ইসলামাবাদের ডায়েরী-৩
লিখেছেন লিখেছেন আহমাদ ফিসাবিলিল্লাহ ২৩ নভেম্বর, ২০১৩, ০২:০৮:১২ দুপুর
গত ১৫ নভেম্বর'১৩ শুক্রবার গিয়েছিলাম 'আল-হুদা ইন্টারন্যাশনাল ওয়েলফেয়ার ফাউণ্ডেশনে' জুম‘আর ছালাত আদায় করতে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৫মিনিট হাটার পথ। ড. ইদরীস যুবায়ের (ড. ফারহাত হাশমীর হাজব্যাণ্ড) আজ ছিলেন না। উনার জামাই আতীফ ভাইও ছিলেন না। লাহোরে গেছেন প্রাতিষ্ঠানিক কাজে। প্রবেশমুখে আতীফ ভাইয়ের আব্বার সাথে দেখা হলে উনি জানালেন আজকের খুৎবা দিবে উনার ছেলে হিশাম আল-হাদি। ২০-২২ বছরের টগবগে স্মার্ট যুবক। গত ৪ অক্টোবর এই অফিসে ড. ইদরীস যুবায়ের সহ সবার সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। তবে হিশামের সাথে সেদিন দেখা হয় নি। ১.৩০-এর দিকে খুৎবা শুরু হল। সূরা ফাতিহার উপর খুৎবা দিল। মোটামুটি ভালই হল, তবে নতুন বলে হয়ত এখনও ততটা অভ্যস্ত হতে পারে নি। তাছাড়া শৈশব কানাডাতে কাটানোর ফলে উর্দূ ভাল বলতেও পারে না। ছালাতের পর ওর সাথে দেখা হল। অনেকক্ষণ কথা হল বিভিন্ন বিষয়ে। বিশ্বের অনেক দেশে ঘোরার অভিজ্ঞতা হয়েছে তার ইতিমধ্যে। ড. যাকির নায়িক, ড. বিলাল ফিলিপস, মুফতি ইসমাঈল মূসা মেনক, আদনান রশীদ, বুনা মুহাম্মাদ প্রমুখ ইসলামিক ব্যক্তিত্বদের সাথে রয়েছে তার খুব ঘনিষ্টতা। সুতরাং অভিজ্ঞতার কমতি নেই। কথা বলে অনেক ভাল লাগল। সবশেষে যখন জিজ্ঞাসা করলাম, পড়াশোনা কোথায় করছ? বলল, 'বাড়িতেই'। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, 'না মানে কোন প্রতিষ্ঠানে এখন পড়ছ?' সে বলল, ‘কেন বাড়িতেই পড়াশোনা করি’। বললাম, ‘তার মানে’? সে বলল, ‘আমি প্রচলিত ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থাকে জ্ঞানার্জনের উপযুক্ত মাধ্যম মনে করি না। আমি এ পর্যন্ত ১৩টি স্কুলে পড়েছি। কিন্তু কোথাও ভাল লাগে নি। মুখস্ত করা এবং ভূলে যাওয়ার এই শিক্ষাপদ্ধতি আমি পরিবর্তন করতে চাই। এজন্য স্কুল ছেড়ে এখন বাড়িতেই লেখাপড়া করছি। আর গবেষণা করছি শিক্ষা ব্যবস্থাকে কিভাবে আরো সহজ এবং অধিকতর কার্যকর ফরম্যাটে নিয়ে আসা যায়’। আমি তো হতবাক। বলে কি এই ছেলে! বললাম, ‘কিন্তু তুমি যে পথে নেমেছ, মানুষ তো তোমাকে স্রেফ পাগল মনে করবে’। সে কনফিডেন্সের সাথে বলল, ‘বলুক, তাতে আমার যায় আসে না, মানুষ তো অনেক কথাই বলে’। আমি বললাম, ‘তার মানে তুমি সেই ছাহাবায়ে কেরামের যুগের মসজিদভিত্তিক শিক্ষাকার্যক্রমে ফিরে যেতে চাও না কি?’ সে খুব হাসল। বলল, ‘এক্সপেরিমেন্টে আছি। এর মধ্যে মাত্র ২ ঘন্টায় কুরআনের ৬০% শব্দের অর্থ শেখার একটা পদ্ধতি চালু করেছি, আমার ওয়েবসাইট খুললেই দেখতে পাবেন’। আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। শুধু বললাম, ‘আল্লাহ তোমাকে তোমার স্বপ্ন পূরণে তাওফীক দান করুক’। আসার সময় ভাবছিলাম, প্রচলিত যে কোন ট্রাডিশন ভাঙার জন্য যে সাহস এবং প্রত্যয়ের প্রয়োজন, ছেলেটার মধ্যে তা পুরোপুরি আছে। আল্লাহ চাইলে ছেলেটা নিশ্চয় ভবিষ্যতে অনেক বড় কিছু করবে। আল্লাহ তার সহায় হৌন। তবে আগামী সপ্তাহে আল-হুদায় গেলে ড. ইদরীস যুবায়েরকে নিশ্চয়ই জিজ্ঞাসা করব উনার ছেলেকে এমন পাগলামির অনুমতি উনারা দিলেন কিভাবে? আজীব!!
----
১৫ নভেম্বর, ২০১৩ শুক্রবার
ইন্টান্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, ইসলামাবাদ
নিউ ক্যাম্পাস হোস্টেল নং-১, রুম নং : ১৮৫
বিষয়: বিবিধ
১৬৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন