মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ, দেশপ্রেম, খেলাধুলা মিলেমিশে একাকার!
লিখেছেন লিখেছেন ঝরাপাতা ০৫ মার্চ, ২০১৪, ০২:২৪:১৩ দুপুর
বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তানের ক্রিকেট খেলা সম্পর্কিত আমার এর আগের স্ট্যাটাসে দেয়া এক বন্ধুর পযে়ন্ট ভিত্তিক মন্তব্যের জবাবে এ স্ট্যাটাস: ##
## ০১. গ্যালারীতে কেন স্বাধীনতার গান গুলো বাজবে? মাথায় কেন থাকবে স্বাধীনতার শ্লোগান সম্বলিত প্লেকার্ড?
*** জবাব: আমি দ্বিধাহীন কন্ঠে বলতে চাই এবং বিশ্বাস করি স্বাধীনতা আমাদের সর্বোচ্চ পাওয়া। আমাদের পবিত্র অর্জন। এ মাস স্বাধীনতার মাস। এ মাসেই এশিয়া কাপ। খেলা আমাদের। বিপক্ষ পাকিস্তান। মি. তবে কি সরকারের ভুল ছিলো এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে আসার অনুমতি দেয়া? আচ্চা অনমুতি দেয়ার জন্য কি সরকার দায়ী নয়? এই মার্চ মাসেই তো আমাদের উপর বর্বর ভাবে হামলে পডে়ছিলো। পাকিস্তান বাংলাদেশে আসার পথে বিমানবন্দরে তো কেউ ব্যানার পেষ্টুন নিযে় দাড়ায় নি। কেউ মানববন্দন করেনি। কেউ কোন ধরনের প্রতিবাদ করেনি। এই পাকিরাতো উন্মাদের মতো ঝাপিযে় পডে়ছিলো আমাদের নিরীহ মানুষ গুলোর উপর। খেলার স্বার্থে ধরে নিলাম অনুমতি দেয়া হলো পাকিস্তানকে। ঐতিহাসিক যে গান গুলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাহস যুগিযে়ছে। আমাদের উতসাহ দিযে়ছে। মাতৃভূমি বাঁচাতে উদ্বুদ্ধ করেছে। সর্বপোরি আমাদের অশরীরি সঙ্গী হিসেবে নির্ভীকতা দিযে়ছে। সেই গান গুলো কি স্টেডিয়ামে বাজাতে হবে? তার শুধুমাত্র পাকিস্তানের বিপক্ষে? কা আমাদের কি খেলায় বিশেষ করে ক্রিকেটে শক্তি সাহস যোগানোর মতো গান নেই? দেশ প্রেমে উজ্জিবীত করার আর অন্য কোন গান নেই। ও গান গুলো তো আমাদের সম্পদ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অহংকার। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। খেলার মাঠে কিংবা খেলার মতো বিনোদনের মঞ্চে এ মহান্বিত গান/সম্পদ গুলোকে উপস্থাপন করে কি অপমানিত করবো আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ গুলোকে? আচ্চা উপস্থাপন করা হলেও কি প্রতিশোধ নেয়া হযে় যাবে? ল্যাঠা কি এত সহজে ছুকে দেব আমরা? পাকিস্তানের বিভিন্ন খেলার খেলোয়াড়রা প্রতিনিয়তই আমাদের দেশে খেলে যাচ্ছে। হকি, ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলার কোচ আসছে পাকিস্তান থেকে। আফ্রিদি বাংলাদেশে ফ্যাশন হাউজ দিযে়ছে। সাইদ আনোয়ার সহ বেশ কযে়কজন মাংশের ব্যবসা করছে। সরকারের সুসম্পর্ক রযে়ছে। পাকিস্তানি চ্যানেল চলছে দেশে। নায়ক নাযি়কা আসছে ওদের। কলা কুশলী আসছে আমাদের দেশে। ধারাভাষ্য দেয় ওদের দেশের লোকে। সার্কে ওরা সদস্য। আইসিসির সভাপতি হতে ওদের সমর্থন নিই। ভোট চাই। বিহারীরা বাংলাদেশে বসবাস করছে শান্তিতে। কই এসবের জন্য কেউ তো টু শব্দটিও করছে না। কেবল ক্রিকেটি দাওয়াত দিযে় এনে প্রতিবাদ করতে হবে কেন?
## ০২. পাকিস্তানের বিপক্ষে মিছিল সমাবশে শ্লোগান আমরা ঐ দিনই দেবো যে দিন আমরা যেদিন পাকিস্তান ক্ষমা চাইবে একাত্তোরের ভূমিকার জন্য:
***জবাব: প্রথমত স্ট্যাটাসটি ছিলো খেলা কেন্দ্রিক। তাই একে খেলা দিবস কেন্দ্রিক মনে করাই ভালো। খেলার কারনে যে আমরা মিছিল সমাবেশ করবো না তা নয়। সারা বছর ধরে করতে পারি। সারা মার্চ মাস ধরে করতে পারি। তাই না? শুধু খেলা বলে কেন আমরা প্রতিবাদ করা থেকে বিরত থাকবো? তাই বলে শুধুমাত্র পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার দিন আমরা প্রতিবাদ করবো মাঠে। আর কোথাও নয়! মাঠে হাজির হবো যুদ্ধাংদেহী মনোভাবে? প্রতিশোধের কামুকতা নিযে়? একাত্তরে পাকিস্তানের ভূমিকা নিযে় প্রতিবাদ তো সবাই করে আমরাও করি। শাহবাগ করে। প্রজন্ম চত্তর করে। লেখক বুদ্ধিজীবীরাও করে। বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষে করে। সর্বস্তরের মানুষে করে। করা উচিত। যিনি করবেন না তার জন্ম পরিচয় নিযে় শংকা থাকবে বলে দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি। নিশ্চয় আপনীও করেন। আমিও করি।
###০৩. পাকিস্তানের সাথে আমাদের সার্বভৌম নিযে় হিসেব নিকেস একাত্তরের পর থেকেই। যেটার জন্য কাজ করছে কুটনৈতিক ও সরকার:
***জবাব: একজন মানুষকে একবারই ফাঁসি দেয়া যায়। তার যতো দোষ বা অপরাধ হয়। এখন কি আর পাকিস্তানের প্রতিটি নাগরিককে ধরে ধরে বিচার করা সম্ভব? প্রতিটি অপরাধীকে কি ফাঁসি দেয়া সম্ভব হবে? জেল অথবা সাজা দেয়া সম্ভব হবে? পাকিস্তানের অপবাধের জন্য সরকার বা কুটনৈতিকরা কাজ করবে এটা যুক্তির কথা। তাই বলে কি আমরা চুসপে যাবো? ওদের উপর দাযি়ত্বভার তুলে দিযে় আমরা ঘুম যাবো? কখনোই নয়। সম্ভবও না। প্রতিবাদ সকল দেশপ্রেমিদের করা উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে। আমরা আন্দোলন করে সরকারকে বাধ্য করতে হবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে। সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করতে। ধরে নিলাম সরকার তাই করলো আমাদের দাবি মতে। আর এতেই কি আমাদের সকল কিছু অর্জন হবে? এতেই কি একাত্তরে তাদের বর্বর ভূমিকার যবানিকাপাত ঘটবে? পুরোপুরি প্রতিশোধ নেয়া হযে় যাবে? ধরে নিলাম পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমা চাইলো। এতে কি তাদের সকল অপকর্ম ঢাকা পডে় যাবে? এতেও যদি না হয় তবে আমাদের কি করা উচিত? কি করনীয়? ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের দাম আমরা কি দিযে় দিতে পারি? পাকিস্তানের ঠিক কতটুকু শাস্তি হলে আমাদের পর্যাপ্ত মনো তৃপ্তি ঘটবে? বলবেন কি? আমার একান্ত কথা: একাত্তরে বর্বরতার জন্য অবশ্যই পাকিস্তান কে শাস্তি পেতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি একদিন পাকিস্তান শাস্তি পাবেই। কোন ভাবেই আমি পাকিস্তানকে সমর্থন করতে পারিনা। বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারিনা ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের সাথে। বাংলাদেশকে অস্বীকার করতে পারিনা আমি কোন ছলা কলায়। আমার দেশ আমার অহংকার। আমরা হারলেও বাংলাদেশ। জিতলেও বাংলাদেশ। খেলায় করা ভূল গুলো আমাদের সামযি়ক মনে কষ্টের কারন হলেও পক্ষেনেই আমরা ভুলে যাই। ভালোবাসি বাংলাদেশ। সামান্য একটা খেলায় পাকিস্তানকে হারিযে় দিযে় একাত্তরের প্রতিশোধ আমরা নিতে পারবোনা। ওদের কে হারানো আমাদের অহংকার। সাংষ্কৃতিক বিজয়। প্রযে়াজনে আমরা হাজার বার হারাবো। লক্ষ বার হারাবো ওদের। শুধু মার্চ মাস কিংবা খেলার মাঠে আমাদের প্রতিশোধ নেবার আন্দোলন কুক্ষিগত রাখবো? ওটা তো কেবলই খেলা। বিনোদনের মাধ্যম। সামান্য খেলায় জয় পরাজযে় আমাদের বিশাল অপূরনীয় ক্ষতির প্রতিবাদ কখানোই সম্ভব না। আমরা আরো বড় কিছু চাই। আন্তর্জাতিক ভাবে পাকিস্তান আমাদের কাছে তাদের ভুলের জন্য অন্যাযে়র জন্য অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে। খেলাধূলা বিনোদন কিংবা সাংষ্কৃতির সেতুবন্দন রচিত করে। মানুষকে সভ্য হতে শেখায়। তাই অন্তত খেলাতে আমাদের আবেগের/স্বাধীনতার মতো বিশাল বিষয়টাকে টেনে আনা কোন ভাবেই সমর্থন করিনা। পাকিস্তানীরা বেয়াদব হতে পারে কিন্তু আমরা সভ্য। ক্ষমাশীল জাতি আমরা।
####### আমার পূর্বের দেয়া স্ট্যাটাসটি হলো: ############
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ, দেশপ্রেম, খেলাধুলা মিলেমিশে একাকার! বিনোদনের জন্য খেলাধুলা। আর সে খেলাটাই হয়ে গেলো আমাদের কারো কারো মতে স্বাধীনতার পক্ষ- বিপক্ষের। পাকিস্তানের সাথে আমাদের সার্বভৌম নিয়ে হিসেব নিকেস সেই একাত্তোরের পর থেকেই। যেটার জন্য কাজ করছে কুটনৈতিক ও সরকার। এমনওতো নয় যে পাকিস্তান আমাদের দেশে এই প্রথম খেলতে এলো। তা না হলে গ্যালারীতে কেনো স্বাধীনতার গান গুলো বাজবে! মাথায় কেন থাকবে স্বাধীনতার শ্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড! খেলাধুলা যদি সাংষ্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যম হবে তবে কেনো ভারত ফাইলালে যাবে এ ছুঁতোয় আমরা পাকিস্তান সাপোর্ট করবো! কেনো আমরা ভালো খেলার প্রসংশা করবনা! পাকিস্তান হারলে কেনো আমরা মিছিল করবো? কেনো বক্তব্য রাখবো একাত্তোরের প্রতিশোধের নেবার। আমাদের স্বাধীনতা কি এতোই ঠুনকো যে একটি খেলায় ওদের হারিয়ে দিয়ে বিষয়টা চুকিয়ে ফেলবো? ওদের সাথে আমাদের ঐতিহাসিক ব্যাপার স্যাপার মেলানোর জন্য আরো বিশাল পথ পাড়ি দিতে হবে। সরকারি ভাবে পাকিস্তানকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের কাছে।
বিষয়: বিবিধ
১১৩৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যারা ৭১ এর সময় যুদ্ধে না গিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল আর এখন উড়ে এসে জুড়ে বসেছে , তারাই খেলার সাথে যুদ্ধকে মিশিয়ে আমাদের বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে ।
সাবাশ বাংলাদেশ,
যাও এগিয়ে আমার বাংলাদেশ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন