মক্তব শিক্ষা পদ্ধতির বিলুপ্তি ঠেকানো জরুরী

লিখেছেন লিখেছেন ঝরাপাতা ২৮ জুলাই, ২০১৩, ০৯:০৯:০৬ সকাল

ইংরেজ শাসনের পূর্বে এদেশে মুসলমানদের জন্য বলতে গেলে প্রাথমিক শিক্ষা হিসেবে মক্তবই ছিলো সার্বজনীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মক্তবকে কেন্দ্র করেই আবর্তীত হতো মুসলমানদের শিক্ষা ব্যবস্থা। মসজিদ কেন্দ্রিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মক্তব স্বীয় ঐতিহ্য ধরে রেখেছিলো বহুদিন। মুসলমানদের ইহকাল ও পরকালীন মুক্তির পথ দেখাতো এই মক্তব শিক্ষা। সাধারনত প্রতিটি মসজিদের সঙ্গে একটি করে মক্তব চালু থাকে। এর বাইরেও ব্যক্তি উদ্যোগে মক্তব প্রতিষ্ঠিত হযে়ছে যা ফোরকানিয়া মাদ্রাসা নামে পরিচিতি লাভ করে। মক্তব গুলোতে কোরআন শিক্ষা দেবার পাশাপাশি ইসলামী আদব কায়দা, মাসয়ালা-মাসাযে়ল শেখানো হযে় থাকে। এছাড়াও ইসলামী মূল্যবোধ গঠনে মুসলমানদেরকে যাবতীয় দ্বীনি শিক্ষা ও তালিম দেয়া হয় ব্যবহারিক ভাবে। মক্তবে সাধারনত চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী সহ্হী ভাবে কোরআন পাঠ শিখতে পারে।

মক্তব স্থানীয় ধর্ম প্রাণ মুসলমানদের আর্থিক ও মানসিক সহায়তায় মসজিদ কমিটি কর্তৃক পরিচালিত হয়। সম্পূর্ন বিনা বেতনে বা নাম মাত্র বেতনে দেশের সকল শ্রেণির অসংখ্য ছেলে মেযে় মক্তবে শিক্ষা লাভ করে। কোন প্রকার সরকারি সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া স্বীয় প্রতিষ্ঠিত স্বতন্ত্র দ্বীনি শিক্ষালয় হল এ মক্তব। মক্তবে পাঠদানের সময় ফজরের নামাজের পর থেকে সকাল ৭ টা বা ৮ টা পর্যন্ত। ফলে একজন শিক্ষার্থীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালযে় যেতে সমস্যা হয় না। এতে করে একজন শিক্ষার্থী এক সাথে দ্বীনি শিক্ষার পাশাপাশি স্কুল শিক্ষা কার্যক্রম চালিযে় যেতে পারে।

অনেকে হয়তো যুক্তি দেখাবেন মক্তবের চাহিদা তো নূরানী মাদ্রাসা ও কিন্ডার গার্টেন পূরন করছে । পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নূরানী মাদ্রাসা হয়তো মক্তবের অভাব পূরন করছে বটে কিন্তু প্রযে়াজনের তুলনায় এটি নিতান্তই অপ্রতুল। তাছাড়া নূরানী মাদ্রাসা ফুল টাইম শিক্ষা দানকারী প্রতিষ্ঠিান হওয়ায় অনেকে নূরানীতে পড়াতে আগ্রহী নন। আবার এমন এলাকাও রযে়ছে যার আশপাশের ৫/৬ গ্রামেও নূরানী মাদ্রাসা নেই। কোন এলাকায় নূরানী মাদ্রাসা থাকলেও নানাবিধ সীমাবদ্ধতার কারনে খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী এত অংশ নিতে পারে। অন্যদিকে কিন্ডার গার্টেনে আরবী তথা কোরআন শিক্ষার নামে যে সিলেবাস পড়ানো হয় তা নাম মাত্র বটে। ধনী দু’ একটি পরিবার প্রাইভেট মৌলভী রেখে মক্তবের কাজ চালিযে় নিলেও তা সকলে জন্য সম্ভব হয়না। শহরে আবার অনেকে বাডি়র ছাদের উপর খন্ডকালীন মৌলভী রেখে মক্তবের কাজ সরান। যাতে দরিদ্র শ্রেণির উপস্থিতি থাকে না। এর ফলে ধনী, গরীব, সহ বিভিন্ন শ্রেণির সিংহ ভাগ মানুষ দ্বীনি শিক্ষ থেকে বঞ্চিত হন।

বর্তমান সমযে় গ্রামাঞ্চলে দু’ একটি মসজিদে মক্তব থাকলেও শহরের বেলায় তা শূন্যের কোটায়। দেশে প্রতি বছর অসংখ্য নতুন নতুন মসজিদ স্থাপন হলেও সে হারে মক্তব বাডে় না। বরঞ্চ যে সব মসজিদে মক্তব চালু আছে সেগুলো বন্ধ হচ্ছে দিনকে দিন। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে দেশে মক্তবের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। থাকবেনা কোরআন শেখার এ সহজ সুযোগ।

আরো দুঃখের ব্যাপার হলো প্রচলিত শিক্ষাঙ্গনের সময় সূচি এগিযে় এনে ভোরে পাঠদান ব্যবস্থা চালুর ফলে বর্তমান মুসলিম প্রজন্মরা ইচ্ছে থাকলেও কোরআন শেখার জন্য মক্তবে যেতে পারেনা। ফলশ্রুতিতে এর বিরুপ প্রভাব একজন মুসলমান হিসেবে তাদের সারা জীবন বযে় বেড়াতে হয়। বর্তমানে বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালযে় অধ্যয়নরত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর দিকে তাকালে বিষয়টি খুবই স্পষ্ট। এদের প্রায় আশি শতাংশ শিক্ষার্থী কোরআন তেলওয়াত করবে জানে না। জানে না প্রযে়াজনীয় অনেক মাসয়ালা ও মাসাযে়ল।

কোরআন শিক্ষাসহ দ্বীনি আমল জানার জন্য প্রচলিত মক্তব শিক্ষা পদ্ধতি আজ বিলুপ্তির পথে। যথাযথ আধুনিকায়ন ও সরকারি আনূকুল্যের অভাব এবং মুসলমানদের প্রাশ্চ্যাত্য মানসিকতার বিরুপ প্রভাবসহ দেশী বিদেশী কটু চাল ও মুসলমানদের দ্বীনি শিক্ষার প্রতি চরম অবহেলার কারনে মক্তবের এহেন দুরবস্থা। অথচ এর স্থাপন ব্যয় ও রক্ষনাবেক্ষন সহজ হওয়া সত্ত্বেও এই বিলুপ্তি ঠেকানো যাচ্ছেনা। মুসলমানদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক ও দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য মক্তব শিক্ষা ব্যবস্থার পূনর্জাগরন অতি জরুরী। তবেই মুসলমান জাতি হিসেবে আমাদের ইহকাল ও পরকালীন মুক্তি মিলবে। বিলুপ্ত প্রায় এ শিক্ষা পদ্ধতিকে তার হারানো ঐতিহ্য ফিরিযে় দিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সহ বিভিন্ন ইসলামিক সংস্থা, সচেতন মুসলিম সমাজ ও সরকারের এগিযে় আসা আজ সমযে়র একান্ত দাবি।

বিষয়: বিবিধ

২৩২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File