যালয়কে খাটো করছি এমনটা কেউ ভাববেননা আশা করি। আচ্ছা যাই হোক যে কথাগুলো বলার জন্য এত কথা বললাম এবার সেদিকে যাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাশ শুরু হবার প্রথমদিন থেকেই আমাদের শিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতি, কি পড়ানো হচ্ছে এর চেয়ে অপাঠ্য বিষয়গুলোর প্রতি বেশি মনোযোগ ছিল। হয়তবা প্রথম বিষয়টিকে উপেক্ষা করার দরুণ নিজের ভেতর গণিতকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। তবে হ্যাঁ পরের বিষয়টি কিন্তু আমি পুরোপুরি পেরেছি।
সক্রেটিস, প্লেটোর সাথে আমার দেখা না হলেও এই একুশ শতকের (আমার মতে) দার্শনিকদের আমি কাছে পেয়েছি।
এই দার্শনিকদের এবার একটু পরিচয় করিয়ে দেবার পালা। তবে একুশ শতকেই এই দার্শনিকদের মধ্যে আমি সবার উপরে রাখবো আমাদের শ্রদ্ধেয় শওকত স্যার কে- তার সেই উক্তিটির জন্য-
"জানতে হলে, কিছু শিখতে হলে বোকা (বিনয়ী) হও।"
এরপর অমূল্য স্যারকে রাখবো এই কাতারে। তিনি ক্লাসে প্রায়ই বিভিন্ন প্রশ্নের সমাধান করতে গিয়ে একটা কথা বার বার বলতেন,
" নিজে না পারলে অন্যের সাহায্য নাও, দরকার হলে দুইতিন জন মিইল্ল্যা সমাধান করার চেষ্টা করো। তারপরও করো।"
শ্রদ্ধেয় মতিন স্যার এ্রর উক্তি- " সরল পথ সরল না"
এবং কুতুব উদ্দীন স্যার....
শেষোক্ত ব্যক্তিটির কথা একটু না বললেই নয়। আমার সিরিয়ালে তার নাম পেছনে রাখলেও তার ভূমিকা অসাধারণ।
আমরা যেনো সুন্দর করে কথা বলতে পারি, সুন্দরভাবে নিজের মনের ভাব অন্যের সামনে উপস্থাপন করতে পারি সেজন্য তার চেষ্টা অবিরত। উনি আর একটা কথা প্রায়ই বলেন,
" আমার ছাত্ররা এক একজন Leader হবে, বড় বড় প্রতিষ্ঠানের বড় বড় জায়গায় যাবে, সমাজ ও দেশকে নেতৃত্ব দেবে।"
আর এই নেতৃত্বের অন্যতম বড় নিয়ামক হলো- নেতার মনোভাব অন্যদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে জানা আর যার জন্য প্রয়োজন মনের শক্তি, মনের ভাব প্রকাশের শক্তি। আর তাইতো এই দার্শনিকদের আমরা কখনো ভুলবনা।
আমার চোখে এই চারজন দার্শনিক যেন তাদের এই দর্শনকে তাদের মৃত্যর আগ পর্যন্ত এই পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে পারেন এই কামনা করি।
বিষয়: বিবিধ
১৬৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন