নিম্ন মধ্যবিত্তের বাবা-মা আর সন্তানেরা

লিখেছেন লিখেছেন ঝরাপাতা ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১০:৫১:৪৪ সকাল

জন্মের পর থেকেই আমাদের সাথে বাবার সানিধ্য একটা নিদ্ধিষ্ট সীমা রেখা বজায় চলে সমান্তরালে।জীবন জীবীকার অরাধ্য প্রয়োজনে তিনি হয়ে পড়েন অপরিচিত কিংবা আগুন্তক। চিন্তা চেতনায় থাকে আকাশ পাতাল ফাঁরাক।

:

আমরা বাবা মাকে ভীষন ভালোবাসি কিন্তু প্রকাশ করতে পারিনা কখনোই। পরম আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরতে আমাদের সংকোচ লাগে। হীনমন্যতা বোধ করি। পাশাপাশি চলতে পারিনা বহু দুর।বাবা মার সাথে শেয়ার করতে পারিনা কোন সুখ দুঃখ।

;

আব্বা আম্মার সাথে আমাদের দুরত্ব থাকে যোজন যোজন দুর।অদৃশ্য কোন এক দেয়াল গড়ে ওঠে আমাদের মাঝে। যার আয়তন কেবলই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে রোজ।মুখ খুলে এক সাথে হাসতে পারিনা। পারিনা কাঁদতেও। আমাদের খাবার টেবিল গুলো ভরে ওঠেনা কোন বারোয়ারি আড্ডায়। যে যার মতো চলছে। করছে। আমাদের আয়োজন গুলো হয়ে ওঠেনা লাঞ্চ কিংবা ডিনার। ড্রয়িং রুম গুলো হয়না আড্ডার সুতিকাগার।

:

বাবা মাকে ভালোবাসার দিনগুলো নিরামিষই থাকে আমাদের কাছে। বিশেষ কোন দিনে কোন বিশেষ কিছুও কেনা হয় না তাদের জন্য। প্রয়োজন ছাড়া কেউ কাউকে ফোন দেই না।এসএমএস করিনা। স্বর্বত্রই যেন এক অদৃশ্য শেকল।

:

ছোট বেলা থেকেই আমরা শিখি বাবা হলো ভয়ের জিনিস।তাঁর সাথে অপ্রয়োজনীয় কিছু বলা যাবেনা। চাওয়া যাবেনা। কিছু বলতে বা চাইতে হলে মাকে ভায়া করতে হতো।আমাদের শিশু মনে ঢুকিয়ে দেয়া হয় বাবা কে ভয় পেতেই হয়। উনার সামনেও থাকা যাবেনা। সে সকল দুরত্ব সবিশেষ বজায় থাকে আজন্ম।

:

আর্থিক দৈন্যতায় আমাদের ভালোবাসা গুলো মরে হয়ে যায় শুকনো পাতার মতোন খচখচে।রুক্ষ! অন্তহীন লুকানো আবেগের স্থলে আশ্রয় নেয় চাপা অভিমান আর সংকোচেরা।

:

ঈদে চাঁন্দে আমরা বাবা মার পা ছুঁয়ে সালাম করতে কুন্ঠিত হই। কুঁচকে যাই। এক সাথে ঈদ গাহে যেতে আসতে পারিনা। পারিনা কোলাকুলি করতেও। দোকানে বসে চা খেতে পারিনা।পারিনা একত্রে রিকসায়ও যেতে।আব্বু আম্মু বলে ডাকতে পারিনা তাঁদের। ডাকতে গেলেই মনের অজান্তে বেরিয়ে আসে অচেনা সব শব্দ।

:

প্রিয় বাবা মা তোমাদের ভীষন ভালোবাসি শ্রদ্ধা করি। তোমাদের ছাড়া সবই অন্তসার শুন্য মনে হয়। তোমাদের কিছু হলে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে। দিকবিদিক হয়ে পড়ি তোমাদের ক্ষনিকের বিরহে।জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি তোমাদের।ভক্তি প্রনাম করি বিশেষ পরমতায়।

:

আজো প্রথম পাওয়া বেতনের টাকা তোমাদের হাতে তুলে দিই। পেরতি মাসে বেতন পেলেই তোমাদের কথা সবার আগে মনে পড়ে। তোমাদের টানেই ছুটে যাই প্রতি সাপ্তাহ বাড়িতে।

:

জানো? আমাদের ভেতরের দিকটা কেউ দেখেনা। দেখে কেবল বাহ্যিক আবরন। আমাদের ভালোবাসার কথা গুলো অপ্রকাশিকই থাকে বেশি। তোমাদের জন্য আমাদের ভালোবাসা শ্রদ্ধা গুলো লুকানো থাকে ডায়েরির পাতায়। যে গুলো প্রকাশ হয়না। আমরাও করিনা।

:

জানি তোমারাও আমাদের ভীষন রকম ভালোবাস।তাইতো আজ অবধি ত্যাগ করে যাচ্ছো আমাদের ছয় ভাই বোনের জন্য। আব্বু আম্মু, আমরাও তোমাদের ভীষন ভালোবাসি। ভীষন রকম!! যেটুকু আমরা প্রকাশ করতে পারিনা সেটুকু আমরা সাজাই মনো মন্দিরে আর কল্পনায় নানান রং মিশিয়ে। যা সকল সন্তানের বেলায়ই সত্য।

:

ভালো থাকুক আমার বাবা মা। বেঁচে থাকুক তারা অনাদিকাল। সাথে মেলবন্ধন ঘটুক সবার বাবা মা'র।

সালাম পৃথিবীর সকল পিতা মাতাকে।

:

০৯.০৯.২০১৪ইং

(নিম্ন মধ্যবিত্তের জীবন থেকে)

বিষয়: বিবিধ

১২৫০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

263201
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:১২
কাহাফ লিখেছেন : নিম্ন মধ্যবিত্ত্ পরিবারের অপ্রকাশিত ভালবাসা-শ্রদ্ধা-স্নেহ-মায়া-মমতাই পরিবার গুলো কে বিনে সুতায় বেধে রাখে আমরণ,যা আমাদের গর্ব-অহংকার।। সকল পিতা-মাতা কে সালম ও শুভেচ্ছা।
263217
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১৮
দ্য স্লেভ লিখেছেন : অনেক ভাল লাগল।
263320
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৯
মু নূরনবী লিখেছেন : হুম...

মধ্যবিত্ত পরিবার মানেই টানাটানির সংসার।
এভাবেই চলতে হয়।
263406
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৩৪
মনসুর লিখেছেন : মাশাআল্লাহ, সুন্দর লিখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ, জাজাকাল্লাহু খাইরান। শুভেচ্ছান্তে ধন্যবাদ।

বলুন, রাব্বির হাম-হুমা কামা রাব্বা ইয়ানী ছাগিরা।

মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File