মানুষ মানবতার জন্য হোক রক্তদান
লিখেছেন লিখেছেন ঝরাপাতা ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১০:৫৭:১৫ সকাল
রক্ত নিয়ে কাজ করিনি কখনো। নিজ কাজে অত সিরিয়াসলি দরকারও হয়নি কোন দিন। বেশ কয়েকবার বিভিন্নজন রোগীর পক্ষ থেকে অনুরোধ করার পর চেষ্টাও করেছি রক্ত সংগ্রহ করে দিতে। সংগ্রহ করে দেবার ক্ষেত্রে সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার হার অনেক বেশি।
সম্প্রতি আমাদের এলাকার এক রোগীর জন্য এ পজেটিভ রক্ত সংগ্রহ করে দেয়ার অনুরোধ করেছে স্বজনরা। রক্ত চেয়ে প্রথমে ফেসবুকে দিলাম পোস্ট। তেমন কেউ আগ্রহ না দেখালেও এলাকার এক ছোটভাই এগিয়ে আসলো। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। এবারের মতো ম্যানেজ তো করা গেল।
রোগীর অবস্থার অবস্থার অবনতি ঘটলে আরো এক ব্যাগ রক্ত চেয়ে ফেসবুকে পুণরায় পোস্ট দিই। এবার বিশটা লাইক পড়লেও কেউ আগ্রহ প্রকাশ করা তো দুরের ব্যাপার পোস্টটি শেয়ারও করেননি কেউ। ম্যানেজ করা গেলনা রক্ত। হতাশ হয়ে পরিচিতজন সহ আশপাশের অনেকের সাথে যোগাযোগ করতে থাকলাম। ইতিমধ্যে ফেসবুকের কল্যানে মাইজদীতে অবস্থানকারী এক ব্যক্তি রক্ত দেবার কথা বললেও পরে আর ফোন ধরেনি! বেশ কয়েকবার ফোন দিয়ে ক্ষান্ত হলাম।
রক্ত সংগ্রহের সাথে এবারই প্রথম প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত হয়ে বেশ কয়েকটি অদ্ভুদ আচরন ও পরিস্থিতির মুখোমুখি হলাম। বেশির ভাগ মানুষই মনে করে রক্ত দিলে শরীরে রোগ প্রবেশ করে। স্থায়ী ভাবে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এক শ্রেনির মানুষ আবার মনে করে রোগীতো আমার কেউ না আমি কেন রক্ত দেবো! আমার লাভ কি?
রক্তের জন্য খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট্য গ্র“পের দু ব্যক্তিকে পাওয়া গেলো। তাঁরা আমার অতি কাছের লোক। তাঁদের প্রতি প্রচন্ড আস্থা ছিলো বটে! অনেক করে বলার পরেও রাজি করাতে ব্যর্থ হলাম। একজন অবশ্য রক্ত দিতে সম্মত হলেও নানান ঠুনকো অযুহাতে বার কয়েক ঘোরালেন। শেষমেশ আমি লজ্জা পেয়ে তাঁর দিকে আর পা বাড়ালাম না।
অবাক লাগে! আধুনিক এ সময়ে যদি একজন অনার্স মাস্টার্স ডিগ্রী হোল্ডার যুবক মনে করে রক্ত দেয়া ক্ষতিকর, ভীতিকর। শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে যাবেন এ ভয়ে রক্ত দেন না। একজন অবশ্য ভয়ে রক্ত দেন নি। তিনি নাকি রক্ত দেখলেই জ্ঞান হারান!!! তাঁরা ভাবেন রক্ত দিলে সেই রক্ত আর শরীরে পুরন হয় না!!
বিজ্ঞান ও চিকিৎসা শাস্ত্রের মতে, একজন সুস্থ সবল মানুষ প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তত পক্ষে একব্যাগ করে রক্ত দান করতে পারেন। কেননা এ সময়ে মানুষের শরীরের পুরাতন রক্ত মরে গিয়ে অনুচক্রিকার মাধ্যমে নতুন রক্ত জন্ম নেয়। রক্ত দিলে শারীরিক কোন ক্ষতির ন্যূনতম আশংকাও নেই। দান করা রক্তের শুন্যস্থান নতুন রক্ত এসে পূর্ণ করে দেয়। ডাক্তাররা বলেন, প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর রক্ত দেয়া শরীর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
রক্ত নিয়ে বহু স্বেচ্চাসেবী প্রতিষ্ঠান কাজ করে। সময়মত এদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে যায়। অনেক সময় সংরক্ষিত রক্ত ডাক্তাররা ব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত করেন। ভেজালের শংকায় রোগীর স্বজনরাও নিতে চান না তা। আবার সংগঠনের সদস্যরাও আপদকালীন সময়ে যথা স্থান অবস্থান করতে পারেন না। ফলশ্র“তিতে মাঝে মধ্যেই ব্যর্থ হতে হয়।
বেসরকারী একটি সংস্থার সুত্রমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ছয় লক্ষ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। যার ২৫ শতাংশ সংগ্রহ হয়ে থাকে স্বেচ্চায় রক্তদানকারী হতে। রক্ত দিন, জীবন বাঁচান- এ শ্লোগান এবং এ শ্লোগানের পাশাপাশি শ্লোগান নিয়ে প্রায় সবকটি স্বেচ্চাসেবী সংগঠন রক্তের গ্রুপ নির্নয় ও রক্তদানে উৎসাহী করতে কাজ করে যাচ্ছে। লক্ষ্য করলে দেখবেন, রক্ত সংগ্রহ বা দানে বেসরকারী সংগঠন গুলোই বেশি ভুমিকা রাখছে। প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছে। কিন্তু অতি গুরুত্ববহ এ ব্যাপারটি নিয়ে সরকারী কোন উদ্যোগ তেমন চোখে পড়ছে না। রক্তদানের মতো একটি মানবতাবাদী কাজে সরকারী কোন পক্ষই ভুমিকা রাখছে না।দেশে যে সব সংগঠন রক্ত নিয়ে কাজ করে তাদেরকেও তেমন সহযোগিতা করছে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। পাশাপাশি রক্তদানের উপকারিতা সম্পর্কে সর্বস্তরের মানুষকে বোঝাতে প্রচার প্রচারনা বৃদ্ধি করারও জোর দাবি জানাই এবং স্বেচ্চাসেবী সংগঠন গুলোকে প্রনোদনা দানের ব্যাপারেও ভেবে দেখা যেতে পারে।
আমার রক্তে জীবন পাবে একজন মানুষ-এমন ভাবনায় পুলকিত হোক প্রতিটি মানুষের মনে। আমার রক্তে বেঁচে থাকবে একটি জীবন এমন মহৎ ও মানবতাবাদী কাজ মানুষের বিবেকবোধকে তাড়িত করুক। এমন আশাবাদ করি।
বিষয়: বিবিধ
১৪৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন