মেঘনার ভাঙ্গন প্রতিরোধ আন্দোলনে সফলতা যেভাবে আসবে ::: পর্ব-০২
লিখেছেন লিখেছেন ঝরাপাতা ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৪:১৫:৫০ বিকাল
আমরা ধরে নিতেই পারি আন্দোলন শুরু হলে আইনী জটিলতা এসে সামনে দাড়াবে। টানা কর্মসূচি পালনের কারনে আইন শৃ্খংলা বাহিনীর সাথে ছোট বড় এক বা একাধিক সমস্যা সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। এর কারনে মামলা হামলার শিকার হতে হবে অনেক আন্দোলনকারীকে। আবার দেখা যাবে আন্দোলনের বিপক্ষে থাকা একটি পক্ষও নানান সমস্যা সৃষ্টি করতে চাইবে। আর সমস্যা সংঘর্ষ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। আইনগত এসকল দিক গুলো দেখার জন্য একাধিক আইনজীবী আন্দোলনকারীদের ফেভারে থাকা প্রযে়াজন। যাতে করে তারা তাৎক্ষনিক আইনী জটিলতা গুলো মোকাবেলা করতে পারেন। এবং এ বিষয়টি হতে হবে একেবারে স্বেচ্চায় ও বিনা টাকায়। রামগতি ও কমলনগরে বহু আইনজীবী সুনামের সাথে দেশের বিভিন্ন কোর্টে দাযি়ত্ব পালন করে আসছেন। তারা অন্তত নিজ জন্মস্থান বাচানোর জন্য হলেও আইনী এ সুবিধাটা অন্তত আন্দোলনকারীদের দেয়া উচিৎ। আন্দোলনে এ দিকটাই অনেক গুরুত্ব বহন করে। কেননা দু একটি মামলা হলেই ভযে় অনেকেই আন্দোলন থেকে পিছু হটবেন। একসময় দেখা যাবে আন্দোলন আর জমছে না। অতীতে আমরা তাই দেখেছি। জেলা প্রশাসক ও টিএনও কে ঘেরাও কর্মসূচি পালন কালে প্রশাসন মামলার হুমকি দিলে আন্দোলনকারীদের মাঝে আতংক ছডি়যে় পডে়। স্তব্ধ হযে় পডে় আন্দোলন।
আপাতত ধরে নেয়া যায় যে, দেশের চারটি স্থানে আন্দোলন শুরু হলেই তা ফলপ্রসু হবে। এ চারটি স্থান হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর জেলা সদর এবং নোয়াখালী। এ স্থান গুলোতে আমার জানামতে সবচেযে় বেশি রামগতি ও কমলনগরের লোক বসবাস করে থাকেন। কেউ চাকরি, কেউ পড়ালেখা আবার কেউ পেশা সূত্রে এসব স্থানে বসবাস করছেন। সুতরাং এ স্থান গুলোতে প্রাথমিক ভাবে আন্দোলন শুরু করা যেতে পারে নতুন করে। আমি প্রথমেই অনুরোধ করবো শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে এগিযে় আসার জন্য। তাদের উদ্যোগ নেয়ার জন্য। আপনারা এগিযে় এলেই শুরু হবে। আর্থিক দিকটা চাকুরীজীবীদের উপরে ছেডে় দিন। প্রযে়াজনে জোর করবেন আর্থিক ফান্ড গঠনের। সাধারনত চাকরীজীবীরা ব্যস্ত থাকেন বেশি। তাই তাদের পক্ষে এসব আন্দোলন সংগ্রাম অর্গানাইজ করা কঠিন। শিক্ষার্থীরা এ কাজটিই ভালো পারবেন বলে চূড়ান্ত ভাবে বিশ্বাস করি। আমার বিশ্বাস ছুটির দিন গুলোতে চাকরিজীবীরাও আপনাাদের সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিবে।
আন্দোলন যে অনেক বড় হতে হবে তা কিন্তু নয়। আজকাল হর হামেশাই দেখা যাচ্ছে সাত আটজনের একটি মানববন্দন হলে অগনিত মিডি়য়া এসে হাজির হয় প্রচারের জন্য। হুডে়াহুডি় লেগে যায় কার আগে কে প্রচার করবে। তাই মিডি়য়া কভারেজ পাওয়া যাবে অনেক বেশি। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং নোয়াখালীর শিক্ষার্থীদেরকে বলছি দুরে কোথাও সম্ভব না হলে অন্তত প্রেস ক্লাবের সামনে এসে হলেও একটা ব্যানার নিযে় দাডি়যে় যান সাত আটজন মিলে। এক দু’বার এভাবে করেন দেখবেন অনেকেই আপনাদের সাথে এসে যোগ দিবে। জেলা শহরে মানববন্দন, মিছিল, অনশন, স্মারকলিপি এ জাতীয় আযে়াজন লাগাতার করা যেতে পারে। প্রযে়াজন হলে সাপ্তাহে দু একটি হরতাল অবরোধ দেয়া যেতে পারে। আন্দোলনের ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে তা যেন দীর্ঘ স্থায়ী হয়। প্রযে়াজনে ছোট ছোট পরিসরে হোক এতে কোন সমস্যা নেই। সর্বপোরি খেয়াল রাখতে হবে আন্দোলনের কর্মসূচি যেন সহিংস না হয়।
অপেক্ষাকৃত ধনী গোষ্ঠিকে আপনারা আন্দোলন কিংবা নদী ভাঙ্গার এ বিষযে় কাছে পাবেন না বলে ধরে নিতে পারেন। কেননা তাদের চিন্তা চেতনা ঢাকা কিংবা শহর কেন্দ্রীক। রামগতি কমলনগর ভেঙ্গে গেলে তাদের কোন ভাবাবেগ ঘটবেনা। সুতরাং অতি আশাবাদী হবেন না। যা করার আমাদেরই করতে হবে। লড়তে হবে মেহনতি মানুষ গুলোকেই।
শক্তিশালী একটা উপদেষ্টা কমিটি গঠন করতে হবে। এতে যেন সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি থাকে সে দিকে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রতিনিধি বলতে আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, ছাত্র, সংগঠক, প্রবাসী ইত্যাদি শ্রেনীর প্রভাবশালী লোকদের কথা বলছি। আর এর জন্য যথা সম্ভব দলীয় পরিচয় এডি়যে় যেতে হবে।
রাজনীতিকে অবশ্যই দুরে রাখতে হবে। অনেকেই চাইবে এ আন্দোলন থেকে ফায়দা লুটতে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতে। এমনটি যেন না হয়। কোন ভাবেই যেন এ আন্দোলন কে কেউ নিজ স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে এর জন্য সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। নেতৃত্বকে গতিশীল রাখতে হবে এবং একে এক কেন্দ্রীক করে রাখা যাবেনা। প্রতিটি এলাকাতে সাব কমিটি করতে হবে। এবং এর একটি মূল কমিটি থাকবে। একেক দিন একেক এলাকায় আন্দোলনকে জোর দিতে হবে। তবেই মনে হবে সর্বত্রই আন্দোলন ছডি়যে় পড়ছে। পুরো রামগতি ও কমলনগর জেগে উঠেছে। যতো স্থানেই আন্দোলন হোক না কেন তার মাঝে একটা সমন্বয় থাকতে হবে। তবে মনে রাখবেন এক কেন্দ্রীক আন্দোলন কোন ভাবেই সফল হবেনা।
নোংরা রাজনীতির কারনে অনেকেই এ আন্দোলকে প্রত্যাখান করতে পারে। বিরোধীতা করতে পারে। বিশেষ একটা শ্রেনীতে এ আন্দোলনকে সীমাবদ্ধ রাখার সমূহ চেষ্টা করতে পারে। তবে এদের সংখ্যা নিতান্তই কম হবে। এক পক্ষ বোঝাতে চাইবে সরকারি দল সুবিধা নিতে এ আন্দোলন আবার অন্য পক্ষ বলবে বিরোধীদলের সুবিধা নিতে এ আন্দোলন। এসব নাকি কথায় কোন ভাবেই নাক গলানো যাবেনা। এটা সামান্য একটা বিষয় মাত্র। আমাদের লক্ষ্য যেহেতু বিশাল তাই এসব ছোট খাটো বিষযে় মাথা না ঘামালেই চলবে।
স্বভাবতই সকল রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা একই ছায়া তলে আসতে চাইবে না। হতে পারে আসবেনা। তবে এ তালিকা গুটি কযে়ক নেতা ছাড়া অন্য কেউ থাকবেন বলে মনে হয় না। বড় মাপের নেতারা একই মঞ্চে না এলেও হতাশ হওয়ার কিছু নাই। সংগ্রাম চালিযে় যেতে হবেই। একদিন না একদিন তারা আসবেন। আসতে হবেই।
সর্বশেষ বলতে চাই- রাজনীতিকে উর্ধ্বে রেখে আপন ভিটে মাটি মেঘনার করাল গ্রাস থেকে বাচাতে সকলকে এগিযে় আসতে হবে দল মত নির্বিশেষে। অন্তত নিজেদের বৃহত্তর স্বার্থে আন্দোলনটাকে একটি কাঠামোতে দাড় করানোর জন্য রামগতি কমলনগরের প্রতিটি নাগরিককেই এগিযে় আসা উচিত। কথা একটাই- রামগতি কমলনগর বাচলে আমরাও বাচবো।
বিষয়: বিবিধ
১০৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন