অনলাইন সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতার বাস্তবতাঃ
লিখেছেন লিখেছেন ঝরাপাতা ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১১:৪৯:৩৮ রাত
এক কালে কাক ও কবির আধিক্য থাকলেও বাংলাদেশে এখন অনলাইন সাংবাদিকের আধিক্য জমঝমাট!! জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের গন জোয়ারে অনলাইন সংবাদপত্রের প্রয়োজনীয়তার পারদ প্রচন্ড রকম নিম্নমুখী হলেও ব্যাঙাচির মতো হু হু করে বাড়ছে এ কথিত মিড়িয়া মাধ্যম।
::
ডিজিটালের দোহায় তুলে সাধারনের সাথে প্রতারনাও চলছে বেশ। যে দেশের একটি জেলা শহরে একটি মেইল পাঠাতে দোকানদার চল্লিশ পঞ্চাশ টাকা নেয়। অন লাইনে চাকরীর আবদেন করতে একজন বেকারকে গুনতে হয় অন্য সকল চার্জ চাড়াই দেড়শত টাকা। যেদেশে থ্রিজি দুরের কথা টু জি দিয়েও গ্রামে একটি ছবি ফেবুতে আপলোড দিতে ঘাম ঝরাতে হয়। সে দেশে হাজার হাজার অনলাইন সংবাদপত্র দিয়ে কি করবে বুঝতে পারিনা।
::
প্রত্যকটি সংবাদ কর্মীই যেন এক একটা অনলাইন সংবাদপত্র। খ্যাত অখ্যাত এসব ভুঁইপোড় সংবাদপত্র বেশিরভাগই নিজের হীন স্বার্থে ব্যবহার করা হয়। পরিচালনা করা হয় দেশ কিংবা বিদেশে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থেকে। দু একটা বাদে সব গুলো সংবাদপত্রের কর্মী সংখ্যা একজন। এ একজনই সম্পাদক, রিপোর্টার এবং অফিস সহকারী কিংবা বিনিয়োগকারী। এদের আবার অফিসও নেই। বাসাবাড়ির বেড রুমেই বসে সাংবাদিকতার নামে এ মহান কর্মটি সাধন করে যাচ্ছে দিনের পর দিন।
::
ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থেকে যা ইচ্ছা তা মন গড়া ভাবে লিখেই যাচ্ছে এরা। কপি পেস্ট করে দিব্যি কথিত সব নিউজ আপলোড দিচ্ছে। দু একটি সংবাদপত্রের মোটের উপর দু একজন কর্মী থাকলেও সম্মানী নামের কাগুজে নোট ইহকালেও চোখে দেখে না তারা।
;:
মাঠ পর্যায়ে আরো করুন চিত্র। এক একজন অনলাইন সংবাদ কর্মী বিশ পঁচিশটার যৌথ প্রতিনিধি। পদ পদবী লিখতে লিখতে ভিজিটিং কার্ড সারা। নিউজ একটা সব অনলাইনে সেটিং করে। মোটর সাইকেলে কিংবা কথিত সব আইডি কার্ড ব্যবহার করে তেনারা সাংবাদিক সাজেন।ক্ষমতার বহর দেখান!! মাঝে মধ্যে চাঁদাবাজি কিংবা ফাঁপর বাজীতেও দেখা মেলে অনেকের।
::
কথিত এসব অনলাইন পত্রিকার সংখ্যা কতো তা সরকার কিংবা কারোই জানা নেই। নেই কোন পরিসংখ্যানও। তদারকি কিংবা নীতিমালার আওতায়ও নেই তারা। এ দেশে কৃষক জেলে হতে হলে কার্ড বা পরিচয়পত্র লাগে কিন্তু অনলাইনের সম্পাদক প্রকাশক কিংবা সাংবাদিক হতে কোনটারই প্রয়োজন হয় না। সাইট খুলতেও কারো তোয়াক্কা করা লাগেনা।
::
মিথ্যা ভুঁয়া প্রপাগান্ডা বা রগরগে যৌনতার নিউজ ছেপে কয়েকটা হিট নয়তো ভিজিটর বাড়ানোর মতে নৈতিকতাহীন আকাংক্ষা ওদের দৈনন্দিন রুটিন। কথিত সব সংবাদে থাকে ভুলে ভরা তথ্য ও তত্ত্ব। এমনও অনলাইন আছে এক বছরেও কোন ভিজিটর দেখেনি। নামেই কেবল উপস্থিতি। অন্তরালে নিজেদের হীন সব উদ্দেশ্য ও এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সবার চোখের সামনে দিয়ে।
::
ইদানিং কালে কাগুজে সংবাদপত্রের ন্যায় অনলাইনেও পড়েছে কর্পোরেট গোষ্ঠির খপ্পর। নিজেদের ব্যবসায়িক সব কটুকতা জায়েজ করার জন্যই তাদের সবল উপস্থিতি তা সকলে বোঝে এবং জানে। কিন্তু কেউ কিছু বলে না। করে না।স্বাডম্বরে শুরু করে স্বার্থ পুরালেই তল্পিতল্পা গুটিয়ে নেয় এসব মিড়িয়া হাউজ গুলো। যে কয়টা চলে তা সরকার পক্ষকে তেল মেরে নিজেদের পথেই হাঁটছে কেবল।
::
এসবের নেই কোন বিধি কিংবা নীতিমালা। যখন তখন চলে কর্মী ছাঁটাই। তৃণমুল থেকে কেবল ফাও নিউজ চায়। কপি পেস্ট করে সাংবাদিকতা করে।ভুঁইফোড এসব পোর্টাল কখন শুরু হয় আবার কখন হারিয়ে যায় কেউ জানেনা।
::
সময় এসেছে অনলাইন সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতাকে নিয়ন্ত্রন করার। লাগামহীন ভাবে আর চলতে দেয়া যায় না এসব হঠকারীতাকে। বিধি ও নীতিমালা করতে হবে সকল বিষয়ে। শুরু থেকে শেষ সব বিষয়ে এ নীতিমালা যেন চালু থাকে তাও তদারকি করতে হবে। নিয়োগ বেতন ছাঁটাই সবকিছুই কর্মীবান্ধব হতে হবে। থাকতে হবে এসবের স্বচ্ছ প্রয়োগও।
::
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অতিসত্তর সু দৃষ্টি কামনা করছি।
::
১১.০৯.২০১৪
বিষয়: বিবিধ
১২২৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যে কোন কিছুতেই নীতিমালার প্রয়োজন বলে শুর তোলা,অনেক নীতিমালা আছে এ বংগে-প্রয়োগ কয়টা হয়।
শুধু নীতি মালা নয়, ব্যক্তিকে আগে বদলাতে হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন