যে কারণে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা উচিত নয়
লিখেছেন লিখেছেন নীরব ঝড় ১১ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৫১:০০ সকাল
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নামক দলটিকে নিষিদ্ধের দাবী উঠেছে.ব্যক্তিগত ভাবে আমি শুধু জামায়াত নয় যেকোনো দলকেই নিষিদ্ধের বিপক্ষে.
বাংলাদেশে জামায়াত একটি অতীব পুরাতন রাজনৈতিক সংগঠন .আপনি আমি পছন্দ করি আর না করি তারা একটি আদর্শকে ধারণ করে তাদের সংগঠন পরিচালনা করে আসছে এবং এটিও অস্বীকার করার উপায় নেই যে দেশের একটা ভালো সংখ্যক লোক এই আদর্শ কে নিজেদের মধ্যে লালন করে.ভালো সংখ্যক বললাম এ জন্যই যে বাংলাদেশের বড় দুটো দল আন্দোলনই বলেন আর নির্বাচনই বলেন এই দলটিকে নিজেদের পাশে রাখতে সবসময় চেষ্টা করেছে .সংখ্যা ও শক্তি আছে বলেই না তারা জামায়াত কে গুরুত্ত দিয়ে দেখেছে.তবে এ তর্কে যাওয়াও আমার লেখার উদ্দেশ্য নয়.
কোনো আদর্শকে লালনকারী দলকে যদি আপনি নিষিদ্ধ করেন তাহলে কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষের মন থেকে কিন্তু সে আদর্শ মুছে যায়না.এবং এ আদর্শ গোপনে তার শাখা প্রশাখা বিস্তার করে একসময় ভয়াবহ ভাবে আবির্ভূত হয় .একটি প্রকাশ্যে পরিচালিত আদর্শকে অন্য অনেকভাবে মোকাবিলা করা যায় কিন্তু গোপনে পরিচালিত আদর্শকে মোকাবিলার রাস্তা থাকেনা .
আমরা সাম্প্রতিক সময়ে হরতাল গুলোতে জামায়াত- শিবিরের যে দৃঢ়তা দেখেছি,বুলেটের সামনে তাদের নেতা কর্মীদের যেভাবে বুক পেতে দিতে দেখেছি তাতে এটি একজন সচেতন মানুষের কাছে বুঝা খুব কঠিন নয় যে এদের শুধু নিষিদ্ধ করে দমিয়ে রাখা সম্ভব নয় বরং এটি হিতে বিপরীত হতে পারে-
এক, নিষিদ্ধ করে যদি তাদের সহিংসতার দিকে ঠেলে দেয়া হয় তাহলে এই সহিংসতার জন্য তো আপনি তখন নির্দিষ্ট কাউকে দায়ী করতে পারবেননা.আগে যেমনটি আমরা দেখেছি যে হরতালের আগে গাড়ি কে বা করা পুড়িয়েছে কিন্তু হরতাল যেহেতু বিরোধী দলের ছিল সেহেতু চোখ বন্ধ করে তাদের নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে.কিন্তু যদি কোনো দলকে নিষিদ্ধ করা হয় আর সে দলের কর্মীরা যদি কোনো সহিংস কিছু ঘটিয়ে পালিয়ে যায় তাহলে তো সে দলের নেতাদের আপনি ধরতে পারেননা.তারা যদি বলে আমাদের দল এখন নিষিদ্ধ আমাদের নেতাও নাই কর্মীও নাই বরং যারা এরকম ঘটাচ্ছে তাদের. গিয়ে ধরেন.আপনি কিন্তু নিজেই তাদের কে এ অজুহাত তুলে দিলেন.
দুই, এটিও অমূলক নয় একটি দল নিষিদ্ধ হলে সে আশেপাশের দেশের নিষিদ্ধ গোষ্ঠী গুলোর সাথে বন্ধুত্ব করে অস্ত্র নিয়ে এসে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে যেটি একটি দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য মোটেই শুভ নয়.
তিন,নিষিদ্ধ সংগঠনটির কারণে যদি দেশে অস্তিতিশীল পরিস্তিতি এমন পর্যায়ে যায় যেটি আশেপাশের দেশ গুলোর জন্য অনিরাপধ হয়ে দাড়ায় তাহলে আশেপাশের দেশ গুলো এই অজুহাতে সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে আমাদের সার্বভৌমত্ব কে আঘাত হানার সুযোগ পেয়ে যাবে.
তাই আমি মনে করি একটি আদর্শকে আরেকটি আদর্শ দিয়েই মোকাবিলা করা উচিত.কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে আজ দেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিরা তাদের আদর্শ ভুলে গিয়ে স্রেফ একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী তে পরিনত হয়েছে .যেখানে শিবিরের ছেলেরা মেধা ও মনন বিকাশে কাজ করছে সেখানে ছাত্রলীগ ব্যস্ত গ্রুপিং,চাদাবাজি,খুনাখুনিতে.তাদের অপকর্মে সাধারণ জনগণ অতিষ্ট .এমতাবস্থায় এদের মুখ থেকেই মানুষ যখন শুনে অমুক দলকে নিষিদ্ধ সময়ের দাবি তখন তাদের কাছে তা হাস্যকর ঠেকে বৈকি.
সাধারণ জনগণ এমনিতেই নানা সমস্যায় জর্জরিত সেখানে একটি দলকে তড়িঘড়ি করে নিষিদ্ধ করে তারা আরো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগুক এটা তারা চায়না. আশা করি সরকার এ ব্যপারে আরো সুবুদ্ধির পরিচয় দিবে.
বিষয়: রাজনীতি
৮৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন