একজন জালাল উদ্দিন এবং আমরা চা পোষা পাবলিক
লিখেছেন লিখেছেন ঝরাপাতা ১৫ এপ্রিল, ২০১৫, ০৮:৫৪:৩২ সকাল
বেশ কযে়ক বছর আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনে জনস্বার্থমূলক একটি বিজ্ঞাপন দেখতাম বাংলা ছবির ফাঁকে ফাঁকে। ‘এই চল জলিলের বাডি় ঘেরাও করি। কি করছে জলিল? মিনুরে এ্যাসিড মারছে। বহুল প্রচারিত ঐ বিজ্ঞাপনটির ভাষা বদলে গেছে। এখন হবে- এই চল জালালরে আটক করি। কি করছে জালাল? জালাল পেট্রলবোমা, হরতাল অবরোধ ও ক্রসফায়ার আজীবনের জন্য বন্ধ চাইছে------!
একজন জালাল উদ্দিন। দেখলে মনে হবে মাথায় কিছু একটা আছে! বেশ কিছু দিন আগে ঢাকার রাজপথে তাকে দেখা গিযে়ছিল হারিকেন হাতে। শ্লোগান ছিল- সৎ ও ভালো মানুষ তথা রাজনীতিবিদ চাই। সেই জালাল উদ্দিন আবারো মাঠে নামলেন। এবার একেবারে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। চব্বিশ ঘন্টার অবস্থান ধর্মঘট আহবান করে চডে় ওঠলেন গাছে। কিছু শুকনো খাবার, একটি হারিকেন ও বেশ কিছু ফেস্টুন নিযে় সকাল নয়টায় তিনি প্রায় বিশ ফুট উচ্চতার একটি গাছে উঠলেন। হাতে ছিলো একটি হ্যান্ড মাইক। ঐ মাইক থেকে বর্তমান কুলষিত রাজনীতি থেকে পরিত্রান পেতে কিছুক্ষন পর পর বিভিন্ন শ্লোগান বা নির্দেশনা দিতেন তিনি।
চব্বিশ ঘন্টা পর জালাল উদ্দিন নেমে এলেন গাছ থেকে। আটক হলেন পুলিশের হাতে। অবশ্য এর আগেই তাকে আটকের জন্য প্রস্তুত ছিলেন পুলিশ। পত্রিকায় তার আটকের খবর দেখে চিন্তায় পডে় গেলাম। জালাল উদ্দিন আটক হলেন কেন? তিনি কি এমন অপরাধ করেছেন যে তাকে আটক করতে হবে? জালাল কি তবে কাউকে এ্যাসিড মারছে। যদি মেরেও থাকে তবে তারা কারা?
মন্দ ভাগ্য আমাদের। আমরা এমন একটি দেশে জন্ম নিযে়ছে। যে দেশের সকল রাজনৈতিক দল জনগনের কল্যানের কথা বললেও বাস্তবে তার উল্টোটা প্রকাশ পায়। তা না হলে কি করে একটি স্বাধীন দেশে দুই মাসেরও অধিক সময় ধরে হরতাল অবরোধ চলতে পারে? কিভাবে স্বজাতিরা পেট্রল বোমায় জ্বলসে দিতে পারে অন্যের শরীর, জীবন? কেন ঘটবে বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ার? ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতিতে কেন বলি হবে মনুষ্য জীবন? আম জনতা কেন ক্ষমতার বলি হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর চাওয়ার অধিকার কিংবা সাহস কোনটায় আজ আমাদের নেই! আমাদের সাহসের মুরোদ নেই বলে কথিত দার্শনিক জালাল উদ্দিনরা মাঠে নেমেছে ষোল কোটি মানুষের প্রতিনিধি হযে়।
জালাল উদ্দিনের বলা কথা ও ফেন্টুনে বলা কথা গুলো কি তবে এ্যাসিড? যদি তাই হযে় থাকে তবে তা কোন মিনুর শরীরের আঘাত হেনেছে। কারা ক্ষতিগ্রস্থ হলেন তার ছুডে় দেয়া আহবানে? কেন তাকে আটক করা হলো? তিনি তো কারো পক্ষ নেননি। কোন দলের কথা বলেন নি! তিনি তো রাজনীতির অশুভ খেলায় জর্জরিত ষোল কোটি মানুষের কথা বলেছেন। যা বলা উচিত ছিলো আমাদের দেশের সচেতন এলিট শ্রেনির লোকেরা। কিন্তু এই এলিট মানুষ গুলো পারেননি বলে জালাল উদ্দিনের আবির্ভাব।
আমাদের সব কিছু এখন গাঁ সওয়া হযে় গেছে। যে যার মতো বাঁচতে চাইছি। ফাঁক গলে বেরিযে় যাচ্ছি নিজেরা বাঁচার তাগিদে। প্রতিবাদ প্রতিরোধ শ্লোগান দেবার মতো তেজ আমাদের শরীরে আজ অবশিষ্ট নেই। আমরা দিব্যি চলছি আতংকের সাথে সমান তালে। আমাদের শরীর পুড়ছে আগুনে। আমাদের পরীক্ষা গুলো পেচাচ্ছে। রাস্তায় চলাচলে দ্বিগুন তিন গুন বেশি ভাড়া দিচ্ছি। ঘরের মধ্যে বন্দি হযে় যাচ্ছি প্রতিনিয়তই। আমাদের প্রতিবাদের ভাষা গুলো জডে়াতার খোলসে বন্দি।
তা না হলে এবাবে দেশ চলতে পারে না। অর্থনীতির এ বিশাল ক্ষতি হতে পারে না। এসপার ওসপার একটা না একটা কিছু হতেই হবে। আমরা কেবল শান্তি চাই। বাঁচার নিশ্চয়তা চাই। শান্তি ও বেঁচে থাকার সমূহ নিশ্চয়তা না পেলে আমাদের সবাইকে একেক জন জালাল উদ্দিন হতে হবে। সে অপেক্ষায় থাকলাম যে দিন এ দেশে জালাল উদ্দিনরাই শান্তির বাতায়ন খোলার দাযি়ত্ব নিবে।
স্যালুট!! দার্শনিক জালাল উদ্দিন। আমরা না পারলেও তুমি পেরেছো। তোমাদের মতো চা পোষা জালাল উদ্দিনরাই যুগে যুগে প্রমান করেছে। তারা পারে। তারা পারবেও। সে ইতিহাস আমরা ৫২, ৬৯, ৭১, ৯০-এ দেখেছি। আপনী জালাল উদ্দিন সেসব ইতিহাসের সহযাত্রীও বটে।
বিষয়: বিবিধ
১১৪২ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন