ইসলামাবাদের ডায়েরী-৪

লিখেছেন লিখেছেন আহমাদ ফিসাবিলিল্লাহ ২৩ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:৪৪:২৬ রাত



গতকাল ২২ নভেম্বর’১৩ শুক্রবার ইসলামাবাদের জি-১০/৪ এলাকায় 'মাসজিদুত তাওহীদে' গেলাম পাকিস্তানের প্রসিদ্ধ আহলেহাদীছ আলেম ড. সুহায়েল হাসানের দারসে অংশগ্রহণ করার জন্য। উনি ইতিপূর্বে আমাদের ডিপার্টমেন্টের টিচার ছিলেন। তবে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দাওয়াহ একাডেমী’-এর দায়িত্ব পালন করছেন। সঙ্গী ছিল আমার জুনিয়র উছুলুদ্দীন ফ্যাকাল্টির মাস্টার্সের ছাত্র শিয়ালকোটের আহলেহাদীছ ভাই উসামা। ঠাণ্ডার মধ্যে তার মটরসাইকেলের পিছনে চড়ে কাঁপতে কাঁপতে মসজিদে পৌঁছলাম মাগরিবের ছালাতের সময়।

ছালাতের পর দ্বিতল মসজিদের দোতলাতে দারস শুরু হল। দোতলার পুরোটাতে বিরাট লাইব্রেরী। তার একপার্শ্বে ক্লাসরুম। শায়খ এখানে মাঝে মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য তাফসীর ও আরবী ভাষা শিক্ষা ক্লাস নেন। তবে হাদীছের দারসটি দিলেন অপর একটি ছোট রুমে। শুরুতেই আমিসহ দু’চারজন যারা নতুন ছিল তাদের পরিচয় নিলেন। তারপর বাদ মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত মিশকাতের কিতাবুছ ছালাতের ‘ছিফাতুছ ছালাত’ অধ্যায় থেকে কিছু হাদীছ পড়ালেন। শিক্ষার্থীরা অধিকাংশই বয়স্ক। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাত্র ৪/৫জন । মুরব্বীদের হাদীছ পড়ার দুরবস্থা দেখে আমিই পড়া শুরু করলাম। কয়েকটি হাদীছ পড়ার পর উনি জিজ্ঞাসা করলেন বাংলাদেশে কোথায় পড়েছি, দ্বীনী মাদরাসাগুলোর অবস্থা কি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হাদীছ পড়ানো হয় কি না ইত্যাদি। বাংলাদেশের অবস্থা কিছু বললাম, বিশেষ করে পাকিস্থানের প্রতি সরকার ও জনগণের মনোভাব জানালে উনি বললেন,

এখনো তোমরা ৭১-কে মনে রেখেছ? এত বছর পরও সেই সমস্যা জিইয়ে রেখে কোন লাভ আছে?
এশার ছালাতের পর আরো বেশ কিছুক্ষণ কথা হল। সবশেষে তাঁর দো‘আ নিয়ে ফিরে আসলাম। শায়খের নিরহংকার ও অমায়িক আচরণ, সুতীক্ষ্ণ রসবোধ এবং কোন প্রকার বিরক্তি ছাড়াই হাসিমুখে একনাগাড়ে ছাত্রদের নানামুখী প্রশ্নের উত্তর প্রদান করার মানসিকতা দেখে সত্যিই খুব ভাল লাগল।

শায়খের আব্বা ছিলেন পাকিস্তানের সুপ্রসিদ্ধ আহলেহাদীছ আলেমে দ্বীন আল্লামা আব্দুল গাফ্ফার হাসান (১৯১৩-২০০৭ইং)। তিনি মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীছ বিভাগে দীর্ঘ ১৮ বছর শিক্ষকতা করেছেন। পাকিস্তানে জামা‘আত ইসলামীর প্রতিষ্ঠাদানে তাঁর ছিল বিরাট ভূমিকা। তিনি মাওলানা মাওদূদীর অনুপস্থিতিতে আমীর হিসাবে দায়িত্ব পালন করতেন। ১৯৫৬ সালে জামা‘আতে ইসলামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তিনি এর প্রতিবাদে জামা‘আতে ইসলামী ত্যাগ করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘জামা‘আতে ইসলামী যদি জনগণের মধ্যে সঠিক ইসলামের প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে ইলেকশনের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে, তবে আমি এই দলের সাথে নেই’। তাঁর বেশ কিছু মূল্যবান গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। যার মধ্যে ‘দ্বীন মে গুলু’ পুস্তিকাটির বঙ্গানুবাদ সম্প্রতি ‘দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি’ শিরোনামে বাংলাদেশের ‘হাদীছ ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ’ প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে।

----

২২ নভেম্বর, ২০১৩ শুক্রবার

ইন্টান্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, ইসলামাবাদ

নিউ ক্যাম্পাস হোস্টেল নং-১, রুম নং : ১৮৫



বিষয়: বিবিধ

১৮০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File